পাকিস্তানের ‘জইশ-এ-মহম্মদ’ কতৃক পুলওয়ামা হত্যাকাণ্ডের পর সমগ্র বিশ্বের কাছে এটা কতটা আলোচ্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে এবং সারা ভারতবর্ষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঠিক কি পরিমাণ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে তা আমরা সকলেই জানি। 

ভারত সরকার’ও পাকিস্তানের এহেন আচরণের পর আর আপোষ বা আলোচনার মধ্যে না গিয়ে অন্যান্য দেশ’গুলির সহায়তা চেয়ে সন্ত্রাসবাদ মুছে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে চলেছে। 

 

ইতিমধ্যে পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পাকিস্তান’কে দেওয়া ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন'(এমএফএন) মর্যাদা তুলে নিয়েছে ভারত। এছারাও, পাকিস্তানের ওপর আমদানি শুল্ক ২০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 

 

পাকিস্তান’কে চাপে ফেলবার জন্য এবার আরও নতুন একটি পদক্ষেপ নিলো ভারত। গত বৃহস্পতিবার’ই কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ী ঘোষণা করেছিলেন যে পাকিস্তানে তিনটি নদীর জল প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুক্রবার সেটাই আরও স্পষ্ট করে গড়কড়ী জানালেন, তিন নদীর জল বন্ধ করে ভারতের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

 

আন্তর্জাতিক জল চুক্তি অর্থাৎ ‘সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি’ অনুযায়ী সিন্ধুর উপত্যকায় মোট টি নদীর মধ্যে তিনটি নদী ভারতের দিক থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। এই টি নদীর জলবণ্টন নিয়েই ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাক প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে চুক্তি হয়, সেটাই ‘সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি’। এই চুক্তি অনুযায়ী, পশ্চিমের তিন নদী সিন্ধু, ঝিলম এবং চন্দ্রভাগার জল ব্যবহারের অধিকার পাকিস্তানের।অন্য দিকে পূর্ব দিকের ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশা নদীর জল ব্যবহারের অধিকার ভারতের।

 

কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ী ঘোষণা করেন যে ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশার জল ভারতের ব্যবহারের পরেও যা অবশিষ্ট থাকবে, তা কোনও ভাবেই পাকিস্তানে প্রবাহিত হতে দেওয়া যাবে না। বাঁধ তৈরি করে জলের প্রবাহ ঘুরিয়ে পাঞ্জাব এবং রাজস্থানে যেখানে যেখানে জলের সঙ্কট, সেই এলাকায় ব্যবহার করা যায় কী ভাবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা শুরু হয়েছে এবং পরিকল্পনার রূপরেখা চূড়ান্ত হলেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জানানো হবে এবং সবুজ সঙ্কেত পেলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

 

কূটনৈতিক মহলের মতে, ‘সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি’ অনুযায়ী ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশা নদীর জল সম্পূর্ণ ব্যবহারের অধিকার পেয়েছে ভারত, সেখানে অন্য কোনও দেশের অধিকার নেই। সেই নদীতে বাঁধ দিলে বা জল আটকে অন্য দিকে প্রবাহিত করলেও চুক্তি লঙ্ঘন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই কারণেই তিন নদীর জল ভারত আটকে দিলে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষবাস এবং অন্যান্য অনেক ক্ষতি হলেও এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না ইসলামাবাদ

 

কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ী বললেন, “প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের পরিবেশ বজায় রাখতেই ১৯৬০ সালে নেহরু-আয়ুব এই সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান গোড়া থেকেই সন্ত্রাসে মদত দিয়ে আসছে। আর এখন সন্ত্রাসের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে, সেই সন্ত্রাস রফতানি করছে ভারতে। সেই কারণেই পাকিস্তানকে আর কোনও সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।”

Atanu Chakraborty is a content and news writer at BongDunia. He has completed his Bachelor Degree on Mass Communication from Rabindra Bharati University. He has worked with mainstream media, in the capacity of a reporter and copywriter.

Leave A Reply