বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক: শীত আসছে খেজুরের রস খাবেন কিন্তু নিপাহ ভাইরাস থেকে সাবধান। নিপাহ রোগ একটি ভাইরাসজনিত রোগ যার ভাইরাসের নাম নিপাহ ভাইরাস। রোগটি সাধারণত বাগুড় দ্বারা মানুষের সক্রামিত হয়। সাধারণত: আমাদের দেশে শীতকালে রাতে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের রাতে খেজুরের রস বা রস আহরণের বাশের নলে বাদুড় মুখ দেয়। বাদুড়ের এই মুখের থেকে নিপাহ ভাইরাস সংক্রামন হয়ে থাকে। নিপাহ রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বা টিকা নাই। সর্তকতা, সচেতনতা, প্রতিরোধের মাধ্যমেই দূরে থাকতে হবে এ রোগ থেকে। শুধুমাত্র খেজুরের রস থেকেই নয় শাক-সব্জি থেকেও নিপাহ ভাইরাস সংক্রামিত হতে পারে। মূলত: যেসব খাবারে বাদুড় মুখ দেয় সেখান থেকেই নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে। সাধারণত ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উপরে তাপমাত্রায় ফুটালে নিপাহ ভাইরাস নষ্ট হয়ে যায়।

নিপাহ রোগের ভাইরাস প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের হেনিপাহ ভাইরাসের গণের অংশ। উপসর্গের পাশাপাশি ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমেও জানা যায়। বাদুড়ের পাশাপাপাশি শুকুর থেকেও এ ভাইরাস সংক্রামিত হয়। এ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৫৪%। গত ২০১৮ সালে ভারতের কেরালা রাজ্যে নিপাহ রোগে ১৩ জন মারা যায়। মৃত্যুহার আশঙ্কাজনক হওয়ায় সতর্কতাই এ রোগের মহাঔষধ। জানা যায় এ রোগটি প্রথম মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে দেখা যায়। মালয়েশিয়ার একটি গ্রামের নামে এ ভাইরাসের নামকরণ করা হয়। শীতের শুরুতেই বর্তমান বৎসরে ঠাকুরগায়ে মৃত: একজন ব্যাক্তির দেহে নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে ২০০১ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নিপাহতে আক্রান্ত হয়েছে ৩১৩ জন। যার মধ্যে মারা গেছে ২১৭ জন। বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে মৃতের হার ৭০ শতাংশ। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে শুরু হওয়া নিপাহ ভাইরাস বিষয়ক এক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিপাহ ভাইরাস ‘মারাত্মক মহামারি’র কারণ হয়ে উঠতে পারে। প্রসঙ্গত গত দুহাজার সাল থেকে বাংলাদেশে সাতটি নতুন রোগ শনাক্ত হয়েছে। এর সবগুলিই পশু-পাখি ও কীট-পতঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায়।

নিপাহ রোগের লক্ষণ:

জ্বরসহ মাথাব্যথা: নিপাহ রোগে আক্রান্ত হলে তীব্র জ্বরসহ মাথাব্যথা দেখা দেয়। ভাইরাস শরীরের প্রবেশের ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এমনকি ৪৫ দিন পর্যন্ত নীর্জিব থাতে পারে।

মাংশ পেশীতে ব্যথা: শরীরের পেশীতে ব্যথা, পেট ব্যথা, বমি ভাম দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

খিচুনি আসা: খিচুনি সহ ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দিতে পারে এমনকি রোগী প্রলাপ বকতে পারে।

অজ্ঞান হওয়া: নিপাহ রোগের ভাইরাসের অতিরিক্ত সংক্রমনে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

তীব্র শ্বাসকষ্ট: জ্বর, খিচুনী দেখা দিলে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, মস্তিস্কে এনসেফালাইটিস জাতীয় প্রদাহ তৈরী হতে পারে। এমনকি সময়মতো চিকিৎসা না হলে রোগী মারা যেতে পারে।

নিপাহ রোগের চিকিৎসা:

নিপাহ রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই। নিপাহ রোগের সংক্রমন মনে হলে জরুরী ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজন হলে আইসিইউতে দিতে হতে পারে। এ ভাইরাসের সংক্রমন বোঝার জন্য এলাইজা টেস্ট, পিসিআর, সেল কালচার পরীক্ষা করতে হবে।নিপাহ রোগের প্রতিরোধ: নিপাহ ভাইরাসের আক্রমন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে।

নিপাহ ভাইরাস

  • খেজুরের কাচা রস না খাওয়া
  • আংশক খাওয়া ফল না খাওয়া
  • ফলমূল পরিষ্কার করে খাওয়া
  • কাচা শাকসব্জি না খা খাওয়া
  • আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসায় দ্রুত নেওয়া
  • নিপাহ রোগে আক্রান্ত মৃতদেহ সৎকারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • আক্রান্ত মানুষ থেকে এরোগ ছড়াতে পারে এজন্য একই পাত্রে খাওয়া, একই বিছানায় ঘুমানো যাবে না।
  • রোগীর ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা ব্যবহার করা যাবে না।
  • রোগীর সেবা করার সময় মুখে মাস্ক, হাতে গ্লোভস সহ যাবতীয় সতর্কতা পালন করতে হবে।

Mr. Shuva is a News and Content Writer at BongDunia. He has worked with various news agencies all over the world and currently, he is having an important role in our content writing team.

Leave A Reply