চীনের এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত ডেং জিজুন দীর্ঘ তিন মাস পর আবারও ঢাকা সফরে এসেছেন।
রোববার (৩০ জুলাই) দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় আসেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। এশীয় বিষয়ক চীনের বিশেষ দূত গতকাল (৩১ জুলাই) একটি ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন তিনি। এর আগে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে চীনের বিশেষ দূত দেং শি জুন খুব নিঃশব্দে ঢাকা সফর করেছিলেন।
কূটনৈতিক সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ছাড়াও রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল পদ্মা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের এই বিশেষ দূত। এরপর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, উভয় বৈঠকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। চীনের বিশেষ দূত দেং শি জুন স্বীকার করেছেন যে মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা থেকে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন চীনের বিশেষ দূত দেং শি জুন। রোহিঙ্গাদের সমস্যার কথাও বলা হয়েছে। আলোচনায় স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেওয়া হয়। বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের আস্থায় না নিয়ে একজনকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। আর রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমারকে তাদের রাখাইনে প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তাও আলোচনায় উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা থেকে চীনা রাষ্ট্রদূতকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, বিলম্ব হলেও প্রত্যাবাসন অবশ্যই হবে। দেশে ফেরার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করা যায় না।
প্রসঙ্গত, গত ছয় বছরের মধ্যে এবারই প্রথম রাখাইনে যাওয়ার সুযোগ পেল রোহিঙ্গারা। প্রথমে রাখাইন ট্যুর গ্রুপটি প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হলেও পরে পিছিয়ে যায়। এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোও চীনের প্রত্যাবাসন উদ্যোগের বিরোধিতা করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, প্রত্যাবাসন বন্ধ হয়ে যায়।
এশীয় বিষয়ক চীনের বিশেষ দূত দেং জিজুন ঢাকা সফরের আগে মিয়ানমার সফর করেছেন বলে জানা গেছে। সেখানে তিনি সামরিক কমান্ডার জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই আলোচনায় তারা মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের সহযোগিতার পাশাপাশি রাখাইনে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। মিয়ানমার সরকার সূত্রে জানা গেছে, চীনের রাষ্ট্রদূত দেং জিজুন গত শুক্রবার মিয়ানমার সফরকালে দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তা মন্ত্রী কো কো হ্লাইং-এর সঙ্গেও দেখা করেন। এ সময় তিনি রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য মিয়ানমারের মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।