বীমা করার প্রয়োজনীয়তা

জীবন বীমা কি ? 

জীবন বীমা করার প্রয়োজনীয়তা জানার আগে আমাদের জেনে নেওয়া উচিত যে জীবন বীমা আসলে কি। জীবন বীমা এমন একটি চুক্তি যা একজন বীমা গ্রহীতা ও একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত হয়; যেখানে বীমা প্রতিষ্ঠান এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে যে বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমা গ্রহীতার উত্তরাধিকারীকে প্রদান করবে। চুক্তির শর্তানুসারে কখনো কখনো মারাত্মক অসুস্থ হলেও বীমা গ্রহীতা অর্থ পেয়ে থাকে। বীমা গ্রহীতা সাধারণতঃ এককালীন বা নির্দিষ্ট সময়ান্তে বীমা কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদান করে থাকে।

বীমা গ্রহীতার সুবিধা হচ্ছে “মানসিক প্রশান্তি” লাভ; কারণ তিনি জানেন যে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা অর্থ সমস্যায় পতিত হবে না।

জীবন বিমায় বিনিয়োগ, অবসর গ্রহণের পর আর্থিক সুবিধা লাভের জন্যও ব্যবহার করা হয়, যদি বীমা গ্রহীতা সতর্কতার সাথে বীমা গ্রহণ করেন ও শর্তাবলীতে এরূপ উল্লেখ করেন। জীবন বীমা একটি আইনগত চুক্তি এবং চুক্তির শর্ত বীমার আওতা দ্বারা সীমাবদ্ধ। এখানে বিশেষ শর্তাবলী লিখিত থাকে এবং তার দায় বীমা গ্রহীতার উপর বর্তায়; যেমনঃ আত্মহত্যা, যুদ্ধ প্রভৃতি কারণে মৃত্যু ঘটলে বীমা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বীমা গ্রহীতার উত্তরাধিকারীকে কোনোরূপ অর্থ প্রদান করা হয় না।

বীমা করার প্রয়োজনীয়তা

জীবন-নির্ভর চুক্তি দুটি প্রধান ধারায় বিভক্ত:

নিরাপত্তা পলিসি
বিনিয়োগ পলিসি

জীবন বীমার নাম আমরা প্রায় সকলেই কম বেশি জানি । কিন্তু কেন আমাদের জীবনে জীবন বীমা দরকার বা কেন আমরা জীবন বীমা করব এ বিষয়টা সকলের কাছে পরিষ্কার নয় । একটা কথা ঠিক আমাদের জীবনকালে আমরা একটা সময় উপার্জন করি । কিন্তু আমাদের উপার্জনের সময়কাল নির্দিষ্ট । ধরুন যারা চাকরি করে, তারা এক সময় না এক সময় অবসর নেবেন, আবার যারা ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত তাদের একটা নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত সামর্থ্য থাকবে কাজ করার । আবার অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের অনেক সদস্যের ভবিষ্যতের কথা ভেবে জীবন বীমা করা হয় । কারন মানুষের জীবনের কথা কিছুই বলা যায় না । কিন্তু পরিবারের উপার্জনক্ষম সসদ্যের যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে দেখা যায় বাকি সদস্যরা সীমাহীন সমস্যার মধ্যে পড়ে যায় । এই ধরনের নানা ঝুঁকির কথা চিন্তা করলেই বোঝা যায় কেন জীবন বীমা আমাদের এত দরকারি ।

আমরা বুঝলাম জীবন বীমার আমাদের সকলের জীবনে কমবেশি প্রয়োজনীয়তা আছে । কিন্তু কত টাকার জীবন বীমা বা কত দিনের জন্য করা কিম্বা জীবন বীমা থেকে পাওয়া টাকা কিভাবে ব্যবহার করব, এই সব প্রশ্ন থেকে যায় । এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে নিচের তথ্যগুলি একবার পড়ে নিলে আশা করি একটা ধারনা পাওয়া যাবে এই সব প্রশ্নের ।

মানুষের আর্থিক জীবনযাত্রায় জীবন বীমা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক সংযোজন। জীবন বীমার অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে যা আপনার এবং আপনার পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। চলুন জীবন বীমার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা সম্পর্কে আজকে জেনে নেই।

 

বীমা করার প্রয়োজনীয়তা

১) জীবনের ঝুঁকির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পাওয়া যায়ঃ  

মানুষের জীবনে সমস্যা থাকবেই । নদীর স্রোতের মত, মানুষের জীবনে এটি আসতেই থাকবে ।আর সমস্যা কখনো সংকেত দিয়ে আসে না । আকস্মিক আর্থিক সমস্যা মোকাবেলায় জীবন বীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । এটা আপনার ও পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে । অর্থনৈতিক সংকটে জীবন বীমা আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে । সবচেয়ে বড় কথা, আপনার অবর্তমানে এটা আপনার পরিবারের নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করবে ।

২) মৃত্যুকালীন সুবিধা পাওয়া যায়ঃ 

জীবন বিমায় বিনিয়োগ করার কথা উঠলে অনেকে বলেন, যদি বেঁচে নাই থাকলাম, তাহলে টাকা দিয়ে কি হবে ? হ্যাঁ এ কথা ঠিক, বেঁচে না থাকলে, টাকা মানুষের কি কাজে আসবে ? কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখতে হবে,  জীবন বীমায় বিনিয়োগ আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করে। বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যুতে, বীমাকারী প্রতিষ্ঠান সমস্ত অর্থ (বীমার মূল অর্থ ও বোনাস অর্থ) শোকসন্তপ্ত পরিবারকে পরিশোধ করে। এছাড়াও,যাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে আয় হ্রাস পেয়েছে, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য জীবন বীমা যথাযথ সুবিধা সুরক্ষিত রাখে। জীবন বীমায় আপনি অনেকগুলো পলিসির মধ্যে থেকে নিজের প্রয়োজনের সাথে মানানসই পলিসি নির্বাচন করতে পারবেন।(বীমা করার প্রয়োজনীয়তা)

