বাংলাদেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষি। এদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ ছাড়াও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারও রাষ্ট্র পরিচালনায় কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ‘সবার জন্য খাদ্য’ প্রতিশ্রুতির কথা মাথায় রেখে দলটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারেও কৃষির উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছে।
2022-23 সালে চাল উৎপাদন সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে চাল, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। এ ছাড়া পাট উৎপাদনে আমাদের দেশের অবস্থান দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ এবং আলু উৎপাদনে সপ্তম। দেশি-বিদেশি ফল চাষেও অগ্রগতি হচ্ছে। কফি, কাজু, কালো মরিচ, মাল্টা, ড্রাগন ফলসহ বিভিন্ন অপ্রচলিত অথচ লাভজনক ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। 2006 সালে মাথাপিছু ফলের ব্যবহার ছিল 55 গ্রাম, গত 15 বছরে তা 2023 সালে বেড়ে 85 গ্রাম হয়েছে। গত ১৫ বছরে দেশে ৬৯৯টি সহনশীল, উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত এবং প্রায় ৭০৮টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়ন চলছে। 2010 থেকে 2023 সাল পর্যন্ত কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার, সিডার, পাওয়ার টিলার সহ প্রায় 1 লাখ 33 হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকদের জন্য সহজলভ্য মূল্যে উপলব্ধ করা হয়েছে। 3000 কোটি টাকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে। সামগ্রিকভাবে দেশের কৃষি ব্যবস্থা ‘নির্বাহী’ কৃষি থেকে ‘বাণিজ্যিক কৃষি’তে পরিবর্তিত হচ্ছে।
এই ধারা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তার ইশতেহারে পরিকল্পনার ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন কৌশল অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টির চাহিদা মেটানো, সবার জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের সরবরাহ ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, বাণিজ্যিক কৃষির উন্নয়ন, কৃষিভিত্তিক শিল্পের সম্প্রসারণ, গ্রামীণ ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন, কৃষি ও অকৃষি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং কৌশলটির লক্ষ্য। বৈচিত্র্য আনতে হবে। – কৃষি পণ্য, দারিদ্র্য বিমোচন এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। প্রতিবারের মতো এবারও বার্ষিক বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হবে এবং গ্রামীণ এলাকায় বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হবে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইতিমধ্যে চালু করা কর্মসূচি ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত করা হবে। কৃষিঋণ সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে কৃষি ঋণ দেওয়া অব্যাহত থাকবে; কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ০.৫ শতাংশ হারে পুনঃঅর্থায়ন করবে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণে আরও উৎসাহিত হবে। উপরন্তু, আওয়ামী লীগ কৃষিতে সহায়তা ও ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে বিনিয়োগ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে। এছাড়াও, কৃষিতে শ্রমিকের ঘাটতি কমাতে এবং উত্পাদনশীলতা বাড়াতে সহজে ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি উপলব্ধ করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে কৃষি উৎপাদন আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব জমি চাষের আওতায় আনার নীতি বাস্তবায়ন করছে। শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কোনো জমিই অনুর্বর থাকবে না। সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হবে।
শুধু তাই নয়, একটি স্মার্ট কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাণিজ্যিক কৃষি, বায়োটেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো প্রযুক্তিসহ গ্রামীণ অ-কৃষি খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবেলায় উপযুক্ত কৌশল গ্রহণ করা হবে। -প্রযুক্তি. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষির আধুনিকীকরণ, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি কৃষিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহারে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শুধু কৃষি নয়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং সর্বোপরি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। উদ্যোক্তা সৃষ্টি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পশু চাহিদা মেটাতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় এবারের আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার-
1. 2028 সালের মধ্যে প্রাণিসম্পদ উৎপাদনশীলতা দেড় গুণ বৃদ্ধি পাবে।
2. বাণিজ্যিক দুগ্ধ ও হাঁস-মুরগির খামার স্থাপন, আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য নরম শর্তে ঋণ, প্রয়োজনীয় ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ এবং নীতি সহায়তা প্রদান করা হবে।
3. মানসম্পন্ন পশুখাদ্য উপাদানের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে।
4. উৎপাদিত প্রাণীজ পণ্যের বহুমুখীকরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানিমুখী শিল্পের সম্প্রসারণ করা হবে।
5. চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতিতে বাণিজ্যিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করা হবে।
6. সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য টেকসই মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিত করার মাধ্যমে মাছের উৎপাদন ৪৯,১৫,০০০ মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে ৫৮,৪০,০০০ মেট্রিক টন এবং মাথাপিছু মাছের ব্যবহার ৬৭.৮০ গ্রাম/দিন থেকে ৭৫ গ্রাম/দিনে উন্নীত করা হবে। সম্পন্ন হবে. পুষ্টির চাহিদা মেটাতে। সম্পন্ন হবে
7. সবুজ অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জোরদার করা এবং দায়িত্বশীল মাছ ধরা নিশ্চিত করা হবে।
8. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, মানিয়ে নেওয়া এবং সক্ষমতা বাড়াতে ডেল্টা হটস্পট-ভিত্তিক প্রকল্প/কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।
. মূল্য শৃঙ্খল উন্নয়ন, বৈচিত্র্যপূর্ণ মূল্য সংযোজন মৎস্যসম্পদ এবং মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে আগামী ৫ বছরে মৎস্য সম্পদের অপচয় ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং এ খাতে প্রায় ৬ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
10. মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে বেসরকারি খাতকে রপ্তানিমুখী মাছ ও মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে উৎসাহিত করা হবে; দেশের বাইরে নতুন বাজার সম্প্রসারণের জন্য ফিশ এক্সপোর আয়োজন এবং মাছের পণ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার ফলে রপ্তানি আয় 4,790 কোটি টাকা থেকে 15,000 কোটি টাকা বেড়ে যাবে৷
11. প্রাণিসম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির চলমান কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা হবে। এসব পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন ও মূল্য সংযোজনের সুবিধা বাড়ানো হবে।
12। যেখানেই সম্ভব পুকুর ও ধান ক্ষেতে মাছ চাষ আরও সম্প্রসারণের জন্য উন্নত জাতের পোনা, খাদ্য, রোগ নিরাময় অব্যাহত রাখা হবে। এবং
13. কৃষকদের সুলভ মূলধন ও বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান অব্যাহত থাকবে।