বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ পাকিস্তানে বেশ কিছু হিন্দু মন্দির আছে যার মধ্যে অন্যতম হিংলাজ মাতার মন্দির । সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হল, এই মন্দিরে দেবীর পূজার্চনা করেন প্রধানত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ । আসুন একবার জেনে নেওয়া যাক পাকিস্তানের হিন্দু মন্দির “হিংলাজ মন্দির” সম্পর্কে কিছু তথ্য । সুদূর পাকিস্তানের বালুচিস্তানে অবস্থিত হিংলাজ মাতার মন্দির কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি চরম জাগ্রত একটি মন্দির। হিন্দু ধর্মে একান্নটি শক্তিপীঠের অন্যতম হল এই হিংলাজ মাতার মন্দির। দেশ কালের সীমানা পেরিয়ে, কাশের বন, শিউলির গন্ধ যেখানে পৌঁছায় না এমনই এক শুষ্ক মরু অঞ্চলে পূজিত হন সতীর এই রূপ । এই হিংলাজ মাতাকেই মুসলিমরা চেনেন ‘নানি কি হজ’  (Nani ki haj) নামে।

pakistaner hindu mandir (পাকিস্তানের হিন্দু মন্দির) 

হিংলাজ পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের মাকরান মরুভূমিতে অবস্থিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান । হিন্দুদের ৫১ শক্তিপীঠের এক পীঠ এই তীর্থ স্থান । এখানে বিখ্যাত হিংলাজ মাতার মন্দির রয়েছে৷ মন্দিরের নামেই গ্রামটির নাম হিংলাজ ৷ বাংলা, হিন্দী, অসমীয়া ও সিন্ধি ভাষায় দেবীর নাম হিংলাজ হলেও মূল সংস্কৃত শব্দটি হল “হিঙ্গুলা”৷ এটিকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিষের ঔষধ বা অ্যান্টিভেনাম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থান মাহাত্ম্যঃ 

বালুচিস্তানের লাসবেলায় মাকরান উপকূলের কাছে গিরিখাতে থাকা হিংলাজে সতীর সিঁদুর বা হিংগুল মাখা মাথা পড়েছিল বলে কথিত আছে। তাই হিন্দুদের কাছে হিংলাজ পীঠ খুবই পবিত্র । ভারতীয় উপমহাদেশে সিন্ধু প্রদেশ, বঙ্গদেশ ও আসামেই মূলত শাক্তদের বসবাস৷ তবে হিংলাজের তীর্থযাত্রীরা আসেন সারা ভারত থেকে৷ তীর্থযাত্রীরা সেকালে যেতেন উটের পিঠে চড়ে৷ যাত্রা শুরু হত করাচী শহরের কাছে হাব নদীর ধারে৷ সঙ্গে থাকত এক মাসের রসদ, যেমন শুকনো খাবার, মরুদস্যুদের প্রতিরোধ করার জন্য অস্ত্র, পানীয় জল ইত্যাদি৷ এছাড়া সঙ্গে থাকত হিংলাজ মাতার প্রসাদের জন্য শুকনো নারকেল, মিছরি, বাতাসা ইত্যাদি৷ এক মাসের অত্যন্ত কঠোর যাত্রার পর শ্রান্ত তীর্থযাত্রীরা পৌঁছতেন হিংলাজে৷ অঘোর নদীতে স্নান সেরে তাঁরা দর্শন করতে যেতেন হিংলাজ মাতাকে৷

এই মন্দির স্থানীয় বালুচ মুসলমানদের কাছেও পরম আদরণীয়৷ তাদের কাছে এটি “নানী কী হজ” নামে পরিচিত৷ হিংলাজ মাতার ভৈরব ভীমলোচন হলেন কোটেশ্বর মহাদেব, গুজরাতের কচ্ছ জেলার পশ্চিম প্রান্তে যাঁর মন্দির। বাঙালী ঔপন্যাসিক কালিকানন্দ অবধূত-  (কালিকানন্দ অবধূত ১৯১০ সালের ১৩ই এপ্রিল জন্ম গ্রহণ করেন । তিনি  ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক ও তন্ত্রসাধক। তার প্রকৃতনাম দুলালচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ।  জন্ম কলকাতার ভবানীপুরে। পুত্র অমল মুখোপাধ্যায়ের জন্মের পর প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যু হলে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে সন্ন্যাস (অবধূত) গ্রহণ করেন। সন্ন্যাসজীবনে তার নাম হয় কালিকানন্দ অবধূত। সন্ন্যাসজীবনে তার ভৈরবী স্ত্রীও ছিল। হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় স্বপ্রতিষ্ঠিত রুদ্রচণ্ডী মঠে তার মৃত্যু হয় ।অবধূত ছদ্মনামে তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন । ১৯৫৪ সালে “মরুতীর্থ হিংলাজ” নামক উপন্যাস রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। এই উপন্যাসটি অবলম্বনে একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়, যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন বিকাশ রায় ও উত্তমকুমার। তার অপর বিখ্যাত গ্রন্থ উদ্ধারণপুরের ঘাট । তাঁর রচিত মরুতীর্থ হিংলাজ এবং হিংলাজের পরে উপন্যাস-দুটিতে হিংলাজ ও কোটেশ্বর তীর্থদ্বয়ের বিস্তৃত ও অনুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে।)

হিংলাজের মন্দিরটি একটি গুহার মধ্যে অবস্থিত৷ এটি আসলে একটি প্রাকৃতিক গ্যাসের অগ্নিকুণ্ড৷ অগ্নিজ্যোতিকেই হিংলাজদেবীর রূপ বলে মানা হয়৷ বর্তমানে এখানে খুব কম পর্যটক আসেন৷ এখানে হিঙ্গোল ন্যাশনাল পার্ক বলে একটি অভয়ারণ্য রয়েছে৷ সেখানে কুমীর সংরক্ষণ করা হয়।

pakistaner hindu mandir (পাকিস্তানের হিন্দু মন্দির) 

হিংলাজ মাতার উদ্দেশ্যে গীত দুটি সংস্কৃত মন্ত্র:

ওম্ হিঙ্গুলে পরমহিঙ্গুলে অমৃতরূপিণি তনুশক্তি

মনঃ শিবে শ্রী হিঙ্গুলায় নমঃ স্বাহা

অনুবাদ: যে হিঙ্গুলা দেবী অমৃতস্বরূপিণী এবং অসীম শক্তির অধিকারিণী, যিনি শিব ও সুন্দরে সত্যরূপের প্রতিভূ, তাঁকে নমস্কার জানাই এবং তাঁর কাছে নিজেকে অর্ঘ্যরূপে সমর্পণ করি।

ব্রহ্মরন্ধ্রং হিঙ্গুলায়াং ভৈরবো ভীমলোচনঃ।

কোট্টরী সা মহামায়া ত্রিগুণা যা দিগম্বরী।।

অনুবাদ: মহামায়া, যিনি ত্রিগুণাত্মিকা এবং দিগম্বরী, যাঁর ভৈরব ভীমলোচন এবং যাঁর ব্রহ্মরন্ধ্র হিঙ্গুলাদেশে পতিত হয়েছিল, তিনিই এই গুহার অধিষ্ঠাত্রী দেবী কোট্টরী।

কিন্তু এই সতীপীঠ বর্তমানে পাক সেনাদের কবলে পড়ে চরম শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে বলা জানা গিয়েছে। আর সেই বিষয়টাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কামাখ্যার মানুষদের জানিয়েছেন স্বাধীন বালুচিস্তান আন্দোলনের সভাপতি হিরবায়ার মারি। তাঁর দাবি তাঁরা মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলেও পাক সেনার কবলে পড়ে মন্দিরের হাল বেহাল । এমনকী কোনও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর এই মন্তব্যের পর প্যাট্রিয়টিক পিপলস ফ্রন্ট অসম (পিপিএফএ)-এর দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদী এই মুহূর্তে হিংলাজ দেবীর মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাকিস্তানকে বাধ্য করুন । পাশাপাশি ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য হিংলাজ যাত্রার রাস্তা খুলে দেওয়ার জন্য কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু করতে হবে বলেও দাবি তাদের।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.