বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ বাঙ্গালীদের বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা । বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রতিবেশি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বেশীর ভাগ মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি । যার কারনে উন্মাদনার শেষ নেই । কিন্ত ভাবতে অবাক লাগে, এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্গা পুজা বাংলাদেশে হয় । হ্যাঁ, বাংলাদেশের বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির দুর্গা পুজা এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্গা পুজা হিসাবে স্বীকৃত ।
প্রতি বছরের মতো এবারও দুর্গা পূজাকে ঘিরে বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর শিকদার বাড়িতে করা হয়েছে জমকালো চোখ ধাঁধানো আয়োজন। এবার সেখানে পূজা মণ্ডপে থাকবে ৮০১টি প্রতিমা। যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রতিমার দুর্গা পূজার মণ্ডপ বলে দাবি করছে আয়োজক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা ।
এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্গা পুজা; বাগেরহাটের সিকদার বাড়ির দুর্গা পূজা
ঐতিহাসিক আয়োজক এবং জাক-জমকপূর্ণ পুজা আর্চনা হয় এই শিকদার বাড়ির শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরে। এর অবস্থান বাগেরহাটের হাকিমপুর গ্রামে। গত (৬টি) বছরগুলোতেও এই আয়োজন এবং শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থান বজায় রেখেছিল। এই পুজায় শিকদার পরিবার তাদের হৃদয়ের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। এই শ্রেষ্টত্বের অবস্থান সৃষ্টির প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছিল জনাব ডা: দুলাল শিকদার এবং রমা শিকদার এর অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভগবানের প্রতি বিশ্বস্ততা এবং ভালবাসার তাগিদে।
হাকিমপুরের শিকদার বাড়ীর দূর্গা প্রতিমা তৈরীর কাজ এ বছরও চলছে যথারীতি। গত বৈশাখ মাস থেকে চলছে এ পূজার প্রস্তুতি। এরই মধ্যে হাকিমপুর শিকদার বাড়ির পূজা মন্ডপের সভাপতি ডা: দুলাল কৃষ্ণ শিকদার পরলোক গমন করেছেন। তিনি মারা যাবার পর এ মন্দিরের হাজার হাজার দর্শক ও ভক্ত আগামী পূজা উৎসব কিভাবে বা পূর্বের মতো হবে কিনা এমন সন্দিহানে ছিলেন ।
এবার বাগেরহাটের সিকদার বাড়ির প্রতিমা তৈরির জন্য বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় এর নেতৃত্বে ১৫জন ভাস্কর দিন রাত অকান্ত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরীর কাজ করেছেন। গত বছর এ মন্ডপে প্রতিমার সংখ্যা ছিল ৭০১ টি। এ বছরও প্রতি বছরের ন্যায় ৫০ টি প্রতিমা বাড়িয়ে ৭৫১ টি করার পরিকল্পনা থাকলেও ডা: দুলাল কৃষ্ণ শিকদার পরলোক গমন করায় তার স্মরণে ১০০ প্রতিমা বাড়িয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে শিশির শিকদার জানান।
প্রতিমা তৈরীর কাজে নিয়োজিত ভাস্কর বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চারযুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে হিন্দু ধর্মের হাজার বছরের পুরাতন পৌরাণিক কাহিনীকে প্রাধান্য দিয়ে তা ফুটিয়ে তুলেছেন মূর্তি দিয়ে। গত বছরের ৭০১ টি প্রতিমার বিশেষত্বতো থাকছেই, তারপরও আরও ১০০ নতুন প্রতিমা তৈরি হয়েছে ।
পূজার পৃষ্ঠপোষক শিল্পপতি লিটন শিকদার এর মতে “তার বাবা ডা: দুলাল শিকদার ছিলেন তার প্রেরণা। তারই পরামর্শ ও নির্দেশনায় শিকদার বাড়িতে দূর্গা পূজা হয়ে আসছে। আজ তিনি নেই। তাই তিনি যেভাবে পূজার শুরু করে গেছেন, তার মৃত্যুর পরও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করবেন তিনি। তার স্মরণে ও আত্নার শান্তির জন্য এ বছর আরও ১০০ প্রতিমা বৃদ্ধি করে ৮০১ টি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। ”
এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্গা পুজা; বাগেরহাটের সিকদার বাড়ির দুর্গা পূজা
জানা গেছে, এ বছর বাগেরহাটে ৬৪১টি পূজা মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে হাকিমপুরের শিকদার বাড়ি ছাড়াও বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাড়াপাড়া গ্রামের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সার্বজনীন পূজা মন্দির, চুলকাঠি বাজারের বণিকপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, পোলঘাট সার্বজনীন পূজা মন্দির এবং ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের বেতাগা মোমতলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপগুলোতে বেশি সংখ্যক প্রতিমা তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে। ২০১০ সাল থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে বাগেরহাট তথা দেশের বৃহত্তম দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবারও প্রমান করে দিল যে, দিন দিন সেখানে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলছে।
গত বছরের আগের বছর সেখানে ছিল ৬৫১টি প্রতিমা। গত বছর ছিল ৭০১টি। আর এবার এই মণ্ডপে ৮০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পূজা মণ্ডপ বলে দাবি করেন পূজার আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার এবং বাগেরহাট পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায়।
মাগুরা জেলার কারুশিল্পি আ. কুদ্দুস জানান, প্রথমে তিনি একা ককশিটের কাজ করেছেন পাঁচ মাস ধরে। অর্ধেক কাজ শেষ হলে আরও ১৫ জন লোক আনা হয়। তারা এই পাঁচ মাস ধরে দিন-রাত কাজ করেছেন । ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এই মণ্ডপের প্রতিমা দেখতে এসেছেন বলে তিনি জানান।
আয়োজক লিটন শিকদার বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে আমি এখানে দুর্গা পূজার আয়োজন করে আসছি। প্রথম বছরে ২০১টি প্রতিমা দিয়ে শুরু হয়। স্থানীয় লোকজনের উৎসাহে দিন দিন প্রতিমার সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি বছর হাকিমপুর গ্রামে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরের দর্শনার্থীরা এখানে দুর্গা পূজা দেখতে আসেন।’
এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্গা পুজা; বাগেরহাটের সিকদার বাড়ির দুর্গা পূজা
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাগেরহাট জেলায় এ বছর ৬৪১টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উপলক্ষে মন্দিরগুলোতে চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সদর উপজেলার শিকদার বাড়িতে এশিয়ার বৃহত্তম দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই এই মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আলাদাভাবে করা হয়েছে ।’
সিকদার বাড়ির দুর্গা পুজা ২০১৯ এর ভিডিও