সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা

বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে ।  শুধু মাত্র ভারতবর্ষ নয়, আয়ুবেদিক চিকিৎসা এখন পাশ্চাত্য দুনিয়াতেও এখন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে । কিন্তু আয়ুবেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে আমাদের শরীরে কতখানি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে বা আধুনিক বিজ্ঞান কি বলছে আয়ুবেদিক চিকিৎসা সম্পর্কে একবার দেখে নিই ।

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ রোগটির নাম “মধুমেহ” বা ডায়াবেটিস । এটি এমন এক মারন ব্যাধি যা মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় নিঃশব্দে । আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রন করতে বাজার চলতি যে মেডিসিন ব্যবহার করা হয়, তাতে সাময়িকভাবে হয়ত শরীরের সুগার নিয়ন্ত্রন হচ্ছে, কিন্তু অদুর ভবিষ্যতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্ভব না থেকেই যাচ্ছে । (সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা)

আয়ুবেদিক শাস্ত্র মতে প্রমেহ রোগগুলির মধ্যে অন্যতম মধুমেহ (ডায়াবেটিস মেলিটাস) । আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে চিকিৎসা বিষয়ক প্রথম নিয়মই হল শরীর ও মনকে সুস্থ ভাবে গড়ে তোলা বা রাখা,  যাতে সাধারণভাবে কোন রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে । যাকে বলে শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা । এরপরেও যদি শরীরে কোন রোগ বাসা বাঁধে তাহলে তাকে প্রতিরোধ করা,  যাকে বলে প্রতিকার মূলক চিকিৎসা । আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রথম থেকে দ্বিতীয়টিতে বেশি জোর দিতে হচ্ছে ।

সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা

বর্তমান যুগে একের পর এক নাম জানা অজানা রোগ আমাদের প্রবল ভাবে আক্রমণ করছে । আর আমরা দিনের পর দিন দিশেহারা হয়ে পড়ছি । কিন্তু খুব বেশি দিনের কথা নয়,  50-60 বছর আগের কথা একটু ভেবে দেখলে দেখা যাবে,  আমাদের খাওয়া-দাওয়া, চালচলন,  দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও মানসিক মূল্যবোধ,  আচার-ব্যবহার কেমন ছিল,  আর আজকের দিনে সেটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ।  বিশেষ করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটা আমূল বদলে গিয়েছে । তার উপর সমস্ত প্রকার খাদ্য কোন না কোনও ভাবে বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে । এছাড়া বর্তমান জীবনযাত্রায় মানসিক চাপ,  উদ্বেগ,  অস্থিরতা,  ভয়,  নিদ্রাহীনতা প্রভৃতি সুস্থ মানুষকে খুব দ্রুত অসুস্থ করে তুলছে । আর বর্তমান দুনিয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিণতি মধুমেহ ।

বর্তমানে আমাদের নিত্য দিনে কি করছি –

  • আহারে বাদ বিচার নেই,
  • ঘুমানো ও বিশ্রামের ঠিক ঠিকানা নেই,
  • মানসিকতায় লাগাম নেই
  • সমাজ সংস্কারের বিধি-নিষেধ মানার বালাই নেই,
  • মানসিক চাপ উদ্বেগ অস্থিরতা দুশ্চিন্তা ভয় ভয় নিদ্রাহীনতা উপদ্রব দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে ।  আমরা প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারছিনা ।

