পানের বা পান পাতার উপকারিতা
বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয়, প্রায় সারা পৃথিবীতে পানের কদর রয়েছে এবং পান পাতার উপকারিতা ও প্রচুর রয়েছে । এমন এক সময় ছিল, যখন পান খেয়েই মা- মাসীরা নিজের ঠোঁট রঞ্জিত করতেন । কিন্তু ঠোঁট রাঙানো ছাড়াও পানের কিছু ভেজস গুণাবলী রয়েছে, যেগুলি জেনে রাখা ভাল । কারন পান তো শুধু মুখ শুদ্ধি আর হজমের কাজেই লাগে না, বরং বলা ভাল রূপচর্চায়, চুলের সমস্যায়, সব কিছুতেই উপকারী পানপাতা। শুধু তাই নয়, হজম, ক্লান্তি নাশক, যৌন শক্তি প্রভৃতি কাজে পান ব্যবহার করা যায় ।তবে, পানের যে সব সময় উপকারী গুন রয়েছে তা কিন্তু নয় । কারন, পান যেমন বলকারক ও একাধিক রোগ নিরাময়কারী তেমনি বলহানিকর ও অস্বাস্থ্যেরও কারণ। পানের সাথে আমরা চুন, সুপারি, জর্দা প্রভৃতি ব্যবহার করি । এগুলি একদিকে যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, অপর দিকে দাঁতের ক্ষতি করে । এছাড়া, নতুন পান পাতা শ্লেষ্মা বাড়ায়, পুরনো পাতা শ্লেষ্মা দূর করে। পান হজম করে বটে তবে বেশি খেলে অজীর্ণ হয়। পাতার রস বিশেষ ইন্দ্রিয়ের শক্তি বৃদ্ধি করে আবার বোঁটা ও শিরার রস সেই ইন্দ্রিয়ের শক্তি কমিয়ে দেয় । তাই পানের বোঁটা খাওয়া উচিত নয়। যে কোনো চর্মরোগে পান পাতার রস লাগালে তা দাহ সৃষ্টি করে, আবার পোড়া জায়গায় লাগালে তা প্রশান্তি দেয়। পাতার রস মুখে জড়তা ও অরুচি দূর করে। আবার বেশি খেলে বা রস বাসি হলে ঠিক এগুলোই বেড়ে যায়। পান খাওয়ার পর অনেক খাবারের স্বাদ ঠিকমতো পাওয়া যায় না।
ভারতবর্ষের প্রাচীন ভেষজ গ্রন্থ আয়ুর্বেদে নিঃশ্বাস দুর্গন্ধমুক্ত রাখার জন্য পান সেবনের উল্লেখ আছে। নিয়মিত পান খেলে নিঃশ্বাসে কোনো দুর্গন্ধ থাকে না, হজমও ভালো হয়। এটি এ উপমহাদেশের এক প্রাচীন ধারণা ও লোক অভ্যাস। এখনও কেউ কেউ মূত্রকৃচ্ছতায় ভালোভাবে মূত্র নিঃসরণের জন্য দুধের সাথে পানের রস ও চিনি মিশিয়ে পান করেন। এতে প্রস্রাবের ওই সমস্যাটা চলে যায় ও মূত্র নিঃসরণ ভালো হয় এবং স্নায়ু ও শরীরের দুর্বলতা থাকলে তাও দূর হয়। দেহের ক্লান্তি ও স্নায়ুবিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য কয়েকটা পান পাতার রস এক চামচ মধু দিয়ে খেলে তা টনিকের মতো কাজ করে। এ মিশ্রণের এক চা চামচ পরিমাণ একবার খেতে হয়। এভাবে দিনে ২ থেকে ৩ বার খাওয়া যায়। পান পাতা সেবনে দেহের চর্বি বা মেদ কমে এবং ওজন কমে বলে জানা গেছে। নিচে পান খাওয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতার কথা বর্ণনা করা হলো।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক পানের বা পান পাতার উপকারিতা
মুখের ব্রণর সমস্যা দূর করতে পান পাতার জুড়ি মেলা ভারঃ-
মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় মুখ মণ্ডলের লাবন্যের উপর । কিন্তু মুখের লাবন্য ঠিক রাখতে গেলে সব চেয়ে বড় সমস্যা ব্রন । অনেকে মানুষের বিশেষ করে মেয়েদের মুখে ব্রনের সমস্যা দেখা যায় । এর ফলে মুখে দাগ এসে যায় এবং মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয় । তবে মুখের ব্রণর প্রকোপ কমাতে পান পাতার জুড়ি মেলা ভার। কিভাবে পান পাতাকে ব্রন নিরাময়ে ব্যবহার করবেন ? প্রথমে, এক বাটি জলে চারটে পান পাতা নিয়ে সেটাকে পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে নিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ওই পান পাতা ভেজানো জলে মুখ পরিস্কার করলে মুখের ব্রণ, দাগ সমস্তই কমে যাবে এবং সেই সঙ্গে ত্বকের ঔজ্জ্বল্ল্যও বাড়বে । তাই যারা খুব কম সময়ের মধ্যে উজ্জ্বল ত্বক পেতে চান তারা অবশ্যই ব্যবহার করতে পারেন পান পাতার জল ।
ফেস প্যাক তৈরিতে পান পাতার ব্যবহারঃ
আমরা ঘরোয়া ভাবে অনেক জিনিস দিয়ে মুখে লাগাবার জন্য ফেস প্যাক তৈরি করি । কিন্তু জানেন কি, পান পাতা দিয়েও মুখের ফেস প্যাক বানানো যায় ! হ্যাঁ, ফেস প্যাকেও ব্যবহার করতে পারেন পান পাতা । এক্ষেত্রে, প্রথমে, চারটে পান পাতা বেটে তাতে আধ চামচ হলুদ দিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করে তা নিয়মিত মুখে লাগিয়ে পরে পান পাতার জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে একদিকে ত্বক হয়ে উঠবে আরও কমনীয় এবং লাবণ্যময়ী, অপর দিকে, ব্রণ ফুসকুরির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। খুব কম লোকেই জানে পানে যে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রপার্টি আছে তা পিম্পল, অ্যাকনে সহজেই সারিয়ে তোলে | এছাড়াও বিভিন্ন স্কিন অ্যালার্জি, ফুসকুড়ি, কালো ছোপ, সান বার্ন সারিয়ে দেয় | এর জন্য কয়েকটা তাজা পান পাতা আর কাঁচা হলুদ একসঙ্গে বেটে লাগাতে হবে |
অকালে চুল পড়া বন্ধ করতে পান পাতার ব্যবহারঃ
আজকের দিনে মানুষের চুল নিয়ে চুলোচুলি করতে দেখা যায় প্রায়শই । অর্থাৎ, বাইরের পরিবেশে মাথার চুল অয়ে ওঠে রুক্ষ এবং দুর্বল । ফলে অকালেই ঝরে যাচ্ছে মাথার চুল । আর ছেলে হোক বা মেয়ে, মাথার চুল অবশ্যই সৌন্দর্যর পরিচায়ক এ কথা অস্বীকার করার প্রশ্ন ওঠে না । এবার অকালে চুলের ঝরে পড়া আটকাতে পান পাতার ব্যবহার করে দেখুন । আশা করি, ফল মিলবে হাতে নাতে । চুল পড়ার হার কমাতেও পান পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিন চারটি পান পাতা বেটে তাতে দু’চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। সেই পেস্টটি মাথায় মেখে অন্তত ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। মাথায় লাগাবার সময় মনে রাখবেন যে এই পেস্টটি চুলে যত ভালো বসবে ততই ভালো উপকার পাবেন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুলটা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন থেকে চার বার করলেই নিজের চোখে দেখতে পাবেন চুল পড়ার হার কমছে ।
পানের বা পান পাতার উপকারিতা
শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় পান পাতার ব্যবহারঃ
মাথার চুলের পর এবার আসা যাক আমাদের ত্বক সমস্যায় । ভাবতে অবাক লাগলেও, শুষ্ক ত্বকের সমস্যাতে একেবারে সঙ্কটহারিণী রূপে কাজ করে পান পাতা ।পান পাতা ত্বকের জেল্লা ফেরাতেও সাহায্য করে । এক্ষেত্রে, পাঁচটি পান পাতা বেটে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে সেই পেস্টটি সারা মুখে মেখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তার পর ঈষদুষ্ণ গরম জলে মুখটা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার এটি ব্যবহার করলেই নিজেই অবাক হতে বাধ্য হবেন এর উপকারী গুন দেখে ।
ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমাতে পান পাতার ব্যবহারঃ
ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমাতেও আস্থা রাখুন পান পাতার উপর। এক লিটার জলে খান দশেক পান পাতা ভিজিয়ে রাখুন এবং জলটা মিনিট দশেক ফুটিয়ে নিন। তারপর জলটা ঠাণ্ডা হলে সেই জল দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। প্রতিদিন রাতের শুতে যাওয়ার আগে এই পদ্ধতি ব্যবহার করলেই ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে।
হজমে সাহায্য করে পান পাতাঃ
পান খেলে লালাগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ লালার কারণেই হজমের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়। লালার মধ্যে থাকা বিভিন্ন এনজাইম বা উৎসেচক খাদ্যকে কণায় ভাঙতে সাহায্য করে যার ফলে হজম ভালো হয়। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও এ উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে গুরুপাক বা ভারী খাবার খাওয়ার পর অনেকেরই হজমের সমস্যা হয়। এজন্য যে কোনো উৎসব ও অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনের শেষে পান পরিবেশন করা হয় । যা খেলে ওসব খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায়। কোমল পানীয় খাওয়ার চেয়ে এটা নিশ্চয়ই ভালো। বদহজম হলে পানিতে পান পাতা টুকরো করে কেটে কিছুক্ষণ সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ করা বা জ্বাল দেয়ার সময় তাতে কয়েকটা গোলমরিচ দিতে হবে। তারপর তা নামিয়ে ছাঁকতে হবে। তারপর ঠাণ্ডা করে তা খেতে হবে। শিশুদের ২ চা চামচ খাওয়াতে হবে। এতে হজম ভালো হবে, বদহজম বা অজীর্ণ হলে সেটাও চলে যাবে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পান পাতাঃ
পান পাতা খাওয়ার ফলে যে রস উত্পাদন হয় তা আমাদের দাঁত আর মাড়ি সুস্থ রাখে | এছাড়াও পান পাতার রস আমাদের মুখের ভেতরটা পরিষ্কার রাখে | এমনকী মুখের মধ্যে রক্তপাতও বন্ধ করে | পান বেটে তার রস এক কাপ হাল্কা গরম জলে মিশিয়ে রোজ সকালে তা দিয়ে গার্গল করুন | কয়েকদিনর মধ্যেই তফাত দেখতে পাবেন | খাবার গ্রহণের পর তার কণা মুখের ভেতরে, দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে। এগুলো ব্যাকটেরিয়া পচিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পান খেলে তার রস জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এসব ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে দেয় না। ফলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও মুখে দুর্গন্ধ হয় না।
পানের বা পান পাতার উপকারিতা
যৌন শক্তি বাড়াতে পান পাতাঃ
আগের কালে ঘুমাতে যাবার আগে বাড়ির গৃহিণী একটি পান মুখে দিয়ে আর একটি পান নিয়ে যেতেন স্বামীর জন্য । এর কারন কি ছিল ? শুধুই কি এটি একটি পুরনো প্রথা ? না কি এর পিছনে কোন কারন আছে ? নববিবাহিত দম্পতিদের অনেকেই যৌন মিলনে যাওয়ার আগে পান খান। এতে তাদের যৌন ক্ষমতা ও মিলনের স্থায়িত্বকাল বৃদ্ধি পায়।
গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময় করতে পান পাতাঃ
আমাদের শরীরের অনেক সমস্যার মধ্যে একটি সমস্যা গ্যাস্ট্রিক আলসার সমস্যা । অনেকেই আছেন, যারা গ্যাস্ট্রিক আলসারে কষ্ট পাচ্ছেন । কিন্তু দেখা গেছে, পান খেলে পেটে বায়ু কম হয় ও গ্যাস হয় না। এর ফলে গ্যাস্ট্রিক ও তা থেকে আলসার সৃষ্টির সুযোগ কমে যায়। পানের রস হজমে সাহায্য করায় তা পেটে বদ গ্যাস তৈরি রোধ করে। ফলে পেট ফাঁপে না ও গ্যাস্ট্রিক হয় না ।
জন্মরোধ করতে পান পাতাঃ
ভাবতে অবাক লাগে, প্রাচীনকালে জন্ম রোধ করতে পান ব্যবহার হত । পান গাছের শিকড় বেটে রস করে খেলে জন্ম নিরোধক বড়ি না খেয়েও জন্মনিয়ন্ত্রণে এটা সেবন করা যায় । বর্তমানে, বিভিন্ন দেশের গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পানের বা পান পাতার উপকারিতা
মাথার উঁকুন মারতে পান পাতাঃ
অনেকের মাথায় উকুন একটা বড় সমস্যা । একবার হলে, অনেক সময় মাথায় চুলের ক্ষতি তো হয়ই, সেই সাথে ক্ষত তৈরি করে ফেলে উকুন । এবার উকুন মারতে পান পাতা ব্যবহার করতে পারেন । মাথায় উঁকুন হলে গোসলের কিছুক্ষণ আগে পান পাতার রস মাথায় লাগিয়ে বসে থাকলে উঁকুন সবংশে মরে যায়। এ কাজে ঝাল পান হলে ভালো হয়।
ফোঁড়া ফাটায় পান পাতাঃ
আমাদের ত্বকের অপর একটি সমস্যার নাম ফোঁড়া । জানেন কি ফোঁড়া ফাটাতে পান পাতা ব্যবহার করা যায় ? পান পাতার চকচকে সবুজ পিঠে ঘি মাখিয়ে একটু সেঁক দিয়ে গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগিয়ে দিলে দ্রুত ফোঁড়া পেকে ফেটে যায়। আবার পাতার উল্টো পিঠে ঘি মাখিয়ে একইভাবে বসিয়ে রাখলে তা পুঁজ টেনে বের করে আনে। ঘিয়ের বদলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করেও একই ফল পাওয়া যায়।
পানের বা পান পাতার উপকারিতা
কানের সমস্যায় পান পাতার ব্যবহারঃ
অনেক সময় শোনা যায় কান পেকেছে । আসলে আমাদের কানের মধ্যে ঠিক মত পরিষ্কার না করায় ময়লা জমতে জমতে এক সময় কানের মধ্যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তী কালে কানের মধ্যে পেকে যায় এবং পুঁজ বের হতে থাকে । কান পেকে পুঁজ হয়ে গেলে কানে পান পাতার রস গরম করে ১-২ ফোঁটা কানের ভেতরে দিলে এ সমস্যা চলে যায়।
চর্মরোগ সারাতে পান পাতার ব্যবহারঃ
আমাদের শরীরে অনেক সময় খোসপাঁচড়া, চুলকানি বা দাঁদের সমস্যা দেখা যায় । দেহের কোথাও দাদ হলে বা চুলকানি পাঁচড়া হলে সেখানে ঘষে পান পাতার রস লাগিয়ে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে তা সেরে যায়। শরীরের যে সব অংশে ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যেমন পায়ের আঙুল, প্রভৃতি সেই সব জায়গায় পানপাতার রস লাগান | কয়েকদিনের মধ্যে ইনফেকশন সেরে যাবে |
পাইওরিয়া ভালো করতে পান পাতার ব্যবহারঃ
আমাদের মুখে অনেক সময় দাঁতের মাড়ি দূষিত হলে বা আঘাত পেলে সেখানে ফুলে যায় ও পুঁজ হয়, ক্ষত হয়। এক্ষেত্রে পানের রসের সাথে অল্প জল মিশিয়ে কুলকুলি করলে সেখান থেকে আর পুঁজ পড়ে না, ধীরে ধীরে ক্ষতও শুকিয়ে যায়। মুখগহ্বরে কোনো ক্ষত হলে পানের রসে তার উপশম হয়।এর কারন হল, পানের রসে এসকরবিক এসিড আছে যা একটি চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটা মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
নখকুনির সারাতে পান পাতার ব্যবহারঃ
অনেক সময় আমাদের হাতের বা পায়ের নখ বসে যায় । বিশেষ করে পায়ের নখ । এগুলিকে নখকুনি বলে । নখকুনিতে নখের কোণায় ব্যথা হয় । অনেক সময় নখ কুনির জন্য চলা ফেরা করা দায় হয়ে ওঠে । এ অবস্থায় সেখানে কয়েক ফোঁটা পানের রস দিলে ব্যথাটা চলে যায়।
পানের বা পান পাতার উপকারিতা
আঁচিল দূর করার জন্য পান পাতার ব্যবহারঃ
