বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ করোনা ভাইরাস পৃথিবীর ইতিহাসে এক নয়া আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে । একসাথে এত দেশ এভাবে কোন কালেই ভাইরাসের কবলে পড়েনি । প্রতি দিন শয়ে শয়ে মারা যাচ্ছে করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে । আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হাজারে হাজারে । সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে, এর মধ্যে কোন ষড়যন্ত্র নেই তো ! এরই মধ্যে এক দেশ অন্য দেশকে দোষারোপ করতে শুরু করেছে । দেখে নেওয়া যাক, কোন দেশ কাকে কাকে দোষারোপ করছে ।
এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে করোনা ভাইরাস আসলেই কি জীব জন্তুর শরীর থেকে মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়েছে ? না কি ইচ্ছা করেই কোন দেশ বা ব্যাক্তি এই সর্বনাশের কাজটি করেছে ? করোনা সংক্রমণ এবং মানুষের মৃত্যু যত বাড়ছে ততই পাল্লা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।
তবে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইরানের নাম উঠে আসছে সব চেয়ে বেশী । এসব দেশের সরকারিভাবে কিছু না বললেও সরকারের সাথে সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তির কথায় এবং মিডিয়ায় এগুলো স্থান পাচ্ছে।
দেখে নেওয়া যাক কে কাকে কিভাবে সন্দেহ করছে ?
প্রথমেই চীন এবং ইরানের নাম । চীন এবং ইরানের ভেতর থেকে সন্দেহের তীর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। বিশেষ করে চীনের ভেতর সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন হরদমসে লিখছে এবং শেয়ার করছে যে চীনকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্র জীবাণু অস্ত্র হিসাবে চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে গেছে। শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, একজন চীনা কূটনীতিক তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন, উহানে গত বছর অক্টোবর মাসে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে।
এমন কি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ঝাও লিজিয়িান টুইটারে মার্চের ১১ তারিখে মার্কিন একটি কংগ্রেস কমিটির সামনে সেদেশের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) প্রধান রবার্ট রেডফিল্ডের একটি শুনানির ভিডিও ক্লিপ পোষ্ট করেছেন। ঐ ফুটেজে মি রেডফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ইনফ্লুয়েঞ্জা-জনিত মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে বলছেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড-নাইন্টিনের কারণেই ঐ মৃত্যু। যদিও মি রেডফিল্ড বলেননি কখন ঐসব মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু চীনা ঐ কূটনীতিক টুইটারে ঐ ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে সাথে লিখেছেন, “সিডিসি ধরা পড়ে গেছে। কখন প্রথম রোগীটি যুক্তরাষ্ট্রে মারা গিয়েছিল? কত মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল? কোন কোন হাসপাতালে? হতে পারে যেসব মার্কিন সেনা উহানে ঐ ভাইরাস এনেছিল তারাই… স্বচ্ছ হোন। মানুষকে সত্য জানান। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাই।”
শুধু তাই নয়, চীনের ভেতর থেকে একাধিক বিজ্ঞানী বলেই চলেছেন করোনাভাইরাসের মহামারি চীনে শুরু হলেও, এই ভাইরাসের উৎপত্তি চীনে হয়নি। চীন ছাড়াও ইরানের অঙ্গুলিও আমেরিকার দিকে তাক করা । সেখানেও ব্যাপক মানুষের বিশ্বাস এই জীবাণু যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল হুসেইন সালামি সরাসারি বলেছেন, করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র। গত পাঁচই মার্চ জে. সালামি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে চীনে এবং পরে ইরানের বিরুদ্ধে “জীবাণু-অস্ত্রের সন্ত্রাসী হামলা” চালিয়েছে। এরপর ৬ই মার্চ ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য হেশমাতোল্লাহ ফাতালহাতপিশে মন্তব্য করেন, “ট্রাম্প এবং পম্পেও করোনা নিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন…এটা কোনো সাধারণ রোগ নয়, এটা ইরান এবং চীনের বিরুদ্ধে জীবাণু অস্ত্রের হামলা।”
করোনা নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান ?
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে রাশিয়ার ভেতর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও রাশিয়ার সরকারের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মিডিয়ায় চীন এবং ইরানের এসব অভিযোগ-তত্ত্ব প্রচার করা হচ্ছে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি গোপন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইইউ’এর একটি মনিটরিং দল মার্চের ১৬ তারিখ পর্যন্ত দুমাসের এক অনুসন্ধানে ৮০টি প্রমাণ পেয়েছে যে ক্রেমলিনের সাথে ঘনিষ্ঠ মিডিয়ায় করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ধরণের অপ্রচার চালানো হচ্ছে। শুধু আমেরিকা নয়, রাশিয়া বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ব্রিটেনকেও দায়ী করা হচ্ছে। সরকার সমর্থিত স্পুটনিক রেডিওতে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর বাজার খুলে দেওয়ার জন্য চীনকে বাধ্য করতে ব্রিটেন এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। তবে রুশ সরকার দাবি করেছে, এসব বক্তব্যের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
অন্য দিকে আমেরিকা করোনা ভাইরাস নিয়ে চীনকে সরাসরি দায়ী করেছে । আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বয়ং ঘুরে ফিরে বলেই চলেছেন, করোনা ভাইরাস চীনের কাজ, তারাই দায়ী। এমনকি ট্রাম্পের সমর্থক হিসাবে পরিচিত অনেক ব্যক্তিই খোলাখুলি বলছেন, করোনাভাইরাস চীনের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কংগ্রেসে নির্বাচনের প্রার্থী এবং রিপাবলিকান রাজনীতিক জোয়ান রাইট টুইট করেছেন, “উহান ল্যাবরেটরিতে এই করোনাভাইরাস তৈরি করা হয়েছে, এবং ঐ গবেষণায় চীনাদের সহায়তা করেছেন বিল গেটস।” পরে এই নিয়ে প্রবল সমালোচনা ওঠে । ফলে সমালোচনা শুরু হতেই তিনি ঐ টুইট ডিলিট করে দেন। তবে আমেরিকার কট্টর ডানপন্থী বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কোনো শেষ নেই।
একদেশ অন্য দেশকে যখন এমন দোষারোপে ব্যস্ত, থক তখনি একদল বিজ্ঞানী মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে একটি বিবৃতি দিয়েছেন যেখানে তারা বলেছেন, “জীবজন্তুর শরীর থেকেই এই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধুই ভয়,গুজব এবং ঘৃণা ছড়াবে যাতে এই সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যাহত হবে।”
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা