থমথমপুর
– এন.কে.মণ্ডল
এন.কে.মণ্ডলের পরিচিতিঃ- কবি এন.কে.মণ্ডল একজন ভারতীয় বাঙ্গালী কবি ও লেখক। তিনি পশ্চিম্বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার প্রতাপপুর গ্রামে ৫ ই মে ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি রুকুনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। স্থানীয় হাজী এ.কে. খান কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন
প্রথম পর্ব
ফাহিম, রিয়া, সন্তু, সুমন ও নয়না হরিহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইলেভেনের ছাত্রছাত্রী। এক পাড়াতেই বসবাস করে থাকে এবং তাঁরা খুব বুদ্ধিমান ছেলেমেয়ে। ওরা চার পাঁচজন ছাড়া কারো সঙ্গে তেমন একটা চলে না। স্কুলে ভালো রেজাল্টের ছাত্রছাত্রী প্রথম শ্রেনীর।এবং ভদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে ভদ্রই হবে। ওদের আড্ডাখানা হচ্ছে নয়না দের চারতলায়।নয়নাদের চারতলা তেমন একটা কাজে লাগে না । তাই নয়নার বাবা মা ওদের ব্যাক্তিগত খেলাধুলা,পড়াশোনা করার জন্য ছেড়ে দিয়েছে । এক কথায় ওই চারতলাটা ক্লাবঘর ওদের। কেউ কাউকে প্রেম ভালোবাসা করে না, কারণ ওদের ওই রকম কোনো মুড নেই। তাদের স্পেশিয়ালিটি পড়াশোনা, গল্প, আড্ডা, ভ্রমণ ইত্যাদি নিয়েই কেটে যায় বেলা । তাদের টিউশনি করায় নয়নার বাবা তিনতলায় বাবার ব্যাক্তিগত চেম্বারে। ওহ হ্যাঁ বলাই হয় নি নয়নার বাবা একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হলেও ছেলেমেয়েদের কে খুব লক্ষ্য রাখে। সে জানে তাদের বন্ধুবান্ধব উঁচু ক্লাসে পড়লেও ছোটোদের মত বুদ্ধি । ওরা কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না।
যাই হোক শনিবার বিদ্যালয়ে গরমের জন্য ছুটি দিয়েছে। সঁন্ধাবেলায় আড্ডায় চলে এসেছে সবাই ঠিক টাইম মতো। এসেই রিয়া বলল, ‘হ্যাঁ রে, এবার কি করবি ? স্কুল তো ছুটি । বসে বসে আর তো ভালো লাগবে না, বোর হয়ে যাব।’
সন্তু বলল, ‘এক কাজ কর, কোথাও বেড়িয়ে আসি । তাহলে খুব ভালো হবে, আর গরমের দিনগুলি আরামে কাটবে।’
‘ঠিক আছে তাইই কর । এইফাঁকে বেড়িয়ে মজা করা যাবে। তো কোথায় যাবি কিছু কি প্ল্যান আছে ?’ নয়না জিজ্ঞাসা করল।
উত্তরে সন্তু বলল, ‘কোথায় যাব ! আবার শান্তিনিকেতন বা মতিঝিল পার্ক।‘
নয়না একটু কৌতুকভরা স্বরে বলল, ‘ও হরি ! সে তো একদিনকার ব্যাপার। আরে বস, ওই ভাবে বেড়ানো যায় না । কমপক্ষে পাঁচ সাতদিন তো থাকতেই হবে তেমন জায়গায় চল, যাতে করে অনেক ভালো লাগে’ ।
সন্তু সাথে সাথে প্রস্তাব রাখল, ‘ওহ তাই বল । তাহলে ঝাড়খণ্ড চল, আমার মাসির বাড়ি । মাসির ছেলেমেয়ে কেউ নেই আর মাসি খুব ভালো । তাছাড়া ওখানে দেখার প্রচুর জিনিস আছে। মাসিদের গ্রামটা নানান জিনিস দিয়ে সাজানো আর গ্রামটা ছোট্ট হলেও বেশ সুন্দর’ ।
এতক্ষনে ফাহিম সকলের কথা একটা চেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে শুনছিল । এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ফাহিম বলল, ‘ঠিক আছে, ওখানেই যাব । শুনেছি সন্তুর মাসির বাড়ির প্রাকৃতিক পরিবেশ নাকি খুবই সুন্দর । আর দেখার মত জায়গা বলছে । হ্যাঁ রে সন্তু, জায়গাটার নামটা যেন কি ?’
‘ওহ হ্যাঁ, জায়গাটার নামটাই বলা হয়নি । ওখানখার এলাকাবাসিরা জমিদারবাড়ি বলে পরিচয় বেশি দেয় ।আর এমনি সবার কাছে নাম হচ্ছে থমথমপুর’।
রিয়া থমথমপুর নামটা শুনেই বলে ফেলল, ‘জায়গাটার নাম শুনেই তো ভয় আসছে রে। কি জানি কি হবে !’
সন্তু একটা হাত উঁচু করে সকলকে অভয় দানের মত করে বলল, ‘আরে কি আবার হবে ? আমি চিনি না আমার মাসির বাড়ি ? দেখবি একবার গেলে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে । কারণ ওখানে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নীলাবতী নদী, সেখানে বড় পার্ক আছে, জমিদার বাড়ি আছে । থমথমপুর যেন একটি পর্যটন কেন্দ্র। আর জানিস, ওখানকার একটা ইতিহাসও আছে ওই জমিদার বাড়ি নিয়ে। শোনা যায়, ওখানকার জমিদার ছিল দর্পনারায়ন চৌধুরি । বড় বজ্জাত আর অত্যাচারী । তাঁর কারনে প্রজাদের ভয়াবহ কষ্টের সাথে জীবন যাপন করতে হত। এমন কি, কে কি খাবে, কোথায় বসবাস করবে তা ঠিক করত জমিদার ।সেই জমিদার দর্পনারায়ন চৌধুরি ওই গ্রামকে থমকে দিয়েছিল । তাই সেখান থেকেই গ্রামের নামকরণ হয়েছে থমথমপুর । সব জানতে পারবি সেখানে গেলেই। রীতিমতো গাইডম্যান পাবি, অবশ্য গাইডম্যানের প্রয়োজন নেই। কারণ আমার মেসো আছে । মেসো সেখানকার তথা থমথমপুরের অফিসার ইন চার্জ (থমথমপুর পুলিশ স্টেশন)। গেলেই তোরা দেখবি, খুব ভালো লাগবে । মেসোকে বলব যে, প্রথমদিন ঘুরে ঘুরে দেখাতে। তারপর আমরাই নাহয় দেখে নেব কেমন ? তাহলে যাবি তো নাকি ওখানে ?তা না হলে ভেবে দ্যাখ কি করবি, কোথায় যাবি ? তবে আজ উঠি রে, আবার কাল সঁন্ধায় আসব’ ।
পরেরদিন সঁন্ধায় ঠিকমতো সবাই চলে এসেছে আড্ডায় ।আলোচনার শুরুতেই গতকালকের ঘুরতে যাবার প্রসঙ্গ উঠে এল । সন্তু প্রথমেই বলল, ‘তাহলে তোরা কিছু ঠিক করলি ? যদি যাস, তাহলে মেসোকে জানাতে হবে’ ।
সন্তুর কথা শুনে সকলেই হৈ হৈ করে উঠল । নয়না বলল, ‘ওইখানেই যাব আমরা ।আমাদের মত ফাইনাল হয়ে গেছে’ ।
‘ঠিক আছে, তাইই হবে ।তবে সবার বাবা মায়ের কাছে অনুমতি নিতে তো হবে । কাউকে যেতে নাও দিতে পারে তাই না ? যদি দেয়, তাহলে আমরা গাড়িতে যেতে চাই না। (অবশ্য সবার গাড়ী আছে ব্যাক্তিগত) আমরা ট্রেনে যেতে চাই’ ।
পরেরদিন সবাই বাবা মায়ের কাছে অনুমতি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল । অবশ্য নয়নার বাবা পাঁচটি ভি আই পি কামারার টিকিট কেটে কামারায় তুলে দিয়ে আসলো । সবাই আপন আপন সিটে বসে পড়ল ।একটু পরে কৃষ্ণনগরে একজন সুন্দরী উঠল তার বাবার সঙ্গে। সুন্দরী মেয়েটি বসবে তো বসবে ফাহিমের পাশেই বসল । অবশ্য অনেক জায়গা খালি আছে। কারণ ভি আই পি কামারায় ভি আই পি সিটিজেন ছাড়া এলাউ হবে না। মেয়েটিকে পাশে দেখে ফাহিমের মন উড়ে গেছে। এমনভাবে মেয়েটির দিকে তাকাল, যে এর আগে কোনোদিন এতো সুন্দরী সে দেখেনি ।
সুমন বলল, ‘ওয়ে ওয়ে, মিস্টার বেশি দেখিস না, চোখে ন্যাবা হয়ে যাবে’ ।
(চলবে)