আমাদের শরীরে অনেক সময় আঁচিল দেখা যায় । অনেক সময় অপারেশন করে আঁচিল মুক্ত করা হলেও পানের সাহায্য বিনা অপারেশনে আঁচিল মুক্ত করা সম্ভব । আঁচিল হলে সে আঁচিলের ওপর কয়েক দিন পানের রস লাগালে তা ধীরে ধীরে খসে পড়ে ও সেখানে আর আঁচিল তৈরি হয় না।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে পান পাতাঃ
গবেষণায় দেখা গেছে পানের রস রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । পানের ডায়াবেটিস প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। এই কারনে নিয়মিত পান খেলে ডায়াবেটিসের সম্ভব না হ্রাস পায় ।
দীর্ঘ দিনের সর্দি বের করতে পান পাতার ব্যবহারঃ
অনেক সময় আমাদের বুকের মধ্যে কফ, সর্দি বা শ্লেষ্মা জমা হয় । ঠিক মত শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া যায় না । শ্বাস প্রশ্বাসের সময় বুকে ঘড়ঘড় করে আওয়াজ ওঠে । বুকের ভেতর কফ/সর্দি বা শ্লেষ্মা জমা হলে তা বের করতে পানের রস কার্যকর। এ ক্ষেত্রে পানের রসের সাথে মধু মিশিয়ে চেটে চেটে কয়েক দিন খেতে হবে। এতে বুকে জমা কফ বেরিয়ে যাবে।
মাথা ব্যথা দূর করতে পান পাতার ব্যবহারঃ
পান পাতায় উপস্থিত একাধিক উপাদান নানাবিধ রোগের প্রকোপ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নানা রোগের চিকিত্সায় এই পাতাটির ব্যবহার করা হয় । শুনতে আজব লাগলেও একথার মধ্যে কোনও ভুল নেই যে নিয়মিত পান পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরের ভেতরে “কুলিং প্রপাটির” মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে মাথা যন্ত্রণা কমে যেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, মাথা যন্ত্রণা কমাতে আরেক ভাবেও পান পাতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। কীভাবে? এবার থেকে যখনই মাথা যন্ত্রণা করবে, তখনই ১-২ টো পান পাতা নিয়ে কপালে লাগিয়ে ফেলবেন। দেখবেন কষ্ট কমতে সময় লাগবে না। মাথা ব্যথা হলে কপালে পানের রস লেপে দিলে দ্রুত মাথাব্যথা কমে যায়।
পানের বা পান পাতার উপকারিতা
ক্ষত ও ব্যথা সারাতে পান পাতাঃ
পানের বেদনানাশক ও ক্ষত সারানোর ক্ষমতা আছে। ক্ষতস্থানে পানের রস লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখলে দুই-চার দিনের মধ্যেই ক্ষতস্থান শুকিয়ে যায়। কোথাও ব্যথা হলে পান পাতা বেটে মলমের মতো সেখানে লেপে দিলে দ্রুত ব্যথা কমে। দেহের ভেতরে কোথাও ব্যথা হলে পানের রস করে পানিতে মিশিয়ে তা শরবতের মতো খেতে হবে। শুধু পান পাতা চিবিয়ে রস খাওয়ার পার পানি খেলেও এ উপকার পাওয়া যায়। কোথাও কেটে গেলে দ্রুত সেখানে পানের রস লাগিয়ে দিলে জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকে না। পান পাতা “পলিফেনল” বিশেষত “চাভিকল” নামক রাসায়নিক উপাদানে পূর্ণ। এটা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। এ ছাড়া সেখানে ফোলাও বন্ধ করে, ব্যথার উপশম করে। শরীরের যেসব অংশ প্রায় সময়ই ঘামে ভেজা থাকে সেখানে নানা রকম ছত্রাক জন্ম নেয় ও দাদের মতো চর্ম রোগের জন্ম দেয়। পানের রস সেখানে লাগালে তা এন্টিসেপটিকের কাজ করে ও ছত্রাক জীবাণু ধ্বংস করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পান পাতার ব্যবহারঃ