এর পরিণতি কী হতে পারে তা বলার আগে আমাদের চালচলনের চিত্রগুলো একটু জানা দরকার ।

সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা

১. রাত জাগা দিবানিদ্রা- সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে রাতজাগা এবং দিবানিদ্রা সংক্রমিত হচ্ছে । অতিরিক্ত আহার, তেল চর্বি জাতীয় দ্রব্য অধিক খাওয়া,  অত্যধিক তেল মসলার ব্যবহার,  বিরুদ্ধ ভোজন করা,  অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয় ব্যবহার,  আইসক্রিম,  চকলেট,  ময়দাজাত ভাজাভুজি, জাঙ্কফুড,  বিস্কুট প্রভৃতি খাওয়া,  চা-চিনি-দুধ একসঙ্গে অতিরিক্ত মাত্রায় ফুটিয়ে খাওয়া এবং একবার খাবার রান্না করে বারবার খাওয়া,  টিন জাতীয় খাদ্য ও রেস্টুরেন্টে রকমারি খাবার বেশি পছন্দ করা , শাকসবজির চেয়ে  মাছ মাংস ডিম দিয়ে তৈরি খাদ্য বেশি খাওয়া ।

সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা

২. টিভি কম্পিউটার মোবাইল ফোন -এগুলি নিয়ম মেনে ব্যবহার করিনা । পরিত্যক্ত হলে এইসব দ্রব্যগুলি ঘরের মধ্যে প্রায়ই রেখে দিই ।

৩. নেলপলিশ লিপস্টিক কাজল নানাবিধ ক্রিম লোশন ও ব্যবহার চলছে । চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করবেন না ।

৪. নিয়মিত ব্যায়াম শরীরচর্চার অভাব- নিয়মিত ব্যায়াম শরীরচর্চার ক্ষেত্রে আমরা সময় পাই না এবং আমরা করি না ।

৫. নিয়মিত শাকসবজি, ফলমূল,  মাছ মাংস ডিম সব কিছুতেই নানা ধরনের বিষ মিশছে । আমরা নিরুপায়,  জেনে-বুঝেও খাচ্ছি ।

৬. মানসিক চাপ দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ প্রভৃতি থেকে রেহাই পাওয়ার যেন কোন উপায় নেই । বর্তমান জীবনযাত্রা সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে এগুলি এসেই যাচ্ছে ।

সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা

৭. অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে প্রেসার, সুগার প্রভৃতি সহজেই আসতে পারে । এছাড়া আরো অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয় ।

এক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক পথ্য কিভাবে কাজ করে দেখা যাক । বাজার চলতি নানান প্রকার ওষুধ পাওয়া যায় । সে গুলির কার্যকারিতা কম বেশি থাকলেও সুগারের মাত্রা বেশি হলে এককভাবে সেগুলি কাজ করতে পারেনা । একেবারে প্রথম দিকে যখন সুগার ধরা পড়ে তখন যাদের সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিকের চাইতে সামান্য বেশি তখন থেকে আয়ুর্বেদ ওষুধ ব্যবহার এবং অন্যান্য বিধান মেনে চললে সেইসঙ্গে নিয়ম মেনে চলতে পারলে খুব ভালো থাকা যায় । যারা এলোপ্যাথিক ওষুধ খাচ্ছেন তারা ওষুধের মাত্রা যদি কমাতে চান অথবা ওই চিকিৎসা বন্ধ করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মধ্যে থাকতে চান সে ক্ষেত্রে অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে । এখানে শুধু টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর কথাই বলা হচ্ছে ।(সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা)

খাওয়া-দাওয়ার পর সুগারের পরিমাণ 200 মধ্যে থাকলে এই যোগ গুলির যেকোনো একটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন । সেই সঙ্গে পথ্য মেনে  চলতে হবে ।  তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন কিছুই করবেন না । তিনি নির্বাচন করবেন আপনার পক্ষে কোনটি ভালো ।

