বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক: চলতি বছরের ৫ই আগস্ট ভারত সরকার কতৃক ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা দুটি বাতিল করার বিবৃতি ঘোষণার পর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীর দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়। এই সময় থেকেই অশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয় সীমান্তবর্তী কাশ্মীর উপত্যকায়।
ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে অখুশি হয়ে বিক্ষোভ আন্দোলনে নামেন উপত্যকার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাগণ। একারণে প্রশাসনের তরফ থেকে তাদেরকে নজরবন্দী করে রাখা হয়।
এছাড়াও, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে ব্যপক পরিমাণে ক্ষুব্ধ হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান। একারণে তারা জাতিসংঘের কাছে ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে নির্যাতন এবং আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছিলো, যদিও তাতে বিশেষ কিছু ফল হয়নি।
এই মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মীর এর পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনায় ভারত সরকারের কাছে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সরকারের এই শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়ায় বারে বারে বাঁধা সৃষ্টি করছে পাকিস্তান। ইতিমধ্যে ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখায় বেশ কয়েকবার গুলিবর্ষণ হয়ে গেছে দুই দেশের মধ্যে। এমনকি আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তান জানায় যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মুসলিম সমাজের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। একারণে বর্তমানে কাশ্মীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, বহির্জগতের সাথে তার কোনও যোগাযোগ নেই।
এমতাবস্থায় সম্প্রতি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করলে কাশ্মীরের গভর্নর সত্যপাল মালিক তাকে উক্তি করেন যে, রাহুল গান্ধী যেনো একবার এসে দেখে যান কাশ্মীর কেমন আছে।
সত্যপাল মালিক ভারতীয় জনতা পার্টি’র অন্তর্ভুক্ত। সেকারণে তাঁর এই উক্তি’কে সুবিধায় লাগান রাহুল গান্ধী। গত ২৪শে আগস্ট, শনিবার বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে রাহুল গান্ধী কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। কিন্তু শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে তাঁদেরকে দিল্লী ফেরত পাঠানো হয়। এরপর জম্মু-কাশ্মীর এর প্রশাসনের নিন্দা করে রাহুল গান্ধী জানালেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি মোটেই ভালো নেই।
রাহুল গান্ধীর এই ব্যবহারে অবাক হয়ে সম্প্রতি কাশ্মীরের গভর্নর সত্যপাল বলেন, “আমি যখন রাহুল গান্ধীকে জম্মু-কাশ্মির সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম তখন আমার উদ্দেশ্য ছিল তাকে ভিত্তিহীন বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখা।” এরপর রাহুল গান্ধী’কে করা আমন্ত্রণ ফিরিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, “আমার আমন্ত্রণ নিয়ে রাহুল গান্ধী যখন এমন রাজনৈতিক খেলা খেললেন তখন আমি আমার আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। রাহুল গান্ধীকে কাশ্মির সফর করতে দেওয়া হবে কি না তা প্রশাসনের বিশেষ ক্ষমতা। প্রশাসন আগেই পরিষ্কার করেছে যে যখন আমরা উপত্যকায় শান্তি বজায় রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তখন তা লঙ্ঘন করতে কোনও রাজনীতিবিদের আসা উচিত হবে না।”
কাশ্মীর ইস্যুতে রাহুল গান্ধী যেভাবে মোদী সরকারকে কটূক্তি করছেন, তার প্রেক্ষিতে সত্যপাল বললেন, “আমি রাহুল গান্ধীকে বলতে চাই যে ধরণের বক্তব্য তিনি দিচ্ছেন তা পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে। তার বুঝতে হবে জম্মু-কাশ্মিরের পরিস্থিতি ভঙ্গুর আর তার বক্তব্য জাতীয় স্বার্থ ক্ষুন্ন করতে পারে। আমি তাকে এই স্পর্শকাতর ইস্যুক সস্তা রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার না করে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”