বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ গত ৩১শে আগস্ট মোহন ভাগবত বাংলায় এসেছিলেন । সর্ব স্তরের নেতাদের নিয়ে আর এস এস এর সমন্বয় বৈঠক হয়ে থাকে । আগের বার মোহন ভাগবত কেবল মাত্র বাংলায় এসেছিলেন সেই উদ্দেশ্যে । কিন্তু এবার আসছেন বাংলা এবং উড়িষ্যাকে সামনে রেখে । এই মাসের ২১ তারিখ তাঁর আসার কথা । এবার দুই রাজ্যের সঙ্ঘ পরিবারের সকল স্তরের রাজ্য নেতাদের নিয়ে তিনি বৈঠক করবেন । সুত্রের খবর, শুধু বৈঠকও নয়, উলুবেড়িয়ায় সঙ্ঘের স্কুলে দু’দিন ধরে চলবে প্রশিক্ষণ বর্গও। জানা গিয়েছে, এই কর্মসূচিতে মোট ৩৬টি সংগঠনের প্রধানরা ডাক পেয়েছেন। সকলেই দু’দিন তাঁতিবেড়িয়ার স্কুলে থাকবেন ।
মোহন ভাগবতের বার বার রাজ্যে আগমনে অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল । কারণ দেশের বেশিরভাগ রাজ্যেই এখন বিজেপি ক্ষমতায়। কিন্তু বাংলা এবং ওড়িশায় শক্তিবৃদ্ধি করলেও এই দুই রাজ্যে বিজেপি এখনও ক্ষমতা দখল করতে পারেনি । এই পরিস্থিতিতে মোহন ভাগবতের এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ।
এই বৈঠকে তিনটি বিষয় সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি করন, নাগরিক পঞ্জি এবং সীমান্তের সমস্যা । আসামের পর নাগরিক পঞ্জী নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, এবং সাধারন মানুষের মনে যে সংশয় কাজ করছে সেটি দূর করতে সঙ্ঘ সদস্যদের কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা হবে ।
এই বৈঠকে সরাসরি রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা না হলেও যে বিষয়ে দুই রাজ্যের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবেন, তাতে বিজেপির জায়গা আরও পোক্ত হবে বলে ধারনা । তাই আগামী ২১শে ও ২২শে সেপ্টেম্বর শাসক দল নজর রাখবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই ।
কি কারনে সঙ্ঘকে এত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে রাজনৈতিক দল গুলি সেটি জানতে হলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-এর ইতিহাস ঘাঁটলে পরিষ্কার হবে । রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ভারতের একটি দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী, আধাসামরিক ও বেসরকারী স্বেচ্ছা-সেবক সংগঠন । আরএসএস সংঘ পরিবার নামে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর একটি অংশ । ১৯২৫ সালে নাগপুর-বাসী ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রূপে আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেন।এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা ও মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধিতা করা ।
আরএসএস স্বেচ্ছাসেবকেরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে ভারতের একটি অগ্রণী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনে পরিণত হয়। ১৯৯০-এর দশকের মধ্যে এই সংগঠন অসংখ্য স্কুল, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও মতাদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে। আরএসএস স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজও করে থাকে। আরএসএস এক লক্ষেরও বেশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামোন্নয়ন, আদিবাসী উন্নয়ন, গ্রামীণ স্বনির্ভরতা, কৃষি কর্মসূচি পরিচালনা করে এবং কুষ্ঠ ও দুঃস্থ ছাত্রদের দেখাশোনা করে । কোনো কোনো সমালোচক আরএসএস-কে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন বলে থাকেন। ব্রিটিশ আমলে এই সংগঠন নিষিদ্ধ ছিল । স্বাধীন ভারতে ১৯৪৮ সালে নাথুরাম গডসে নামে এক প্রাক্তন আরএসএস-সদস্য মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করলে ভারত সরকার এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে দেয় । পরে ১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রমাণিত হয় নাথুরাম গডসে আর এস এস এর সদস্য ছিল না এবং তৎকালীন গৃহমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল সংঘের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন । জরুরি অবস্থার সময় ১৯৭৫-৭৮ এবং ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরও এই সংগঠন নিষিদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় ।