স্ট্রোক হলে মৃত্যুর হার অনেক অনেক বেশী। চির চেনা একটি সমস্যা স্ট্রোক। একটি পরিসংখ্যানে জানা যায় এক লক্ষ লোকের মধ্যে ১০৫ থেকে ১৫২ জন স্ট্রোকের স্বীকার হয়। এর মধ্যে দুধরনের স্ট্রোক আক্রান্ত ব্রেন ও হার্ট স্ট্রোক। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের রক্তনালীতে বাধা অন্যতম। সঠিক পরিমানে রক্ত চলাচল না করার কারনে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। ব্রেন অ্যাটাকের মূল কারণ একই। ব্রেনের সর্বত্র সূক্ষ্ম রক্তনালী সর্বত্র সঠিক ভাবে পৌছাতে পারে না একারনে ব্রেন স্ট্রোক হয়ে থাকে।

মারাত্মক হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্টোকের কারনে মৃত্যু অবধারিত। অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। কোন সময় পঙ্গু হয়ে যায়। প্যারালাইসিস হয়ে যায়। চলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় কী? কীভাবে একজন বুঝতে পারবে হার্ট এ্যাটাকের সম্ভবনা আছে। আজকে বং দূনিয়ার আলোচ্য বিষয় হার্ট অ্যাটাক থেকে কিভাবে বাঁচতে পারবেন?

স্ট্রোকে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষ বলা হয় ৮০ শতাং মানুষই ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ব্রেনের ধমনীগুলি আটকে ছোট হয়ে যেতে থাকে ও তাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ স্ট্রোকের আরেকটি প্রকার হল হোমেরেজিক স্ট্রোক। ব্রেনের দুর্বল রক্তনালীগুলি ছিঁড়ে যায় এবং ব্রেনে রক্তপাত হয় তখন ব্রেনের টিস্যুগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে৷ এর ফলেই হয় হেমারেজিক স্ট্রোক৷ হেমারেজিক স্ট্রোক ইস্কেমিক স্ট্রোকের থেকে অনেক গুন বেশি ক্ষতিকারক হয়৷ মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হতে থাকে৷ এটিরও মাত্রা কম বেশি হয়৷ যদি মাত্রা বেশি হয় সেক্ষেত্রে রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন৷

তবে বড় ধরনের স্ট্রোকের আগে ওয়ার্নিং স্ট্রোক হয়ে থাকে এ ধরনের স্ট্রোককে মিনি স্ট্রোক বলা হয়ে থাকে। মিনি স্ট্রোকের সময় রোগী তার মুখে হাতে ও কথা বলতে হঠাৎই অক্ষম হয়ে পড়েন৷ দুর্বলতা দেখতে পাওয়া যায়৷ প্রায় দুই থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত থাকে এই অবস্থা৷ এরপর আবার জমাট রক্ত সরে গেলে সেই রোগী আবার সুস্থ মানুষের মতই হয়ে যান৷

তবে বেশীরভাগ লোকই সুস্থ হয়ে যাওয়ায় আর চিকিৎসকের কাছে যান না। যার ফলে পরবর্তীতে বড় স্ট্রোক প্রাণঘাতী রুপে চলে আসে। তবে মিনি স্ট্রোকের পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে জীবনের ক্ষতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যে সব বিষয় দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি বা আপনার পাশের লোকটি বড় স্ট্রোকের কবলে পড়তে চলেছেন-

স্ট্রোকের কারণ: উচ্চ রক্ত চাপ-(অনিয়মিত ঔষধ সেবন ঝুকি বাড়ায়), ধুমপান, অতিরিক্ত টেনশন, ডায়াবেটিস,  হার্টে জন্মগত ছিদ্র, চর্বি জমা, জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়ি, কিছু ঔষধ যা রক্ত জমাট বাধার প্রবণাতাকে কমিয়ে দেয়, যেমন- ক্লপিডগ্রেল, এসপিরিন। সাধারনত বয়স বৃদ্ধির সাথে স্ট্রোকের হার বেড়ে যায়।

স্ট্রোকের লক্ষণ:শরীরের এক পাশ তার উল্টা দিকের ব্রেন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কথা বলার জন্যব্রেনের বাম দিক খুবই গুরুত্ত¡পূর্ন। চোখে দেখার যায়গা  পেছন দিকে । পেছনে  নীচের দিকে ব্রেন স্টেমে জ্ঞানের নিয়ন্ত্রণ, শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচল, ও হৃদপিন্ডের চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়। সামনে নীচের দিকে হাইপোথ্যালামাস ক্ষুধা-তৃষ্ণা, কাম-ক্রোধ, ঠান্ডা-গরমের অনুভূতি প্রভৃতি নিয়ন্ত্রন করে। নিম্নোক্ত শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়-

মুখ বিকৃতি: যদি কোন ব্যক্তির মুখে বিকৃতি আসে তার মুখের পেশি গুলো নড়াচড়া করা কঠিন হয়। ঐ ব্যক্তি হাসলে বা কথা বলতে গেলে এ ধরনের বিকৃতি লক্ষ্য করা যেতে পারে।

হাতে জোর না পাওয়া: মুখ বিকৃতির পাশাপাশি আরেকটি সংকেত হল হাতে সমান জোর না পাওয়া। যখন কোনও ব্যক্তি দু হাত তুলে হাত সোজা করতে গিয়ে দেখছেন তাঁর এক হাত সোজা থাকলেও অপর হাতটিতে তেমন জোর নেই বা সেটি পড়ে যাচ্ছে সেই হাতে বল নেই সেটিও স্ট্রোকের অশনি সংকেত হতে পারে৷

কথা বলতে অসুবিধা: যখন কোনও ব্যক্তির কথা বলতে গিয়ে অসুবিধা হবে৷ শব্দ উচ্চারণ স্পষ্ট হবে না৷ এবং পাশের যে ব্যক্তির সঙ্গে তিনি কথা বলছেন তিনি তাঁর কথা বুঝতে পারবেন না৷ কথা জড়িয়ে যাবে৷

পরীক্ষা: স্ট্রোক হলে যেসক পরীক্ষা করান উচিত। তবে সব রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্যই সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করাতে হবে। কারণ এই পরীক্ষায় ইস্কেমিক না হেমোরেজিক স্ট্রোক এটা বোঝা যায়। ছোটো স্ট্রোক বোঝার জন্য এম.আর.আই পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে। কারণ খোঁজার জন্য ঘাড়ের রক্ত নালীর ডপলার, রক্তের চর্বির পরিমান, ডায়াবেটিস চেক করা হয়।

চিকিৎসা: তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শেষে সিটি স্ক্যান করে স্ট্রোকের ধরণ বুঝে দ্রæত প্রকৃত চিকিৎসা শুরু করতে হয়। ইস্কেমিক স্ট্রোকে রক্ত পাতলা করার ঔষধ দিতে হয়, এই একই ঔষধ হেমোরেজিক স্ট্রোকে দিলে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। ঔষধের পাশাপাশি উপযুক্ত ফিজিওথেরাপী নিতে হবে। স্ট্রোকের লক্ষন দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে এক্সপার্টের সহায়তায় তাঁকে চিকিৎসা শুরু করাতে হবে৷ স্ট্রোকের চিহ্নিতকরণের পরই সোই রোগীকে দ্রুত স্ট্রোক সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে৷ যত তাড়াতাড়ি রোগীকে হাসপাতালে পোঁছনো যাবে এবং তাঁর শরীরের রক্ত সঞ্চালন যত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক করা যাবে তত জীবনের ঝুঁকি কমবে৷ বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে রোগীকে সুস্থ করে তোলা হয়৷ সুতরাং সঠিক সময়ে রোগ নির্ধারণ ও তার চিকিৎসা সঠিক সময়ে শুরু করা প্রয়োজন৷

প্রতিরোধ: স্ট্রোক থেকে দূরে থাকার জন্য ধুমপান, তামাক, জর্দ্দা পরিহার করুণ। তেল, চর্বি, বেশী ভাত খাওয়া উচিৎ নয়। পর্যাপ্ত শাক-সব্জি খেতে হবে। চিন্তা মুক্ত হয়ে থাকার চেষ্টা করুন। উচ্চ রক্তচাপে ও ডায়াবেটিসের  চিকিৎসা নিয়মিত ভাবে প্রতিদিন নিতে হবে। হৃদরোগ থাকলে নিয়মিত চিকিৎসা নিন। নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ খাবেন না।

Mr. Shuva is a News and Content Writer at BongDunia. He has worked with various news agencies all over the world and currently, he is having an important role in our content writing team.

Leave A Reply