টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। ‘পরাজিত অপমান’ জয়ের পর আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রাঙ্গণে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে।

এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে শনিবার বিকেলে দিল্লি পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলের আরও ছয়টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে জানা গেছে, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারত ও বিদেশের প্রায় 8000 বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর বিদেশি অতিথিরা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নেবেন।

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে, মনে করা হয়েছিল যে নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রীত্বের হ্যাটট্রিক প্রকাশ্যে উদযাপন করা হবে। সে কারণেই তাঁর আমলে নবনির্মিত ‘কর্তব্য পথ’-এ শপথ নেওয়ার প্রস্তাবও ভাবা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর রেকর্ডের সমান করতে আগ্রহী ছিলেন। নেহেরু 1952, 1957 এবং 1962 সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হন। নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেসের প্রতিটি বিজয় সম্পূর্ণ হয়েছিল। কারো সাহায্য ছাড়াই তিনি সরকার গঠন করেন। সেখানে ব্যর্থ হয়েছেন মোদি। হ্যাটট্রিকের বছরে তাকে সরকার গঠনে জোটের শরিকদের সহায়তা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী 1984 সালের নির্বাচনে রাজীব গান্ধীর 413 আসনের রেকর্ডকেও পিছনে ফেলে যেতে চেয়েছিলেন। ‘চার শা পার’ স্লোগানেরও অন্য উদ্দেশ্য ছিল। কোনো ইচ্ছা পূরণ না হওয়ায় এবং জয়কে ‘অপমানজনক ও পরাজয়’ বলে ঘোষণা করায়, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়িত্বের মধ্যে শপথ নেওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করতে হয়েছিল।

শপথ অনুষ্ঠানের আগে এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভবনের কাছের একটি বড় এলাকাকে ‘নো ফ্লাই জোন’-এর আওতায় আনা হয়েছে। এমনকি এই এলাকায় বিমান, লণ্ঠন বা ড্রোন ওড়ানো বা চালানো যাবে না।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হবে। তাহলেই বোঝা যাবে প্রথম দফায় কতজন পূর্ণমন্ত্রী ও কতজন প্রতিমন্ত্রী করা হচ্ছে এবং কোন দল থেকে কতজন মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন। নতুন মন্ত্রীরা শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে কে কোন পদ পাবেন। শুক্রবার থেকে জোটের নেতারা বিজেপির শীর্ষ নেতাদের তাদের দাবির কথা জানিয়েছেন। টিডিপি তিন থেকে চারটি মন্ত্রণালয় দাবি করছে, যার মধ্যে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী থাকবেন। সংসদে টিডিপির মোট সদস্য সংখ্যা ১৬। দুই পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীর দাবিও জেডি-ইউ-এর। চারটি বড় মন্ত্রকের একটিও হারাতে চায় না বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই চার মন্ত্রী- অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা- নিরাপত্তা ও নীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য। সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত একই পাঁচজন নিয়ে থাকেন। বিজেপি চায় না অন্য কোনও দল সেই জায়গা দখল করুক। প্রধানমন্ত্রীকে রোববারের মধ্যে শরিকদের মধ্যে এই উত্তেজনা নিরসন করতে হবে।

শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান। হাইকমিশনের সূত্র জানায়, রবিবার দিল্লিতে তার কর্মসূচি শনিবার রাতেও ঠিক হয়নি। সূত্রের খবর, সোমবার বিকেলে দিল্লি থেকে ঢাকা যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে পারেন তিনি।

এদিকে শনিবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হল রাহুল গান্ধীর নাম। শোনা যাচ্ছে, বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব নিতে রাজি হবেন না রাহুল। কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন সোনিয়া গান্ধী।

শনিবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পরে, কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছিলেন যে কংগ্রেস বিকেল পর্যন্ত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পায়নি। তা হলে ‘ভারত’ জোটের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ভারত জোরো’ যাত্রার মতো ‘ধন্যবাদ’ যাত্রা শুরু করা হবে। 11 থেকে 15 জুন পর্যন্ত, কংগ্রেস নেতারা রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন যাতে জনগণকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা ওই সফরে অংশ নেবেন কি না, তা দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.