বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ পাকিস্তানে হিন্দুধর্মীয় মন্দির যেখানে ভ্রমণ করতে পারলে হিন্দুধর্মীয় ব্যক্তিরা স্বর্গীয় সুখ অনুভব করেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। আমরা অনেকেই মনে করে পাকিস্তানে অন্যান্য ধর্মালম্বী কি আছে? পাকিস্তানের ৯৫ থেকে ৯৭ অংশ মুসলিম হলেও এখানে অন্যান্য ধর্মালম্বীদের বাস রয়েছে। আর তার মধ্যে হিন্দুও আছে। হিন্দু ধর্মের অনেক ঐত্যিকের ধারক ও বাহক এই পাকিস্তান। পাকিস্তানের কয়েকটি প্রদেশে হিন্দুধর্মীয় মন্দির রয়েছে। যা জানলে আপনি অবাক হবেন। আমরা আজকে আপনাদের জানানর চেষ্ঠা করব পাকিস্তানে হিন্দুধর্মীয় মন্দির।

পাকিস্তানে হিন্দুধর্মীয় মন্দির

প্রহ্লাদপুরী মন্দির: পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতানে প্রহ্লাদপুরী মন্দির নামে মুলতানে এটি অবস্থিত। বর্তমানে মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত। হিন্দুধর্মীয় কিংবদন্ত প্রহ্লাদের নামে এই মন্দিরটি। বলা হয় নৃসিংহ দেব হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করে প্রহ্লাদকে রক্ষা করেন। তিনি মুলতানের রাজা ছিলেন। মুলতানে মুসলিম আক্রমনের ফলে মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ১৯ শতকের দিকে একটি আদর্শ মন্দির ছিল। পরবর্তীতে এই মন্দিরের কাছে একটি মসিজিদ নির্মিত হয়। পাকিস্তানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হওয়ায় নৃসিংহ দেবের মূর্তি বাবা নারায়ণ দাস বাটরাকে ভারতে আনা হয়। এটা এখন হরিদ্বারের একটি মন্দিরে সংরক্ষিত করা হয়েছে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসিজিদ ধ্বংস করা হলে পাকিস্তানেও এই মন্দিরটি ধ্বংস করা হয়। অনেকের বিশ্বাস আছে হোলিকা দহন পালন শুরু হয় এখান থেকে।

পাকিস্তানে হিন্দুধর্মীয় মন্দির

কালীবাড়ি মন্দির: পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের প্রশোয়ারে অবস্থিত এই হিন্দু মন্দির। মন্দিরটি দেবী কালীর মন্দির হিসাবে পরিচিত। তবে দুর্গাপূজাকে প্রধান উৎসব ধরা হয়। পেশাওয়ারের অল্প কয়েকটি মন্দিরের অন্যতম। কালীবাড়ি মন্দির ও দরগাহ্‌ পির রতননাথজি মন্দিরেই প্রতিদিন পূজা হয়ে থাকে। মন্দিরটি দীপাবলি উপলক্ষে খোলা হয়।

পাকিস্তানে হিন্দুধর্মীয় মন্দির

শ্রী বরুণ দেব মন্দির: পাকিস্তানের হিন্দু মন্দির এর অন্যতম। সিন্ধু প্রদেশের করাচি শহরের মনোরা দ্বীপের সমুদ্র সৈকতের নিকটে অবস্থিত। মন্দিরটি হিন্দুধর্মের জলের প্রতিনিধিত্বকারী দেবতা বরুণকে উৎসর্গকৃত। মন্দিরের গায়ের শিলালিপিতে দেখা যায় মন্দিরটি অন্তত ১০০০ বছরের প্রাচীন। জানা যায় তুর্কি আর মোগলদের হাতে এ মন্দিরটি ধ্বংস হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে এক ধনি হিন্দু নাবিক ভোজমল ন্যান্সি ভাটিয়া কালাতের খান সর্দারের নিকট থেকে সমগ্র মনোরা দ্বীপটি ক্রয় করে বরুণদেবের এই সুপ্রাচীন মন্দিরটি পুনঃরসংস্কার করেন। কালাতের খান সেই সময়ে উপকূল বরাবর বেশিরভাগ জমির মালিক ছিলেন ও তার পরিবার মন্দিরটির দখল নেয়।

লব মন্দির: পাকিস্তানে হিন্দুধর্মীয় মন্দির-এর মধ্যে অন্যতম লাহোরে অবস্থিত লাহোর দুর্গে এই হিন্দু মন্দিরটি অবস্থিত। জানা যায় রামের পুত্র লবের নামে মন্দিরটি। কিংবদন্তি অনুযায়ী লাহোর শহরটির লবপুরী। জানা যায় রাম ও সীতার পুত্র রাজকুমার লব এই শহর প্রতিষ্ঠা করেন। তার দাদা কুশ কসুর শহর প্রতিষ্ঠা করেন। ৪০০০ বছরের পুরাতন এ শহরটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান বাণিজ্য শহর হিসাবে পরিচিত। যার কারণে অসংখ্যবার লুন্ঠন হয়েছে।

