ডিম খেতে কে না ভালোবাসে ! তা সে ডিম সিদ্ধ হোক,  হাফ বয়েল হোক বা পোচ কিংবা ওমলেট –  সারা পৃথিবীতে ডিম একটি জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় পরে ।  চটজলদি টিফিনে ডিমের তুলনা করা ভার ।

আপনার নিজের কাছে একটা প্রশ্ন করে দেখুন,  আপনি ডিমকে কিভাবে খেতে ভালোবাসেন ? হাফ বয়েল ডিম বা পোস্ট করে ডিম খাওয়া কি আপনার বড়ই প্রিয় ? এগুলোই কি বেশি খান সিদ্ধ বা ওমলেট থেকে ?  তাহলে জেনে রাখুন,  এই ধরনের খাবার থেকে বা এই ধরণের খাদ্যাভ্যাস থেকে জীবাণু সংক্রমণের  আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয় । কারণ বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ঘটিত জীবাণু আপনার অলক্ষ্যে আপনার ক্ষতিসাধন করে চলেছে ।

জানা গেছে,  এই ব্যাকটেরিয়া গুলি মূলত মানবদেহের শ্বাসনালী,  পেট এবং মূত্রনালীতে থাবা বসায় । অথচ বর্তমানে বাজার চলতি প্রচলিত এন্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করে তার নিরাময় সম্ভব করা যাচ্ছে না । সম্প্রতি কলকাতায় দুটি সরকারি গবেষণা কেন্দ্র-এ  গবেষণা করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে ।

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণা কথা “লেটার্স ইন অ্যাপ্লাইড মাইক্রোবায়োলজি”র মতো আন্তর্জাতিক পত্রিকায় জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত হওয়ার পর ডিম নিয়ে  অনেকেরই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে । আমরা সকলে জানি,  হাঁস মুরগি থেকে বার্ড ফ্লু সংক্রমনের একটা আশঙ্কা থাকে । এমনকি যেটি মহামারীর আকার নিতে পারে সে প্রমাণ আমরা আগেও পেয়েছি । দেখা গেছে অর্ধসিদ্ধ বা কাঁচা মাংস থেকে ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ।তবে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হাস বা মুরগি না হলেও সাধারণ সময়  এই ঝুঁকি যে নেহাত কম নয় বরং সে ক্ষেত্রে ভাইরাস এর বদলে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়  তা বর্তমান প্রকাশিত গবেষণা পত্রে সে কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ।

পশ্চিম বাংলার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় ভেটেনারি মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক সিদ্ধার্থ জোয়াদ্দার বলেন,  মুরগি বা গবাদি পশুর শরীরে  ইকোলাই সালমোনেলা  ক্লেবসিয়েলার   মত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু থাকে,  তা নতুন কিছু নয় । কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন বেশিরভাগ খামারে অবৈজ্ঞানিক উপায় এই প্রাণীদের খাবারে অনর্থক অ্যান্টিবায়োটিক মেশানো হয় । ফলে এতে শরীরের বাড়ন আশাতিরিক্ত হয় । তবে হিসাব করে দেখা গেছে,  হাঁসের ক্ষেত্রে সেটি দেখা যায় না । তবে এই সকল ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া যে হাঁসের ক্ষেত্রে নেই সে কথা জোর গলায় বলা যায় না । কারণ গবেষকরা জানিয়েছে  যে,  হাঁস-মুরগিড়  শরীরে থাকা নিরীহ  ব্যাকটেরিয়া নিজেদের জিনগত চরিত্রের বদল ঘটিয়ে  এখন আগ্রাসী ও ক্ষতিকর জীবাণুতে পরিণত হচ্ছে ।

গবেষকরা জানিয়েছেন,  বর্তমানে জল দূষণও এখন একটা মারাত্মক সমস্যা । খাল -বিল- পুকুর -ঝিলের জলে যেভাবে কীটনাশক বা বর্জ্য পদার্থ প্রতিনিয়ত মিশে চলেছে,  তাতে জলদূষণের পাশাপাশি জলের অক্সিজেনের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এবং এইগুলি এই সমস্ত প্রাণী দের শরীরে অবস্থিত যে জীবাণু  রয়েছে তার জিনগত পরিবর্তনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে । ফলে জলে চরা  হাঁসের ক্ষেত্রেও তাদের শরীরে তৈরি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ।

গবেষণা থেকে আরও জানা গেছে এই হাঁস-মুরগি গুলি নিজেরা ওই সকল জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে না বরং তারা সেই জীবাণু গুলির বাহক হিসেবে কাজ করছে । ফলে হাঁস মুরগির ডিম থেকে বা মাংস -এ থেকে  যাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ইকোলাই সালমনেলা ক্লেবসিয়েলা । এই জীবাণুগুলি   এমনই ওষুধ প্রতিরোধী জে  প্রচলিত 4 জেনারেশন সেফালস্পরিন বা কো – অয়াক্সিক্লেভের মত এন্টিবায়োটিক পর্যন্ত কোন কাজে আসছে না । দরকার পড়ছে   মবপেনেম, ইমি পেনেম অ সিলাস্ত্যাতিনের এর মত এন্টিবায়োটিক কম্বিনেশন ।

হলে হাস বা মুরগির মাংস ও ডিম খুব ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেলে ভালো,  না হলে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে । এবার আপনি ঠিক করুন আপনার খাদ্যতালিকায় এইগুলি কে কিভাবে রাখবেন ?

 

 

 

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.