দ্বিতীয় শতকে সিসিলি প্রদেশে সাইরাকিউস নামে এক রাজ্য ছিলো। সিসিলি হল ভূমধ্যসাগরের সর্ববৃহৎ দ্বীপ। এটি পার্শ্ববর্তী ছোট ছোট দ্বীপসমূহ নিয়ে ইতালির একটি সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যা সিসিলিয়ান অঞ্চল নামে পরিচিত।সিসিলি ইতালীয় উপদ্বীপের দক্ষিণে, ভূমধ্যসাগরের মাঝ বরাবর অবস্থিত, যা মূল ভূখণ্ড থেকে মেসিনার সংকীর্ণ স্ট্রেইট দ্বারা পৃথক হয়েছে। এর অধিকাংশ ভূমি মাউন্ট এটনের, যা ইউরোপের সবচেয়ে উচুঁ ও সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। পৃথিবীর সর্বাধিক সক্রিয় আগ্নেয়গিরির একটি, বর্তমানে যার উচ্চতা হল ১০,২৯২ ফুট (৩,৩২৯ মিটার)। এ দ্বীপটিতে ভূমধ্যসাগরীয় আবহাওয়া ও জলবায়ু বিরাজমান। সিসিলির রয়েছে উন্নত ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষকরে স্থাপত্য, সঙ্গীত, সাহিত্য, রন্ধন বিষয়ে।
সিসিলে রাজ্যের রাজা ছিলেন হায়রো। রাজা হায়রো খবর পেলেন রোমানরা তার রাজ্য আক্রমন করার জন্য সমুদ্রপথ থেকে আসছে। রাজার ছিল না অস্ত্রবল, সৈন্য। তিনি হতাশ হয়ে পড়লেন বুঝতে পারছেন কি ভাবে দেশ, দেশবাসীকে বাঁচাবেন। অস্থির রাজার মনে পড়ল তার বন্ধুর কথা। রাজার বন্ধু সে যুগের প্রখ্যাত গণিতবিদ, বিজ্ঞানী ও পন্ডিত আর্কিমিডিস। আর্কিমিডিস বন্ধু রাজার ডাকে চলে এলেন রাজদরবারে।
আর্কিমিডিস আনুমানিক ২৮৭ খৃস্টপূর্বাব্দে তৎকালীন বৃহত্তর গ্রিসের উপনিবেশ সিসিলি দ্বীপের সিরাকিউজ নামের বন্দর নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। আর্কিমিডিস এর বাবা ছিলেন ফিডিয়ান। আর্কিমিডিস মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় পড়াশুনা করেছিলেন।
রাজার কথায় আর্কিমিডিস শুরু করলেন গবেষণা। অক্লান্ত পরিশ্রম করে আবিষ্কার করলেন এক যুগান্তকারী মারণাস্ত্র। আর্কিমিডিস নাম দিলেন আতস কাচ। সমুদ্রের পাশে অন্ধচন্দ্রকারে সাজিয়ে সূর্যর রশ্নিকে প্রতিফলিত করে রোমানদের যুদ্ধ জাহাজের পালে আগুন ধরিয়ে দেশ ও দেশবাসীকে বাচালেন।
রোমানরা পরবর্তীকালে স্থলপথে আক্রমন দুই বছর ধরে অবরোধের পর সিরাকিউজ শহর দখল করে। সিরাকিউজ শহর দখল করার পর রোমান সেনাপতি আর্কিমিডিসকে জীবিত ধরে নিয়ে যাওয়ার সৈন্যদের নির্দেশ প্রদান করেন। সিরাকিউজ শহর পতনের সময় আর্কিমিডিস একটি গাণিতিক চিত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আর্কিমিডিস তাঁর কাজ শেষ না করে যেতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত সৈনিক তার তলোয়ার দিয়ে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করে। আর্কিমিডিসের মৃত্যুসংবাদ রোমান সেনাপতি ক্ষুব্ধ হন।
আর্কিমিডিস এর সূর্যরশ্নি নিয়ে ১৯৭৩ সালে গ্রিক বিজ্ঞানী ইওয়ান্নিস সাক্কাস পরীক্ষা চালান। পরীক্ষায় তিনি সত্তরটি আয়না ব্যবহার করেন। প্রতিটি আয়নার আকার ছিল পাঁচ ফুট বনাম তিন ফুট এবং এগুলো তামা দ্বারা পালিশ করা ছিল। আয়নাগুলো একশো ষাট ফুট দূরবর্তী একটি প্লাইউড নির্মিত জাহাজের দিকে তাক করা ছিল। আয়নাগুলো ঠিকমত ফোকাস করার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। মার্সেলাস আর্কিমিডিসকে আখ্যায়িত করেছেন ‘জ্যামিতির ব্রিয়ারিউস’ নামে।
দেশ ও জাতীকে বাঁচানর অঙ্গীকার নিয়ে আর্কিমিডিস আবিষ্কার করেন আতশ কাচ। গ্যালিলিও এই আতশকাচ লম্বাচোঙ্গামত একটি নলের দুই মাথায় আতস কাচ বসিয়ে দূরের জ্যোতিস্ক পর্যবেক্ষণ করে মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিলেন। বিপদে আগুন জ্বালাতে আতশ কাচ। গোয়েন্দা কাহিনীতে গোয়েন্দাদের দেখা যায় প্রায়শই আতসী কাচ ব্যবহার করতে।
২১২ খৃস্টপূর্বাব্দে দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধের সময় আর্কিমিডিস পঁচাত্তর বছর বয়সে মারা যান। আর্কিমিডিসের সমাধিফলকে একটি ভাস্কর্য রয়েছে যা সমান উচ্চতা ও ব্যাসের একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডার নিয়ে গঠিত, যা তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কারগুলোর একটিকে নির্দেশ করে। আর্কিমিডিসের মৃত্যুর ১৩৭ বছর পর ৭৫ খৃষ্টাব্দে রোমান বক্তা সিসেরো সিরাকিউজের এগ্রিজেনটিন গেইটের কাছে ঝোপঝাড় পরিবেষ্টিত অবস্থায় আর্কিমিডিসের কবর আবিষ্কার করেন।