গ্রামের এ এক পুরনো অভ্যাস। বিশেষ করে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পানের বোঁটা ক্যাস্টর অয়েল বা সরষের তেলে ডুবিয়ে তা মলদ্বারে ঢুকিয়ে দিলে শিশুদের পেটে জমে থাকা মল বেরিয়ে আসে। বড়দের এর সাথে ইসবগুলের ভুসি জলে ভিজিয়ে শরবত করে রোগীকে খাওয়ানো হয়, ত্রিফলা ভিজিয়ে সেই জলও খাওয়ানো হয়। রাতে ১টি পান পাতা কুচি কুচি করে কেটে এক গ্লাস জলে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে তা ছেঁকে খালি পেটে কয়েক দিন খেলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য চলে যায়। না ভিজিয়ে রাখতে পারলে সকালে পান ছেঁচে রস বের করে তা জলের সাথে মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে।
পানের বা পান পাতার উপকারিতা
ঠাণ্ডা লাগলে পান পাতার ব্যবহারঃ
ঠাণ্ডা লাগলে সর্দি কাশিও হয় । ঠাণ্ডা লাগা সারাতে পান চমৎকার কাজ করে। এক্ষেত্রে একটি পানপাতা গরম জল দিয়ে ছেঁচে রস বের করতে হবে। এ রসের সাথে এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়া ও এক চিমটি আদার গুঁড়া মিশাতে হবে । চলতি ভাষায় বা আয়ুর্বেদিক মতে একে বলে কাশ্যম। শিশুদের ক্ষেত্রে ৩ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স হলে এ কাশ্যমের ১ চা চামচ খাওয়াতে হবে, বড়দের ক্ষেত্রে খাওয়াতে হবে ২ চা চামচ । ৩ বছরের নিচে বয়স হলে সেসব শিশুদের এটা খাওয়ানো যাবে না। সেক্ষেত্রে ২ চা চামচ পানের রসের সাথে ১ চা চামচ নারিকেল তেল ও এক টুকরো কর্পুর মিশিয়ে শিশুর বুকে মালিশ করতে হবে। সর্দি-কাশি সারানোর জন্য ২ গ্রাম পান পাতা ও দারচিনি ১১০ মিলিলিটার জলে গরম করে ফুটিয়ে তা নামিয়ে একটু ঠাণ্ডা করে রোজ একবার খেতে হবে। এতে ৭ দিনের মধ্যে সর্দি কাশি সেরে যাবে।
ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে পান পাতার ব্যবহারঃ
মানুষের স্বাস্থ্য নির্ভর করে খাদ্যের উপর । ঠিক মত খাবার না পেলে শরীর পুষ্টি পাবে না । ফলে অচিরেই দুর্বল হয়ে পড়তে হবে । সবচেয়ে বড় কথা, পাকস্থলী গড়বড় হলে সবই উল্টে যায়। খিদেও লাগে না। পাকস্থলীতে অম্লমান বা Ph-এর মাত্রা স্বাভাবিক না থাকলেই এরূপ হয়। পানের রস তা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও ক্ষুধা বাড়ে।
স্পন্দিলাইটিসের ব্যাথায় পান পাতার ব্যবহারঃ
নানা কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। শোয়া থেকেও হয়। বয়স্কদের এ সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয়। মাংসপেশির টান থেকেও এরূপ ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যথা জায়গায় পান পাতার গরম পুলটিস দিয়ে সেঁক দিলে উপকার হয়। এ ছাড়া পান পাতার রসের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে ব্যথা জায়গায় মালিশ করলে ব্যথা কমে যায়।
মূত্র স্বল্পতা ও মূত্রকৃচ্ছতার উপশম করে পান পাতাঃ
যাদের কম প্রস্রাব হয় বা প্রস্রাব করতে গেলে কষ্ট হয় তারা পান পাতার রস সেবন করে উপকার পেতে পারেন। এক্ষেত্রে ১টি পান পাতা ছেঁচে রস করতে হবে। সেই রস একটু দুধের সাথে মিশিয়ে পান করলে উপকার হবে। এতে দেহে জল ধারণ ক্ষমতা বাড়বে ও মূত্রকৃচ্ছতা চলে যাবে।
পানের বা পান পাতার উপকারিতা
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় পান পাতাঃ
