শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তার সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি আত্মগোপনে চলে যান। মঙ্গলবার সেনাপ্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের কয়েকজন সেনা হেফাজতে রয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী-এমপিদের আটকের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, তাদের জীবনের হুমকির কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কোনো বিচারবহির্ভূত কাজ যাতে না হয় সেজন্য তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
তবে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা এলে তার শাস্তি হবে বলেও জানিয়েছেন সেনাপ্রধান।
কারা কারা কারা কারাগারে রয়েছে তা নিয়ে কৌতূহল সুশীল সমাজের।
বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সংলাপে অংশ নিয়ে সিটিজেনস ফর গুড গভর্নেন্স (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কারা কারা সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছে তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। এই ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে।
সামরিক হেফাজতে কারা?
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন।
সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পর গ্রেফতার হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। দুজনকেই সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সেদিনের একটি বার্তায় বলা হয়েছিল যে বিভিন্ন হাই প্রোফাইল ব্যক্তি যেমন প্রাক্তন মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়া ব্যক্তিদের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সাথে পরামর্শ করে অভিবাসন সম্পন্ন না করেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পূর্বশর্ত।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বিএনপি কর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন এবং তাকেও সেনাবাহিনীর হাতে আটক করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে বলে একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাকেও সামরিক হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি বা নেতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন সেনা হেফাজতে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কয়েকদিন প্রায় কোনো সরকার না থাকার পর গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে।
এ সময় পুলিশও অনুপস্থিত ছিল। ফলে নিরাপত্তা বা আইন প্রয়োগের দায়িত্ব স্পষ্টতই সেনাবাহিনী বা আধাসামরিক বাহিনীর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত রোববার থেকে ধীরে ধীরে পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়।
আরেক সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার মো. জে. (অব.) বায়েজিদ সারওয়ার বলেছেন, তাকে আটক করা হয়েছে বলার চেয়ে তিনি সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন বলাটাই বেশি সঙ্গত হবে। নিজের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে জীবন বিপদের আশঙ্কায় তিনি হয়তো সেনাবাহিনীতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে আদালতে নিয়মিত মামলা চলমান থাকলে এবং সেনা কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলে পুলিশের গ্রেপ্তারে কোনো বাধা থাকবে না।
সরকার কি বলছে?
অভ্যন্তরীণ উপদেষ্টা ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হুসাইন বলেন, যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এবং আত্মগোপনে রয়েছে তাদের আমরা খুঁজছি। সেনাপ্রধান যা বলেছেন আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
সময়ের সাথে এ বিষয়ে আরও অগ্রগতি হবে বলেও আভাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা।