বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন মানুষ অনেক দ্রুত এগিয়ে চলেছে । নিত্যনতুন যেমন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন নতুন আবিস্কার অনেক কঠিন ব্যাধি নিরাময়ের পথ দেখাচ্ছে । গত বছরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এমনই কিছু উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্যের খতিয়ান দেওয়া হল –

রোবো স্যুটঃ প্যারালাইসিস রোগ কি আমরা অনেকেই জানি । মোদ্দা কথা হল, প্যরালাইসিসে আক্রান্ত হলে শরীরের বেশ কিছু অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সাড় থাকে না । গতবছর প্যারালাইসিস সারানোর জন্য আবিষ্কার হয়েছে রোবো-স্যুট। গবেষকদের মতে, একদিন এই স্যুট বা পদ্ধতি হয়তো রোগীদের জীবনমান পালটাতে পারবে। তবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষ যেন তাদের হাত ও বাহু নাড়া-চাড়া করতে পারে সে জন্য তাদের শরীরের নার্ভ বা স্নায়ুগুলোকে ‘রিওয়্যার’ বা পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়েছে। নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত অস্ট্রেলিয়ার অনেক রোগী এখন নিজে নিজেই খেতে পারছেন, চাবি দিয়ে তালা খুলতে পারছেন, টাকা গুনতে পারছেন; এমনকি কম্পিউটারে টাইপও করতে পারছেন।

জেনেটিক ত্রুটি সংশোধনঃ গতবছর বোস্টনের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জেনেটিকের উপর বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছেন । জেনেটিক ত্রুটি সংশোধন করতে  মস্তিষ্কের এক গুরুতর রোগে আক্রান্ত এক মেয়ের জন্য তার চিকিৎসক মাত্র এক বছরেই বানিয়েছেন অভাবনীয় ওষুধ।  মস্তিষ্কের দুরারোগ্য রোগ ‘ব্যাটন ডিজিস’-এ আক্রান্ত হয় ৮ বছর বয়সী মিলা।  বোস্টনে মিলার মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা তার DNA-র পুরো জিনোম সিকোয়েন্স করে তার জেনেটিক কোড বের করেন এবং ঠিক কোন  জেনেটিক মিউটেশনের কারণে তার এই রোগ হলো সেটিও তারা বের করে ফেলতে সক্ষম হন। তার জেনেটিক মিউটেশনের ত্রুটি খুঁজে বের করতে সফল হওয়ার পর চিকিত্সকরা মিলাকে সুস্থ করার বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। এরপর তারা একটি বিশেষ ওষুধ তৈরি করে এবং মিলার ওপরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করেন। মিলা যদিও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি কিন্তু এখন আগের চেয়ে অনেক গুণ ভালো রয়েছে।

জিন-সাইলেন্সিং মেডিসিনঃ- জিন-সাইলেন্সিং ওষুধ আবিষ্কার করে চিকিত্সা বিজ্ঞানে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বিজ্ঞানীরা। নতুন ধরনের এই ওষুধটিকে ডাকা হচ্ছে জিন-সাইলেন্সি। মূলত নিরাময় অযোগ্য ব্যথার অসুখের চিকিত্সায় সমর্থ হয়েছে ওষুধটি। নতুন এই জিন-সাইলেন্সিং ওষুধটি বার্তাবাহক RNA কে বিনাশ করে দেয়।

ক্যান্সার চিকিৎসায় অভাবনীয় সাফল্যঃ- গত বছর মারনদায়ী ব্যাধি ক্যান্সারের উপর গবেষণা করে বেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা ।সাধারণও ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী তাঁর নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । কিন্ত গত বছর বিজ্ঞানীরা  ক্যান্সারের  ইমিউনো থেরাপি আবিষ্কারের ফলে তা রোগীর ইমিউন সিস্টেম বা নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ত্বকের ক্যানসার বা মেলানোমায় আক্রান্ত অর্ধেক রোগীই এখন সুস্থ হয়ে উঠছেন। অথচ মাত্র এক দশক আগেও তা ছিল দুরারোগ্য ব্যাধি।

এডুকেনাম্ব মেডিসিন আবিস্কারঃ-  আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রমের মতো রোগের তীব্রতা কমিয়ে দিতে পারে এমন ওষুধও আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন ওষুধ-প্রস্তুতকারী কোম্পানি। ‘এডুকেনাম্ব’ নামের এই ওষুধটি মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে জমা বিষাক্ত প্রোটিন দূর করতে পারে। গত বছর অক্টোবরে এই ওষুধের ঘোষণা দেওয়ার পর সেটি রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছিল।

জেনেটিক ওয়ার্ড প্রসেসরঃ- DNA  কে সম্পাদনা করার নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। DNA তে থাকা যে কোডের কারণে নানান রোগ-বালাই হয় সেগুলো ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত সারানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন এই প্রযুক্তির নাম প্রাইম এডিটিং। প্রাইম এডিটিংকে ‘জেনেটিক ওয়ার্ড’ প্রসেসর হিসেবেও অভিহিত করা হচ্ছে।

ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি আবিষ্কার:- বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যেটি মানুষের মনকে পড়তে পারে এবং সেটিকে কথায় রূপান্তর করতে পারে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি ইলেকট্রোড মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। ইলেকট্রোডের কাজ হচ্ছে মানুষের ব্রেন থেকে ইলেক্ট্রনিক সিগন্যাল বা বৈদ্যুতিক নির্দেশনা গ্রহণ করে সেটি ঠোঁট, গলা, কণ্ঠনালী ও চোয়াল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। তারপর শক্তিশালী কম্পিউটারের মাধ্যমে এই মুখ ও গলার মুভমেন্ট বা নড়াচড়া প্রত্যক্ষ করে বিভিন্ন শব্দ উৎপন্ন করা।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply