বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক:স্বপ্ন সবাই দেখে, কিন্তু কতজনের স্বপ্ন পূরণ হয় ? স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য কতজনই বা সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যায় ভবিষ্যতের দিকে ? এমনই এক তরুণী অনুপ্রিয়া, যে স্বপ্ন দেখেছিল এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পেরেছে । তাঁর নিকটাত্মীয়দের সকলে হয়তো এখনও প্লেনে চড়ারও সুযোগ পাননি । কিন্তু তিনি শুধু প্লেনে চড়েনই প্লেন চালিয়ে দেখিয়ে দিলেন । ওড়িশার মাওবাদী-অধ্যুষিত এলাকা মালকানগিরির এক আদিবাসী তরুণী অনুপ্রিয়া । তাঁর এই সাফল্য যেন আকাশ ছুঁয়েছে আক্ষরিক অর্থেই । ২৭ বছরের অনুপ্রিয়া মধুমিতা লাকরা যে কেবল বাণিজ্যিক প্লেনের পাইলট হলেন না তা-ই নয়, এই প্রথম গোটা আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য এক ইতিহাস লিখে ফেললেন ।
অনুপ্রিয়ার এই সাফল্যের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অনেককিছু । কিন্তু যে সেরা হবে, তাঁকে আটকে রাখা যায় না, সেটা পাইলট হয়ে প্রমান করে দিলেন আবার । পুলিশ কনস্টেবল মারিনিয়াস লাকরার মেয়ে অনুপ্রিয়া ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একজন পাইলট হবার । কিন্তু তাঁর পরিবারের সকলেই ভাবতেন এটা তাদের মেয়ের একটা স্বপ্ন, যাকিনা বাস্তবে রূপ পাবে না কোন দিন । কারণ এমন একটা স্বপ্ন দেখেছে তাদের মেয়ে, যেটা তাঁদের মতো বাড়ি থেকে পূরণ করা অসম্ভব। কিন্তু সেই স্বপ্ন যখন সফল হল, তখন বাঁধ ভাঙা আনন্দের জয়ারে ভেসে গিয়েছে গোটা লাকরা পরিবার । সব ঠিক থাকলে এই মাসেই ইনডিগো এয়ারলাইন্সের কো-পাইলট হিসেবে নিযুক্ত হবেন অনুপ্রিয়া।
মেয়ে অনুপ্রিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাবা মারিনিয়াস বলছিলেন, “পাইলট হওয়ার জন্য যে প্রশিক্ষণ নিতে হয়, তার খরচ জোগানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি ধার করেছিলাম,আত্মীয়দের থেকেও সাহায্য নিয়েছিলাম। মেয়েকে বলেছিলাম, যতটা পড়াশোনা করতে হয়, তা-ই যেনও করে।”
মালকানগিরির ভিতরের দিকে, একটি ভাঙাচোরা পুরনো বাড়িতে থাকে লাকরা পরিবার । সামান্য বেতনে সংসারে অভাবের ছাপ রয়েছে প্রকট । অনুপ্রিয়ার মা জিমাজ লাকরা জানালেন, “আমাদের মেয়ে যা হতে চেয়েছিল, তা-ই হতে পেরেছে। আমরা এতেই খুব খুশি। ওর এত বড় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তার সামনে আমাদের সব দুঃখ কষ্ট ফিকে হয়ে গেছে। আমি চাই,আমাদের মেয়ে সকলের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক। আমি চাই সব বাবা-মায়েরা তাঁদের মেয়ের পাশে থাকুন।”
অনুপ্রিয়ার এই সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। লিখেছেন, “আমি ওর সাফল্যে খুব খুশি। ও বহু মেয়ের আদর্শ হয়ে উঠতে পারে।”
ওড়িশা আদিবাসী কল্যাণ মহাসঙ্ঘের সভাপতি এবং আদিবাসী নেতা নিরঞ্জন বিসি জানিয়েছেন, ওঁরাও গোষ্ঠীর মেয়ে অনুপ্রিয়া এই প্রথম প্লেন ওড়ানোর অনুমতি পেয়েছেন। শুধু মালকানগিরি নয়, গোটা ওড়িশার কোনও আদিবাসী মেয়ে এই সাফল্য পায়নি এখনও। তিনি বলেন, “যে রাজ্যের সর্বত্র এখনও রেললাইন পরিষেবা পৌঁছয়নি, সে রাজ্যের আদি জনজাতির প্রতিনিধি হিসেবে এই সুযোগ পাওয়া বিরল বৈ কী!”
দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা পাইলট অনুপ্রিয়া মালকানগিরির স্থানীয় একটি মিশনারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে পড়াশোনা শেষ করতে চলে যান কোরাপুট । বরাবর পড়াশোনায় ভাল অনুপ্রিয়া ২০১২ সালে ভুবনেশ্বরের সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন । সেখানে পড়াশোনা চলাকালীন তিনি ঠিক করেন, পাইলট হবেন । সেই চিন্তা মনে আসার পর কলেজ ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হন সরকারি অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে । মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ধার করে প্রশিক্ষণের টাকা জোগাড় করেন অনুপ্রিয়ার বাবা । সেখানে সাত বছরের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও একাধিক পরীক্ষার পরে অবশেষে অনুমোদন পান বিমান চালানোর । এই দীর্ঘ লড়াইয়ে বারবার হতাশা এলেও, কখনও ভেঙে পড়েননি অনুপ্রিয়া । কোনও বাধাকেই বাধা বলে মনে করেননি । তাইত এখন সারা দেশের কাছে অনুপ্রেরণার একটা উজ্জ্বল নাম অনুপ্রিয়া ।