জি বাংলার সা-রে-গা-মা-পা এর নোবেলের মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে তার শুরু আজ থেকে নয় অনেক আগে থেকে। অনেকেই নোবেলের মন্তব্যকে ছোট করে দেখছেন আবার অনেক জ্ঞানী গুনি নোবেলের শাস্তিও চেয়েছেন।
৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রথম উদ্যেগ নেয় মোশতাক সরকার। ক্ষমতায় বসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ড. দ্বীন মুহাম্মদকে প্রধান করে এক কমিটি করা হয়। এই কমিটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল’ অথবা ফররুখ আহমদের ‘পাঞ্জেরী’ থেকে যেকোনো একটি জাতীয় সঙ্গীত করার প্রস্তাব দেয়। মোশতাক সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন হয় না।
১৯৭৯ সালের ৩০ এপ্রিল জিয়া সরকার এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের উদ্যেগ নেয়। মন্ত্রী পরিষদের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রবীন্দ্রনাথকে বাংলাদেশের নাগরিক না। হিন্দু সম্প্রদায়ের কবির লেখা গান পরিবর্তন আবশ্যক বলে মনে করেন। সেসময় জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’ কে প্রস্তাব করা হয়। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে থেমে যায় সে উদ্যেগ। শোনা যায় এরশাদ সরকারও একবার জাতীয় সঙ্গীত পাল্টে ফেলায় উদ্যেগী হয়েছিলেন।
২০০১ সালের বিএনপি, জামাত জোট সরকার পরবর্তীতে আবার জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের উদ্যেগ হাতে নেয়। মন্ত্রীপরিষদ ও সচিবালয়ের চিঠি চালাচালিতে সেবারের মতও থেমে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন।
বাউল শিল্পী গগন হরকরার গান “আমি কোথায় পাব তারে” এই গানের সুরে উদ্ভুদ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে রচনা করেন গানটি। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গানটি রচিত হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে এই গান প্রথম দশ লাইন জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে নির্বাচিত হয়। ১৯৭১ সালের পল্টন ময়দানে অনুস্ঠিত জনসভার শেষে ঘোষিত ইশতেহারেও এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়।
একটি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী নোবেল যখন নিজের দেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে মন্তব্য করেন তখনই তা হয়ে উঠে মারাত্মক। নোবেল জি বাংলার সা-রে-গা-মা-পা বাংলাদেশ সহ সমগ্র বাঙ্গালীর ভালবাসা কুড়িয়েছেন সেই ভালবাসার মুখে জল ঢেলে দিয়েছেন এক কথায়।