বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ গোটা বিশ্ব করোনা সংক্রমণের কারনে এক মারাত্মক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছে । অথচ শত চেষ্টা করেও বাগে আনা যাচ্ছে না এই মারন ভাইরাসকে । অনেক দেশই মাঝে মাঝে ঘোষণা দিচ্ছে তারা করোনা প্রতিষেধক আবিস্কারের দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন । মানব দেহে ট্রায়াল শুরুও হয়েছে । এক নজরে দেখে নেওয়া যাক করোনা গবেষণা কিম্বা করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) ভ্যাক্সিন আবিস্কারের কাজে কোন দেশ থিক কোন পজিশনে আছে !
ভারতঃ জন সংখ্যার বিচারে গোটা বিশ্বে চীনের পরেই ভারতের স্থান । এই মুহূর্তে ভারতে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে প্রবলভাবে । যদিও অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার হার ভারতে যথেষ্ট বেশি । বর্তমানে ভারতের দু’টো ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি হল ‘কোভ্যাক্সিন (Covaxin)।’ আইসিএমআর আর পুনের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ভায়রোলজির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই টিকা তৈরি করছে ভারত বায়োটেক।করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করছে দেশের সব চেয়ে বড়ো ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘জাইডাস ক্যাডিলাও’ (Zydus Cadila) । বর্তমানে ভারতে এটির প্রথম পর্বের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ভারত ১৫ ই আগস্টের মধ্যে বাজারে করোনা টিকা বের করার কথা ঘোষণা করলেও সেটা যে আদৌ সম্ভব নয় তা বলাই বাহুল্য।
ব্রিটেনঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু ব্রিটেনের করোনা গবেষণার দিকেই সবচেয়ে বেশি আশা করে বসে আছে । এখানেও ভারতের মত দু’টি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের ওপরে কাজ চলছে। এর মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি চ্যাডক্স ১ ভ্যাকসিনটি। এই মুহূর্তে সেটি তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। ফলে তাদের সাফল্যের পিছনে তাকিয়ে আছে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ । ব্রিটেনে করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিনের ট্রায়ালের ফলাফল দ্য ল্যানসেট জার্নালে (The Lancet Journal) প্রকাশ করা হয়েছিল ।
জানা গেছে, ব্রিটেনে, ১১০৭ জনের শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হয়। দেখা যায়, করোনাভাইরাস ঠেকাতে এই টিকা শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি ও টি সেল তৈরি করতে সক্ষম। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই টিকা ব্রিটেনের বাজারে চলে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই টিকা-গবেষণায় অংশীদার ভারতীয় সংস্থা তথা বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (Serum Institute of India)। সংস্থার কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, আগস্টে এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষানিরীক্ষা ভারতেও শুরু হয়ে যাবে। সব ঠিকঠাক চললে হয়তো নভেম্বরে ভারতের বাজারে এই টিকা চলে আসতে পারে।
অক্সফোর্ডের পাশাপাশি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজও একটি টিকা তৈরির কাজ করছে। বর্তমানে সেটি দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে।
আমেরিকাঃ ব্রিটেনের পরেই করোনা ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা মডার্না এই টিকার প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষার ফল আশাব্যঞ্জক বলে জানিয়েছে । এ বার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার পালা। জুলাই-এর শেষের দিকে কিম্বা আগস্ট মাসের প্রথম থেকে তৃতীয় পর্যায়ের এই ট্রায়াল শুরু করার জন্য আশাবাদী মডার্না। আমেরিকার ৮৭টি জায়গায় এই ট্রায়াল চলবে।
রাশিয়াঃ সম্প্রতি রাশিয়া দাবী করেছে তাদের করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন নিয়ে গবেষণা মোটামুটি শেষের পর্যায়ে । সে দেশের গবেষকরা দাবি করছেন আগস্টের মধ্যেই বাজারে চলে আসবে ‘বিশ্বের প্রথম করোনা-টিকা’। তাদের দাবী সেচনেভ বিশ্ববিদ্যালয় ও গামালেই ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর এপিডিমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি এক সঙ্গে এই টিকা তৈরি করেছে। এমনকি গামালেই ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর এপিডিমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি সেন্টারের প্রধান অ্যালেক্স্যান্ডার গিন্টসবার্গ, সে দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম টিএএসএসকে জানিয়েছেন যে তিনি আশা করেন ১২ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে এই টিকা, “নাগরিক সঞ্চালনে প্রবেশ করতে পারে।”
চীনঃ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জন সংখ্যার দেশ চীন । এই দেশটি থেকেই করোনা ভাইরাস বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে । অনেকেই সন্দেহ করেন চীন ইতিমধ্যে করোনার প্রতিষেধক অর্থাৎ ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেছে । তবে বাইরে যেটুকু খবর তাতে বর্তমানে চীনের গবেষকরা সব মিলিয়ে চারটে টিকা-ক্যান্ডিডেটের ওপরে কাজ হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে উহান ইন্সটিটিউট আর সিনোফার্মের কোভিড টিকা। অন্য দিকে সিনোভাক আর ভুটানটান ইন্সটিটিউটের কোভিড টিকা এই মুহূর্তে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে।অন্য দিকে ক্যানসিনো বায়োলজিক্যাল ইন্সটিটিউট আর বেজিং ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকের কোভিড টিকা সবার থেকে এগিয়ে রয়েছে। চিনের সেনাবাহিনীকে এই টিকা ব্যবহারে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বেজিংয়ের আরও একটি সংস্থা কোভিড টিকা তৈরি করছে যেটা দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় রয়েছে।
অন্যান্য দেশঃ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি কিছুটা এগিয়ে আছে করোনা ভ্যাক্সিন গবেষণায় । এই তিনটি দেশ খুব বেশী এগোতে না পারলেও নিজেদের মতো করে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির পথে হাঁটছে । কানাডা আর অস্ট্রেলিয়ার টিকা বর্তমানে প্রথম ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। জার্মানির টিকা রয়েছে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে।