বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ আমেরিকা গোটা বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকেই প্রথম থেকে দায়ী করে আসছে । অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডও একই সাথে সুর মিলিয়েছে । এমনকি চীনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে সম্পর্ক পর্যন্ত শেষ করেছে আমেরিকা । তাদের অভিযোগের ভিত্তি যে একেবারেই অমূলক ছিল না, এবার চীন থেকে পালিয়ে আমেরিকায় আসা এক বিজ্ঞানীর স্বীকারোক্তি থেকে স্পষ্ট হল ।
গত বছর নভেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয় । তারপর থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে সেই অতিমারি করোনা ভাইরাস । বরাবরই করোনা ছড়ানোর অভিযোগ করা হয়েছে বেজিংয়ের বিরুদ্ধে । কিন্তু কোন তথ্য বা প্রমান পাওয়া যায়নি এত দিন । এবার হংকং থেকে সদ্য আমেরিকা পালিয়ে আসা ভাইরলজিস্ট লি মেং ইয়্যানের অভিযোগ, চিন সবই জানত, এবং অনেক আগেই জানত। তবে বিষয়টাকে ধামাচাপা দিতে সরকারের উচ্চতম পর্যায়ের হাত ছিল।
চীনা ভাইরলজিস্ট লি মেং ইয়্যানের পরিচয় তিনি নিজে একজন প্রথম সারির বিজ্ঞানী যিনি করোনা ভাইরাস নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা করেছেন । লি মেং ইয়্যান নিজে হংকংয়ের পাবলিক হেল্থ স্কুল থেকে ভাইরলজি ও ইমিউনোলজিতে পড়াশওনা করেছেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, করোনা মহামারী যখন ছড়াতে শুরু করে, তখন তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু আবিস্কারের পথে এগোচ্ছিলেন। তবে তাঁর উর্ধ্বে থাকা বিজ্ঞানীরা তাকে থামিয়ে দেয় ।
ইয়্যানের দাবি, বিশ্বে করোনা নিয়ে চর্চা করা প্রথম কয়েকজন বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। গত বছর ডিসেম্বরেই চিন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই মারণ সংক্রামক জীবাণুর নমুনা হংকংয়ে নিয়ে আসা হয়, এবং সেই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করে ইয়্যানের দল। সেই সময় করোনা নিয়ে কোনও বিদেশি বিজ্ঞানীকেই চিনে গিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছিল চিনের তরফে। চিনা বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার প্রথম পর্বে অনেক আলোচনা করলেও এই মহামারী যত প্রকোপ ছড়ায় তত শান্ত হয়ে পড়েন চিনা বিজ্ঞানীরা। এমনকি এই বিষয়ে কোনও রকম আলোচনা না করার জন্য বার্তা দেন বাকি সহকর্মীদের। তাঁদের মুখে তখন শুধু একটাই কথা, এটা নিয়ে কথা বলা যাবে না, তবে মুখে সবসময় মাস্ক পরে থাকতে হবে।
ভাইরলজিস্ট লি মেং ইয়্যানের আরও অভিযোগ, ‘করোনা ভাইরাসের অস্তিত্বের বিষয়ে বিশ্বকে জানাতে চিন বাধ্য ছিল। তারা যেভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, তাতে আরও বেশি দায়িত্ব ছিল ওদের উপর। তবে তারা সেই দায়িত্ব থেকে নিজের ইচ্ছায় পালিয়েছে।’ কেন তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে এলেন সেই বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন । তিনি বলেন, হংকংয়ে ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তার আইন। এর জেরে সরকারবিরোধী যেকোনও কথা এখন সেখানে অবৈধ বলে গণ্য হবে। এ আইন যে শুধু চিনা নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য, তা নয়। আইনের ৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, এখন থেকে চিনের সমালোচনাকারী বিশ্বের যেকোনও দেশের নাগরিক হংকংয়ে ঢোকামাত্র গ্রেপ্তারের মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে নিজের দেশ হংকং ছেড়ে আমেরিকা পালাতে বাধ্য হয়েছেন ইয়্যান।