বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ ধুমকেতু হঠাৎ করে আসে, আকাশের বুকে দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায় । কিন্তু এবার আকাশে যে ধুমকেতুর আবির্ভাব হচ্ছে, তাকে ঝলমলে অবস্থায় কলকাতার আকাশ থেকেই খানি চোখে দেখা যাবে । আর টানা ২০ দিন ধরে আকাশের বুকে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে এই ধুমকেতু । বিজ্ঞানীরা এই ধুমকেতুর নাম দিয়েছেন নিওওয়াইস ।
আকাশ জুড়ে আলোর কারসাজি যদি দেখতে চান তাহলে এখনই কাউন্টডাউন শুরু করতে পারেন। আগামিকাল ১৪ই জুলাই থেকে কলকাতার আকাশে উদয় হচ্ছে ধুমকেতু নিওওয়াইস । প্রতিদিন সন্ধ্যার আকাশে দেখা যাবে দুই লেজবিশিষ্ট অতি উজ্জ্বল এই ধূমকেতুকে।বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই উজ্জ্বল নিওওয়াইসকে দেখা যাবে খালি চোখেই ।
নিওওয়াইস ধুমকেতু বিষয়ে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এটি আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে সেই সুদূর ওরট ক্লাউড (Oort Cloud) থেকে একাই চলে এসেছে এই ধুমকেতু । বিজ্ঞানীরা এর পোশাকি নাম দিয়েছেন সি/২০২০ এফ৩। আর দুই উজ্জ্বল লেজ বিশিষ্ট এই ধুমকেতুকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ভালবেসে নাম রেখেছেন নিওওয়াইস। চলতি বছরের মার্চ মাসেই সৌরমণ্ডলে প্রবেশ করেছে নিওওয়াইস। পৃথিবী থেকে নিওওয়াইসের দূরত্ব ২০ কোটি কিলোমিটারের মত । ধীরে ধীরে পৃথিবীর আরও কাছাকাছি চলে আসছে এই ধুমকেতু ।
এই নিওওয়াইস সম্পর্কে ভারতের ভুবণেশ্বর প্ল্যানেটোরিয়ামের ডেপুটি ডিরেক্টর পাথানি সামন্ত বলেছেন, প্রায় সাত হাজার পরে ব্রহ্মাণ্ডের হিমশীতল রাজ্য থেকে দিক ভুলে ছুটে এসেছে এমন ধূমকেতু। এতদিন সূর্যোদয়ের আগে উত্তর-পূর্ব আকাশে দেখা দিচ্ছিল নিওওয়াইস। ১৪ জুলাই থেকে উত্তর-পশ্চিম আকাশে সূর্যাস্তের পরেই তার আগুনে রূপ নিয়ে জ্বলে উঠবে। খালি চোখে দেখা যাবে প্রায় ২০ মিনিট। ভারতের আকাশে অতিথি হয়ে থাকবে টানা ২০ দিন।
তবে ধুমকেতু নিওওয়াইস কি পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে ? সে বিষয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারতের আকাশজুড়ে জুলাই থেকে অগস্ট অবধি জ্বলজ্বল করবে এই ধূমকেতু।আগামী ২২-২৩ জুলাই পৃথিবীর মাথার উপর দিয়ে ভেসে যাবে। তখন সে থাকবে পৃথিবীর আরও কাছাকাছি। মাত্র ১০ কোটি কিলোমিটার দূরে। আরও বেশি উজ্জ্বল ও স্পষ্ট দেখা যাবে তার রূপ। রাতের আকাশে আলোর মায়া ছড়িয়ে দিয়ে যাবে নিওওয়াইস। ৩০ জুলাই থেকে তাকে দেখা যাবে সপ্তর্ষি মণ্ডলের কাছে। ৪০ ডিগ্রি অক্ষাংশে। তারপর ভারতের আকাশ থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাবে এই অনাহুত অতিথি। খালি চোখে তখন আর নিওওয়াইসকে দেখা যাবে না। ফলে নিওওয়াইস পৃথিবীতে আছড়ে পড়ছে না ।
💫A faint view of Comet C/2020 F3 (NEOWISE) before sunrise, upper left, over Washington, DC. More 📷: https://t.co/LVyafZweKZ
What is a comet, anyway? What do they look like up close? https://t.co/nnki5IevCJ#cometNEOWISE pic.twitter.com/Aa21palByM
— NASA HQ PHOTO (@nasahqphoto) July 12, 2020
ইতি মধ্যে নিওওয়াইসের রূপ দেখে মজেছেন বিজ্ঞানীরা । আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে এই ধুমকেতুকে অনেকটা পৃথিবীর পিঠে যেন আলোর চাদরের মত দেখেছেন নাসার নভশ্চররা । আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে নিওওয়াইসের রূপের ছটা দেখে মুগ্ধ নাসার নভশ্চর বব বেনকেন। টুইট করে নিওওয়াইসের এই ছবি তিনি দেখিয়েছেন। বব বলেছেন, যেন মনে হচ্ছে উৎসব হচ্ছে পৃথিবীর পিঠে। আতসবাজি ঝলসে উঠছে। নিস্তব্ধ, নিষ্প্রাণ, শূন্য মহাকাশ যেন আলোর জ্যোৎস্নায় স্নান করেছে। নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরির টেলিস্কোপ প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর জো ম্যাসিয়েরো বলেছেন, সাত হাজার বছর পরে ফিরে এসেছে দুই লেজের নিওওয়াইস। এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষ্মী হতে চলেছে বিশ্ব।
Last night's fireworks, for real. Because Science. #NEOWISE #comet pic.twitter.com/IKcJ1wLFAl
— Bob Behnken (@AstroBehnken) July 5, 2020
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সুন্দরী, নিওওয়াইসের পরিধি ৩০ কিলোমিটারের কম। এটি তৈরি হয়েছে পাথর, গ্যাস আর বরফ দিয়ে। সূর্যের কাছাকাছি সৌরবায়ু ও তড়িদাহত সৌরকণাদের সংস্পর্শে এসে এই গ্যাস ও বরফ উবে গিয়ে নতুন পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে। দুটো লেজও গজিয়েছে যার একটি গ্যাসের ও অন্যটির ধুলোর।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ওরট ক্লাউড থেকে এই ধুমকেতু এসেছে । সৌরমণ্ডল যতটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তাকে পরিমাপ করা হয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (এইউ) দিয়ে। এর বাইরেও যে ঘন আঁধারে ঢাকা ঠাণ্ডার দেশ রয়েছে যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছয় না সে দেশকেই বলে ওরট ক্লাউড। আর এখানেই বাড়ি ধূমকেতুদের। নিওওয়াইসও এই ওরট ক্লাউড থেকেই সূর্য-পৃথিবীর সংসারে চলে এসেছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।