সারাদেশ যখন ডেঙ্গু আতঙ্কে জর্জরিত। তখন চলছে নানা তর্কবিতর্ক। সিটি কর্পোশেন যখন বিদেশ থেকে যখন আরো কার্যকর ওষুধ আনার তোড়জোড় করছে তখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কীটতত্ত্ববিদ বি এন নাগপাল বলেন বাংলাদেশ ভুল পথে হাটছে।
ডব্লিউএইচওর জ্যেষ্ঠ এই কীটতত্ত্ববিদ সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ফগার মেশিনে রাস্তা বা উন্মুক্ত জায়গায় কীটনাশক ছিটিয়ে ডেঙ্গু রোগের বাহক এইডিস মশা মারার আশা কেবলই ‘মিথ’। তিনি বলেন, “তার বদলে নিজের ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং সকাল-সন্ধ্যা অ্যারোসল স্প্রে করুন, কারণ এইডিস মশা ওখানেই থাকে।” মশা মারতে চলতি বছর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন যে ওষুধ ব্যবহার করে তা কার্যকর নয়।
ঢাকায় জুনের শুরুতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে এবং জুলাইয়ের শেষে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সব জেলায়। সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে শিথিলতার অভিযোগ ওঠে; মশা মারার কার্যকর ওষুধ কেন কেনা হল না- সেই প্রশ্ন জোরালো হয়ে ওঠে।
মশা নিয়ে ৪০ বছর ধরে গবেষণা করা বি এন নাগপাল এইডিস মশা মারতে ফগিং মেশিনের প্রয়োগ পদ্ধতি নাচক করে দিয়ে বলেন, সবার আগে এ মশার প্রজননস্থল শনাক্ত ও ধ্বংস করার দিকে নজর দিতে হবে। পানির বোতলের ঢাকনা দেখিয়ে তিনি বলেন, মাত্র দুই মিলিলিটার পানি পেলেও এইডিস মশা সেখানে বংশ বিস্তার করতে পারে।
বাংলাদেশে যখন কয়েক মাস আগে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন কেন পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে এল না- সেই প্রশ্ন ড. নাগপালকে করেছিলেন একজন সাংবাদিক। তবে তিনি এর কোনো উত্তর দেননি।
তিনি বলেন, সঠিক ওষুধ সঠিক মাত্রায় এবং সঠিকভাবে দেওয়া না হলে মশার লার্ভা নষ্ট করতে খুব বেশি সাফল্য পাওয়া যাবে না, বরং তাতে পরিবেশ দূষণ হবে।
“ফগারের মাধ্যমে যে ওষুধ ছিটানো হয়, তাতে ৯৫ শতাংশ ডিজেল বা কেরোসিন থাকে। শ্বাসের সঙ্গে তা আমরা টেনে নিচ্ছি, তাতে শ্বাসতন্ত্র আর হৃদযন্ত্রের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ডব্লিউএইচও ফগিংয়ের পরামর্শ আর দেয় না।”
এইডিস মশা উড়ে তিন থেকে চারশ মিটারের বেশি যেতে পারে না; তবে এর লার্ভা পৌঁছে যেতে পারে বহুদূর। আসন্ন ঈদের মৌসুমে যেহে বহু মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাবেন, সেহেতু এইডিস মশার অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মাধ্যমে ডেঙ্গুজ্বর আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নাগপাল বলেন, এইডিস ইজিপ্টাই হচ্ছে ডেঙ্গুজ্বরের মূল বাহক। গ্রামে অ্যালবোপিকটাস থাকলেও তা ডেঙ্গুজ্বরের বিস্তারের জন্য তুলনামূলকভাবে কম দায়ী।
“এটা তেমন শক্তিশালী বাহক নয়; বড়জোর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে এক শতাংশ বিস্তার ঘটাতে পারে এই প্রজাতি।”