যেই প্রধানমন্ত্রী হোক না কেন, পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা তেমন একটা থাকে না । কারণ পাকিস্তানের প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকে পুরোপুরি সেনাবাহিনীর হাতে । সুতরাং কলের পুতুল ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের । এরকম পরিস্থিতিতে ইমরান খান বিদেশ সফর হিসেবে সুদূর মার্কিন মুলুকে আছেন । কার্যত বিপাকে পড়ে তিনি পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিলেন, পাকিস্থানে এখনো প্রায় 30 থেকে 40 হাজার জঙ্গি রয়েছে ।
মঙ্গলবার নিজেও স্বীকার করে নিলেন, পাকিস্তানের জঙ্গি কার্যকলাপের কথা । ওয়াশিংটনে বসে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজের মুখেই স্বীকার করে নিলেন। গত 15 বছর ধরে পাকিস্থানে সক্রিয় রয়েছে প্রায় 40 টি জঙ্গি সংগঠন । তার আগে সরকারগুলো মার্কিন দের কাছে সেই সব তথ্য পুরোপুরি গোপন করেছে । ইমরান খানের কথায়, “প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের তেমন কিছু করার ছিল না । কারণ পরিস্থিতি পুরোটাই পাক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল । ইমরান খান আরো বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকা যে যুদ্ধের ডাক দিয়েছিল তাতে অংশ নিয়েছিল পাকিস্তান । তবে 9/11-র ঘটনায় পাকিস্তানের কোন যোগ ছিল না । কারণ, সে সময় পাকিস্তান নিজেদের দেশের ভিতরেই জঙ্গিদের থেকে নিজেদের অস্তিত্বের লড়াই চালাচ্ছিল ।”
ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটাল হলে বক্তৃতার সময় ইমরান খান বলেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ হাত মিলিয়েছিল পাকিস্তান । 9/11-র সঙ্গে পাকিস্তানের কোন যোগসুত্র ছিল না । আল কায়েদা আফগানিস্থানে ছিল । পাকিস্তানে তালেবান জঙ্গি ছিল না । কিন্তু আমরা মার্কিন যুদ্ধ যোগ দেই । এদিকে দুর্ভাগ্যবশত যখন পরিস্থিতি উল্টো দিকে ঘুরে যায়, তখন সরকারের দোষ যে আমরা আমেরিকাকে আসল সত্যিটা বলিনি । আমার আগের সরকার আসল পরিস্থিতির কথা গোপন করে গিয়েছে ।পাকিস্তানের মাটিতে চল্লিশটি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন সেই সময় সক্রিয় ছিল । এমন একটা সময় এর মধ্য দিয়ে তখন পাকিস্তান যাচ্ছিল যে, আমরা নিজেরা বেঁচে থাকবো কিনা তা নিয়েই উদ্বিগ্ন ছিলাম । যার পরিপেক্ষিতে আফগানিস্তানের যুদ্ধ জয়ের জন্য যে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কাছ থেকে আরো বেশি সহযোগিতা আশা করছিল, তখন পাকিস্তান নিজেই নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়ছিল ।”
পূর্বসূরিরা যে ভুল করে গিয়েছে, সে ভুল আর করতে চান না বলে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন ইমরান খান । তার দাবি পাকিস্তান সরকার জোর কদমে চেষ্টা চালাচ্ছে সন্ত্রাস দমনে । তালিবানদের সাথে আলোচনার টেবিলে বসা গেছে । তাতে সাড়াও মিলছে ভালো । তবে বিষয়টা খুব সহজেই মিটবে বলে মনে করছেন না ইমরান খান । শান্তি ফিরিয়ে আনতে যা যা করা প্রয়োজন তাই করবেন । শুধু তাই নয় এ বিষয়ে কিভাবে তারা এগোচ্ছে, গোটা প্রক্রিয়াটাই আমেরিকাকে জানাবে পাকিস্তান । এমনই অঙ্গীকার করলেন ইমরান খান ।
মার্কিন মসনদে ডোনাল্ড ট্রাম্প বসার পর থেকেই সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তান অনেকটাই ব্যাকফুটে । জিহাদিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে সামরিক খাতে ইসলামাবাদের বরাদ্দ আটকে দিয়েছে ওয়াশিংটন । তারই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আমেরিকা পাড়ি দিয়েছেন ইমরান । কিন্তু কপাল মন্দ । মার্কিন মুলুকে আশানুরূপ অভ্যর্থনা জোটে নি কপালে । যদিও পাকিস্তানের কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে কিছুটা মলম লাগিয়ে ভূস্বর্গ নিয়ে বহু দিনের বিবাদে মধ্যস্থতা করার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প । তবে ভারতের কড়া প্রতিবাদের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন মার্কিন প্রশাসন ।
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে ফের অথৈ জলে পাকিস্তান । কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সামরিক খাতে মার্কিন বরাদ্দ না মেলায় প্রবল আর্থিক সংকটে পড়েছে পাক সেনাবাহিনী । মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রাম্পের কাছে আর চিড়ে ভিজবে না, সেটা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে আই এস আই । ফলে আবার আমেরিকার সুনজরে আসার চেষ্টায় ইমরান খানকে দুত বানিয়ে মার্কিন মুলুকে পাঠিয়েছে । তবে সন্ত্রাসবাদী এবং সন্ত্রাসবাদি সংগঠনের উপস্থিতি নিয়ে ইমরান খানের সহজ সরল স্বীকারোক্তি এবং মন্তব্য কতটা সত্য, স্বতঃস্ফূর্ত তা আগামী দিনে সময় বলবে ।