জগন্নাথ মন্দির: পাকিস্তানের শিয়াল: পাকিস্তানের শিয়ালকোট শহরে অবস্থিত জগন্নাথ দেবের একটি মন্দির আছে ।

পাকিস্তানে হিন্দুধর্মীয় মন্দির

কলাত কালী মন্দির: পাকিস্তানের বালুচিস্তানের কলাত শহরে কালী মন্দিরটি অবস্থিত। কলাত শহরের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ হিন্দু। জানা যায় স্থানীয় বালোচদের কিংবদন্তি নায়ক সেওয়া কলাত শহর প্রতিষ্ঠা করেন তারই নামানুসারে নামকরণ করা হয়।

হিংলাজ: পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের মাকরান মরুভূতিতে হিন্দু ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিংলাজ। বিখ্যাত হিংলাজ মাতার মন্দির রয়েছে। বালুচিস্তানের লাসবেলায় মাকরান উপকূলের কাছে গিরিখাতে থাকা হিংলাজে সতীর সিঁদুর বা হিংগুল মাখা মাথা পড়েছিল বলে কথিত আছে। মন্দিরটি স্থানীয় বালুচ মুসলমাদের কাছে মন্দিরটি শ্রদ্ধার। হিংলাজ মন্দিরটি একটি গুহার ভিতরে অবস্থিত। এ গুহাটি প্রাকৃতিক গ্যাসে ভরা। যার অগ্নিজ্যোতিকে হিংলাজদেবীর রুপ বলে মানা হয়। হিংলাজ দেবীকে দেখতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিমল রায়ের নির্দেশনায় মরুতীর্থ হিংলাজ সিনেমা তৈরী করা হয়।

শাওয়ালা তেজা সিং মন্দির, শিয়ালকোট: ঐতিহাসিক তত্ত্ব মোতাবেক শিয়ালেকাটের শাওয়ালা তেজা সিং মন্দিরের বয়স ১ হাজারের বেশি। লাহোর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মন্দির। দেশবিভাগের পর ৭২ বছর মন্দিরটি বন্ধ ছিল। এই এলাকায় ২ হাজার হিন্দুধর্মাবলিম্বর বসবাস।

পাকিস্তানে হিন্দুধর্মীয় মন্দির

সারদা পীঠ: সারদা পীঠ সতীর অন্যতম পীঠ হিসাবে পরিচিত। ষষ্ঠ ও বার শতাব্দীর মাঝামাঝি সারদা পীঠ ভাতরীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ধর্মীমতে এখানে দেবীর কান বা দক্ষিণ হস্ত পরে। ২০০৫ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটি ক্ষতি হয়।

পাকিস্তানে হিন্দুধর্মীয় মন্দির

কাটাস রাজ মন্দির: পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মীয় মন্দির-এর মধ্যে অন্যতম কাটাস রাজ মন্দির পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের চাকওয়াল জেলায় অবস্থিত। এ মন্দির টি মহাভারত যুগের । এটি একটি শিব মন্দির । মহাভারতের পাণ্ডবেরা তাঁদের পলাতক জীবনের কিছু কাল এখানে অতি বাহিত করেছিলেন। এখান থেকে সব হিন্দু চলে যাওয়াতে বর্তমানে এ মন্দিরটি পরিত্যাক্ত। এটি ওয়ার্ল্ড হেরিতেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত। এখনে কিছু বৌদ্ধ মন্দির এবং অদুরে আরও কয়েক্তি হিন্দু মন্দির আছে। এখানে আল বিরুনি এসেছিলেন এবং সংস্কৃত ভাষা শিখেছিলেন। মন্দিরের সাথে সরোবর আছে এবং এ সরোবরের জল কে অতি পবিত্র মনে করা হয়।

মারি সিন্ধু মন্দির: ৭ম শতাব্দীর প্রাচীন ভাস্কোর নগরের ধ্বংসাবশেষ, খৃষ্টীয় ১৪শ শতাব্দীতে নিৰ্ম্মিত মারি-মন্দির, ১৫শ শতাব্দীর কালানকোট এবং ঐ স্থানেই অবস্থিত, তৎপূর্ববর্তী প্রাচীন দুর্গ প্রভৃতি প্রধান। কিন্তু ঠট্টার নিকটবর্তী মাকলিপৰ্ব্বতস্থ প্রাচীন গোরস্থান সৰ্ব্বাপেক্ষ কৌতুহল ও বিস্ময়জনক ।

Mr. Shuva is a News and Content Writer at BongDunia. He has worked with various news agencies all over the world and currently, he is having an important role in our content writing team.

Leave A Reply