বাগেরহাট বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিনে অবস্থিত একটি উপকূলীয় জেলা। বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষে সুন্দরবনের পাশ থেকে গড়ে উঠা একটি জেলা। বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে আড়াইশ মৎস্য ঘের ও বেশকিছু ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বৃষ্টির ফলে বাধ্য হয়ে ঘরের বাইরে যাচ্ছে না মানুষ।দিন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষেরা কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে পারছে না। শুক্রবার (১৬ আগষ্ট) দিবাগত গভীর রাত থেকে শনিবার (১৭ আগষ্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত একটানা ৬ঘন্টার বিরামহীন বর্ষনে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলায় গড় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে ৩টি পৌরসভা ও ৯টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বাগেরহাট পৌরসভার খারদ্বার, বাসাবাটি, হাড়িখালী, নাগের বাজারসহ বেশ কয়েকটি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া পৌরসভার সামনের সড়ক, শালতলা মোড়, মিঠাপুকুর পাড়ের সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছ। শুধু বাগেরহাট পৌরসভা নয় মোরেলগঞ্জ ও মোংলা পৌরসভায়ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাথে সাথে বাগেরহাট সদর, মোংলা, রামপাল, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার বেশকিছু রাস্তাঘাট, মৎস্য ঘের ও সবজির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুপুরে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা আরও চিন্তিত হয়ে পড়ছে।মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে জেলার প্রায় আড়াশ মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বৃদ্ধি পেতে পারে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মুশফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় হাটু পানির কারনে আমাদের এলাকার জনসাধারনের চলাচলে খুব সমস্যা হচ্ছে। বাড়ী-ঘরে পানি উঠে গেছে। এক প্রকার পানি বন্দি হয়ে পড়েছি।
কাড়াপাড়া এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমার ঘেরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ঘের ভেসে গেছে। এতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের দুলাল মন্ডল বলেন, টান বর্ষণে বরাজের পানের গোড়ায় পানি জমেছে। বিকেলের মধ্যে পানি না নামলে বেশিরভাগ পানই মরে যাবে। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
সবজি চাষী রুহুল মল্লিক বলেন, টানা বর্ষণে বেগুন, পুইশাকসহ বেশ কিছু সবজির গোড়া পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে এখনই বৃষ্টি থেকে গেলে ক্ষতি কিচুটা পোষানো যাবে।
বাগেরহাট পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাশেম শিপন বলেন, ঘুম থেকে উঠেই ড্রেনের পানি নিস্কাশনের জন্য নিজেই কাজ শুরু করি। পৌরসভার পক্ষ থেকেও অনেক কর্মী এ কাজে নিয়োজিত ছিল। আশা করি বৃষ্টি কমলে দ্রুত পানির ভোগান্তি থেকে মুক্ত পাবে মানুষ।
বাগেরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র তালুকদার আব্দুল বাকী বলেন, পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরাশনে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য জরিপ শুরু করা হয়েচে। আশা করছি এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আগামীতে পৌরবাসি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।
বাগেরহাট সদর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, দুই থেকে আড়াইশ ঘের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এ বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সহস্রারাধিক মৎস্য ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। আমরা মৎস্য চাষীদের নেট দিয়ে নিজ নিজ ঘের নিরাপদ রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাগেরহাটে বছরের সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে কিছু পানের বরাজ ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কমে যাবে।