সব প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মিডিয়া বাংলাদেশের নির্বাচন ও শেখ হাসিনার বিজয় নিয়ে ব্যস্ত। প্রায় সব বিদেশী সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয় এবং ভোটের শতাংশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
বিবিসির শিরোনাম ছিল, “বিতর্কিত নির্বাচনে শেখ হাসিনার চতুর্থ জয়।” তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনা পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বিবিসি জানায়, নতুন এই জয়ের ফলে দেশে অঘোষিত একদলীয় শাসনের সূচনা হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া দমন-পীড়ন কমার সম্ভাবনাও কম। সুশীল সমাজ ও বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা করা বা সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার ফলে গ্রেপ্তার হতে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কোনো কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হননি। তবে, দলটি আইনসভাকে একদলীয় প্রতিষ্ঠান বলা এড়াতে দৃশ্যত প্রয়াসে কিছু আসনে প্রার্থী দেয়নি। নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, প্রধান বিরোধী দল বর্জনের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে কম ভোটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা শিরোনাম করেছে, ‘বিতর্কিত ভোটে শেখ হাসিনার পঞ্চম জয়।’ তাদের প্রতিবেদনে মূলত ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত ছিল। রোববার বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, এই ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ধানমন্ডি এলাকার একজন প্রকৌশলী আবদুল্লাহ ইউসুফ আল জাজিরাকে বলেন, “আমি দেশের বাকি অংশ সম্পর্কে জানি না। কিন্তু এত বছরে ঢাকা এতটা ফাঁকা দেখিনি। মনে হচ্ছিল এটা কোভিড মহামারীর প্রথম দিন। বিকেলে দুটি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে গেলাম। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ছাড়া খুব কম লোকই দেখলাম, যারা ব্যাজ পরা। ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশনের দাবি একেবারেই অদ্ভুত।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় বিভ্রান্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন কয়েকজন বিশ্লেষক।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. সাখাওয়াত হুসেন বলেন, এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজে যখন গণমাধ্যমকে ব্রিফিংকালে প্রথমে ২৮ শতাংশ বলেন এবং পরে হঠাৎ তা পরিবর্তন করে ৪০ শতাংশ করেন।
আল-জাজিরা জানায়, তাদের সাংবাদিকরা গত এক ঘণ্টায় রাজধানীর অন্তত ১০টি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো ভোটারকে দেখতে পাননি তিনি।
প্রভাবশালী আমেরিকান ম্যাগাজিন টাইম-এর শিরোনাম হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন। বিরোধীদের দাবি, নির্বাচন স্বচ্ছ নয়। উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান টাইমসকে বলেন, নির্বাচনে শেখ হাসিনার দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাই ফলাফল অনুমানযোগ্য। তবে নির্বাচনের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
অন্যদিকে, জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন৷” তারা জানিয়েছে, সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে৷ শেষ হবে বিকেল ৪টায়। কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়নি। কয়েকটি আসনে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ও সংঘর্ষে নির্বাচন শেষ হয়েছে।