শুনলে অবাক হবেন বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ভীতিকর রোগটির নাম ক্যান্সার । পানের রসে আছে চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। এজন্য রোজ ১০-১২টি পান পাতা পানিতে ৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে । এরপর তা নামিয়ে ছাঁকতে হবে। একটু ঠাণ্ডা করে তাতে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে কুসুম গরম থাকতেই পান করতে হবে। রোজ এটা খেতে পারলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
শিশুদের পেট ব্যথা কমায় পান পাতাঃ
পেটে ব্যথা হলে ছোট্ট শিশুরা কাঁদতে থাকে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় শিশুরা মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারে না । বড় শিশুরা হয়তো বলতে পারে, কিম্বা পেট চেপে ধরে কাতরাতে থাকে। কিন্তু হাতের কাছে তো সব সময় ডাক্তার থাকে না । কি করবেন ? এ অবস্থায় পান পাতার চকচকে পিঠে নারিকেল তেল মাখিয়ে তা গরম করে সেই পাতা পেটের ওপর চেপে ধরে সেঁক দিতে হবে। ৩-৪ মিনিট পর পর এভাবে কয়েকবার সেঁক দিলে পেটে ব্যথা কমে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে সেঁকের সময় তাপটা যেন বেশি না হয়।
গলাব্যথা দূর করে পান পাতাঃ
গলাব্যথা হলে খুব সহজেই তা পান পাতা ব্যবহার করে দূর করা যায়। এক্ষেত্রে ১ চা চামচ পান পাতার রস এ গ্লাস গরম জলে মিশিয়ে গড়গড়া বা গার্গেল করতে হবে।
দাঁতে ব্যথা কমায় পান পাতাঃ
দাঁতে ব্যথা হলে ২ কাপ পানিতে ২-৩টি পান পাতা সিদ্ধ করতে হবে। জ্বাল দিতে দিতে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে তা দিয়ে কুলকুলি করতে হবে। এতে দাঁতে ব্যথা কমে যাবে।
পোড়া সারাতে পান পাতার ব্যবহারঃ
পুড়ে গেলে সেখানে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয়। পোড়া জায়গায় পান পাতা বেটে তার সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণার উপশম হয় ও সহজে ঘা হতে পারে না।
পানের বা পান পাতার উপকারিতা
নাক থেকে রক্ত পড়া থামায় পান পাতাঃ
অনেক সময় সান স্ট্রোক হওয়ার ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে | এটা বন্ধ করতে একটা পান পাতা পাকিয়ে তা নাকের মধ্যে গুঁজে দিন | তবে এ ক্ষেত্রে পান পাতা ব্যবহারের আগে খেয়াল রাখতে হবে, এটা প্রয়োগ করার সময় মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে রাখতে হবে | কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে | আসলে পান পাতা খুব তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দিতে পারে |
ডিওডোরেন্টের কাজ করে পান পাতাঃ
শুনে অনেকেই হয়ত হেঁসে উঠবেন । কিন্তু বিশ্বাস না হলে একবার নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন | স্নান করার সময় স্নানের জলে কিছুটা পান পাতার রস মিশিয়ে নিন | এই জল দিয়ে স্নান করলে সারাদিন ফ্রেশ লাগবে | এছাড়াও ঘাম কম হবে | পান পাতা দিয়ে জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সেই জল পান করলে ঘামের গন্ধ কমবে |
এছাড়াও দেখা গেছে পান পাতা আমাদের শরীরে মেটাবলিজম বাড়া তে সাহায্য করে । এই কারনে, নিয়মিত পান খেলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে | এর ফলে ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে যায় | যা বিভিন্ন প্রটিন, ভিটামিন, মিনারেল অ্যাবজর্ব করতে সাহায্য করে । এছাড়ার শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে পানের রস ।