৩) নমনীয়তা থাকে:

অনেক সময় বীমাকৃত ব্যক্তি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে তাদের বীমা পলিসি গুলো আর প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করছে না অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী প্রিমিয়াম উপযুক্ত হচ্ছে না । সেক্ষত্রে কিন্তু সহজেই প্রয়োজন ও সুবিধার মধ্যে সমন্বয় করা যায় । সবচেয়ে বড় কথা, একজন মানুষ বীমাতে বিনিয়োগ করার সময় স্বাধীন ভাবে বীমার উত্তরাধিকারী নির্বাচন করতে পারেন, যারা পরবর্তীতে তাঁর মৃত্যুকালীন সুবিধা ভোগ করবেন ।

৪) বীমাতে বিনিয়োগ করে ভাল রিটার্নঃ 

জীবন বীমা কেবল মাত্র মৃত্যুকালীন সুবিধা প্রদান করে না,  জীবন বীমা আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী নিশ্চিত আয় প্রদান করে। জীবন বীমায় বীমাকৃত ব্যক্তি মেয়াদী বোনাসের সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা পলিসির নগদ মূল্যের সাথে জমা হয়। বিনিয়োগকৃত অর্থ পলিসির মেয়াদ শেষে অথবা বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পর নিশ্চিত অর্থ (যে পরিমাণ অর্থের জীবন বীমা করা হয়) হিসেবে রিটার্ন আসবে ।(বীমা করার প্রয়োজনীয়তা)

৫) জীবন বীমাতে বিনিয়োগে কর সুবিধা পাওয়া যায়ঃ 

জীবন বীমায় আপনি অনেক কর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। বীমার আয় কিংবা পলিসি লোনের ক্ষেত্রে কোন কর প্রদান করতে হয় না। তাছাড়া বীমার পলিসি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কর আরোপের সম্ভাবনা থাকে না।

৬) ব্যাঙ্ক থেকে লোন গ্রহণের সুযোগ থাকেঃ

জীবন বিমায় বিনিয়োগ করলে আপনার নামে যে টাকা জমা পড়বে তার উপরে ভিত্তি করে লোন নেবার সুযোগ রয়েছে। মানুষের জীবনে টাকার প্রয়োজন হটাত করে আসে । প্রচন্ড আর্থিক প্রয়োজনে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে লোন গ্রহণের সুবিধা প্রদান করে। তবে মাথায় রাখতে হবে লোনের পরিমাণ মূলত পলিসির নিয়ম বা আইনের উপর নির্ভর করে।(বীমা করার প্রয়োজনীয়তা)

৭) নিম্ন হারের প্রিমিয়ামঃ 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে বীমার সময়সীমার প্রথম বছরগুলোতে প্রিমিয়াম পরিশোধের হার অনেক কম থাকে।

৮) দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় করার ক্ষেত্রেঃ 

আমরা আয় করি এবং জীবন ধারনের জন্য সেই অর্থ ব্যয়ও করি । কিন্তু আমাদের আয়ের পরিমাণ সব সময় সমান থাকে না । আগামী দিনে আমাদের জীবনে কি ঝুঁকি আসতে চলছে তা আমরা জানি না । কিন্তু সেই ঝুঁকির কথা ভেবে আমাদের সঞ্চয় করে রাখতে হয় । অর্থ সংরক্ষণ ও ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ গড়ে তুলতে জীবন বীমা অনেক ভালো একটি উপায়। এটা একটি আদর্শ দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় উপাদান, যা আপনার অবসর পরবর্তী আর্থিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। এমনকি তা সন্তানের বিয়ে বা পড়াশোনার মতো ভবিষ্যত লক্ষ পূরণে কাজে আসবে। এভাবে জীবন বীমায় সুরক্ষা ও সঞ্চয় – উভয় সুবিধাই ভোগ করা যায়।

৯) বিভিন্ন পর্যায়ের পরিকল্পনাঃ 

জীবন বীমার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আপনি জীবনের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য পূরণের পরিকল্পনা করতে পারেন। জীবনে একেকটি পর্যায়ে আপনি ও আপনার পরিবার একেকটি প্রয়োজনের সম্মুখিন হতে পারেন। সেসব ক্ষেত্রে জীবন বীমা প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করবে। আপনার সন্তানের শিক্ষা, বিয়ে, আপনার নিজের একটা স্বপ্নের বাড়ী, অবসরের পরবর্তী দিনগুলো সুন্দরভাবে কাটানো – সবকিছু কিন্তু জীবন বীমার মাধ্যমে সম্ভব !

১০) জীবনের শেষ সময়ে সুরক্ষাঃ

বেশিরভাগ মানুষ সারা জীবন কষ্ট করার পর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একা হয়ে যায় । অনেক সময় নিজের সন্তানরাই দূরে ঠেলে দেয় । সেই বয়সে গিয়ে নতুন করে আর কিছুই করার থাকে না । কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী ভাবে জীবন বীমায় বিনিয়োগ করে থাকলে জীবনের অন্তিম পর্যায়ে কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না । একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পেনশনের মত আজীবন কাল পাওয়া যেতে পারে ।(বীমা করার প্রয়োজনীয়তা)

এতগুলো সুবিধাকে উপেক্ষা না করলে, আপনার নিশ্চয়ই মনে হবে কেন জীবন বীমা আমাদের জীবনে এত দরকারি একটা বিষয় ।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply