বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার রানি রাসমনি রোডের মঞ্চে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবী জানালেন, ভারতে গন ভোট হোক, এবং তা রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে । আর কেবল মাত্র তখনই বোঝা যাবে, এই আইন কটা লোক মানছেন, আর ক’টা লোক মানছেন না ।
রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে ভারতে গনভোটের দাবী তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কিন্তু মমতার দাবী কতখানি যুক্তি সঙ্গত সে বিষয়ে আমেরিকার বিদেশ সচিব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন । মমতার নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গনভোটের দাবী নিয়ে, মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও গতকাল বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “নাগরিকত্ব আইনের বিষয়টি একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তা নিয়ে আমেরিকা কোনও নাক গলাবে না।”
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাস্তা্য নেমেছেন লাখে লাখে মানুষ । কিন্তু এই আইনের ফলে সাধারন মানুষের বা দেশের পক্ষে হিতকর হবে, না ক্ষতিকর সেটাই বোঝা মুস্কিল হয়ে দাঁড়িয়েছে । অন্যরা প্রতিবাদ করছে বলে বেশির ভাগ মানুষ রাস্তায় নামছেন । বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই লাগাতার আন্দলনের ডাক দিয়ে নিজেই রাস্তায় নেমেছেন । এই রাজ্যসহ সারা দেশের বহু মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন । কোথাও কোথাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে ।এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গতকালের মন্তব্য নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ।
বিশেষজ্ঞ মহলের কেউ কেউ মনে করছেন, ভারতবর্ষ একটি গণতন্ত্র। দলমত নির্বিশেষে দিল্লির সরকারের বরাবরের অবস্থান হল, ঘরোয়া বিষয়আশয় তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে মীমাংসায় সক্ষম ভারত। এ ব্যাপারে বাইরে থেকে কারও নাক গলানো বরদাস্ত করা উচিৎ কাজ হবে না । আবার কারো কারও ধারনা, অতীতে ভারতে কাশ্মীর নিয়েও এই ধরনের দাবী উঠেছিল । সেখানে, শেখ আবদুল্লাহই কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে গণভোটের দাবি জানিয়েছিলেন। এমন কি, সম্প্রতিকালে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পরেও রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিল পাকিস্তান।সেখানে পাক প্রধান মন্ত্রী ইমরান খান দাবী করেছিলেন, নাগরিকত্ব আইনের ফলেও কাশ্মীরের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে রাজনৈতিক মহলে । এ প্রসঙ্গে, বিজেপি মুখপাত্র অমিত মালব্য বলেন, “এ ধরনের কথা তো পাকিস্তান বলবে। ওঁর মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন নেত্রীর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকাই উচিত নয়”। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও বলেছেন, “আমাদের গণতন্ত্র যখন এতটা পরিণত হয়েছে, তখন এ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ দাবি করা ঐতিহাসিক ভুল। তা ছাড়া নাগরিকত্ব আইনটি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত তা খতিয়ে দেখছে। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এখনই তাঁর কথা প্রত্যাহার করে নেওয়া।”
অপর দিকে, বাংলার শাসকদল তৃণমূল চুপ করে বসে থাকেনি । যুব তৃণমূল সভাপতি অমিত মালব্যকে জবাব দিয়ে বলেছেন যে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলার সাত কোটি মানুষ রয়েছেন। এবং উনি পর পর দু’বার জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন”। তবে বক্তব্য নিয়ে এত জল ঘোলা হবে হয়ত বুঝতে পারেনি । যার কারনে, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে দলের সব নেতাকে বলে দেওয়া হয়েছে, গণভোটের ব্যাপারে কেউ যেন সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ না খোলেন এবং কোনও প্রতিক্রিয়া না দেন।