  • ১০ গ্রাম কাঁচা নিম পাতা  2 কাপ জলে ফুটিয়ে ফুটিয়ে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ঠান্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে সকালে অর্ধেকটা ও সন্ধ্যায় অর্ধেকটা খেতে হবে । এর সঙ্গে কাঁচা হলুদও 5 থেকে 10 গ্রাম মেশাতে পারেন ।
  • হলুদ চূর্ণ  এবং আমলকি চূর্ণ সমানভাগে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ওর সন্ধ্যা বা রাতে খাওয়ার আধঘণ্টা আগে দুই গ্রাম মাত্রায় খেতে হবে । এর ফলে সুগার কমবে ।
  • পিয়াসাল কাঠের চূর্ণ 10 থেকে 15 গ্রাম রাতে দেড় কাপ  জল গরম করে ভিজিয়ে পরদিন সকালে সকালে ও সন্ধ্যায় কিছু খাওয়ার আধ ঘন্টা আগে অর্ধেক করে খেতে হবে । উল্লেখ্য পিয়াশাল কাঠটি বিজয় সার নামেও  পরিচিত । 
  • পদ্ম গুলঞ্চ 4 থেকে 5 ইঞ্চি থেঁতো করে রাতে দেড় কাপ  জলে ভেজাতে হবে ।  এর সঙ্গে দুই চা চামচ মেথি এবং দুই গ্রাম চিরতা মিশিয়ে দেবেন । পরদিনসকালে ও সন্ধ্যায় কিছু খাওয়ার 10 থেকে 15 মিনিট আগে খাবেন । 
  • কালোজিরা চূর্ণ চূর্ণ 500 মিলিগ্রাম করে সকালে ও সন্ধ্যায় খালি পেটে খান ।

সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা

( সুগার নিয়ন্ত্রন করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা)

  • সুগার থাকুক না থাকুক ছোলা ভেজানো জল  বা সিদ্ধ জল , অঙ্কুরিত ছোলা,  সোয়াবিনের দানা থেকে তৈরি দই,  তেলাকুচা শাক,  লেটুস শাক,   চিনেবাদাম,  বাতাবি লেবু,  শসা,  লাউ খাদ্যতালিকায় রাখবেন । সবচেয়ে ভালো মুগ ডাল । পাঁচমিশালী ডাল চলতে পারে ।
  • চাল ডাল রান্নার পূর্বে ভিজিয়ে রাখতে পারলে ভালো হয় ।
  • লাল চাল, লাল গমের আটা, সাধারন সিদ্ধ চাল ও আটা, সুজি প্রভৃতি খাবেন । সবজির মধ্যে বেগুন, ভেন্দি, লাউ, চালকুমড়া, উচ্চে-ক রলা, নটে শাক, তেলাকুচা, গিমে, বেতো, কচি নিমপাতা, ধনে পাতা, থানকুনি, ব্রাহ্মী শাক, সজনে পাতা, থোড়, লেতুস, মেথি শাক খাবেন । এছাড়া জাম, আপেল, কমলালেবু, মুস ম্বি লেবু, আপেল, শসা, বাতাবি লেবু, পেয়ারা প্রভৃতি খাবেন ।
  • ভোজ্য তেল হিসাবে রাইস ব্রান অয়েল, সর্ষে তেল সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে । পাঁচ ফোঁড়ন, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা লঙ্কা, আদা, দারুচিনি, ছোট এলাচ, হিং, ধনে পাতা প্রভৃতি ব্যবহার করতে পারেন ।
  • মনে রাখবেন অত্যাধিক তৈলাক্ত মাছ না খাওয়াই ভাল । চিংড়ি মাছ সামান্য খেতে পারেন । মাছের ডিম ও মাথা খাবেন না । হাঁস – মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে পালন করা মাছ খাবেন না । এছাড়া কই, বয়াল, পাঁকাল, আড়, ট্যাংরা, গ্লদা ও বাগদা, বান, পুঁটি, পারশে, ফলুই, চিতল প্রভৃতির কোনটিই নিয়মিত না খাওয়া ভাল ।
  • ঠাণ্ডা পানীয়, মিষ্টি দ্রব্য, মাতির নিচের দ্রব্যাদি, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ব্যবহার করতে পারেন ।

মনে রাখতে হবে সুগার বা ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যা শরীরে একবার বাসা বাঁধলে আড় যেতেই চাইবে না । এই কারনে আক্রান্ত হলে রোগীকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে ।

পরামর্শেঃ ভারত সরকারের আয়ুর্বেদ গবেষণা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডাঃ সুবল কুমার মাইতি 

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply