বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক: বিগত ৪৭ দিন পূর্বে ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ISRO থেকে ‘চন্দ্রযান-২’ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলো। আর এই সম্পূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করতে মোট খরচ হয়েছিল ৪৫০ কোটি টাকা। এতো কম খরচে এবং অল্প সময়ের মধ্যে চাঁদে মহাকাশযান প্রেরণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO।
‘চন্দ্রযান-২’ কে মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৪৪ মিটার লম্বা GSLV Mk3 রকেট, যা এখনও পর্যন্ত ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান রকেট। এর মধ্যে একটি অর্বিটার, ‘বিক্রম’ ( যা ISRO-র প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে) নামক একটি ল্যান্ডার এবং ‘প্রজ্ঞান’ নামের একটি মুন রোভার ছিল।
চন্দ্রযানের রোভার হলে সেই আসল রাজা। এতদিন চর্চায় ছিল বড় বড় নাম, ‘বাহুবলী’ জিএসএলভি মার্ক-৩ রকেট, লুনার অরবিটার এবং হালে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। ভারতের চন্দ্রযাত্রার টিআরপি এই কয়েক সপ্তাহে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’কে ঘিরেই তরতরিয়ে বেড়েছে। সারা বিশ্বে অসংখ্য মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে ভারতের এই চন্দ্রাভিজানের দিকে তাকিয়ে ছিল । তাদের জানার আগ্রহে ছিল মুলত তার গঠন কেমন ? সে কখন চাঁদের মাটিতে নামবে ? কী ভাবে নামবে ইত্যাদি বিষয়ে । কিন্তু আসল কথা হল, ল্যান্ডারের শরীরের ভিতরেই যে যত্ন করে একটি রত্ন লুকিয়ে নিয়ে চাঁদে গিয়েছিল চন্দ্রযান সেই কথা কত জন বিশদে জানে সেই বিষয়ে সন্দেহ আছে ।
গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা ছিল চন্দ্রযান-২ এর একটি অংশ বিক্রম । ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ গোটা ভারতবাসী গর্বিত চোখে তাকিয়ে ছিল মহাকাশের দিকে । রাতেই বিক্রমের সফট ল্যান্ডিং করার কথা ছিল চাঁদের এমন একটা অংশে, যেখানে আগে পৃথিবীর কেউ পৌছাতে পারেনি ।কিন্তু সেই ইতিহাস সৃষ্টির আগেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে বিক্রম।হিসাব মত শুক্রবার গভীর রাতে ল্যান্ডার বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে আশার কথা ছিল রোভারের। তারপর গড়গড়িয়ে চলবে চাঁদের মাটিতে। লুনার সারফেস বা চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরে ঘুরে আসল কাজ করবে এই রোভার যার নাম ইসরো রেখেছে ‘প্রজ্ঞান।’
বেতার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও এক নজরে দেখে নিন ছোট্ট চাকা লাগানো এই যানের বিশেষত্ব আসলে কি ছিল ?
সফট ল্যান্ডিং করার কথা ছিল যে ল্যান্ডারের তার ওজন ছিল ১,৪৭১ কিলোগ্রাম কিন্তু ল্যান্ডারের শরীরের ভিতর লুকিয়ে থাকা এই রোভারের ওজন কিন্তু একেবারেই বেশি ছিল না, তার ওজন ছিল মাত্র ২৭ কিলোগ্রাম। ছোট্ট গাড়ির মতো দেখতে রোভারের সঙ্গে লাগানো ছিল ৬টি চাকা।
যার গঠন এমন ছিল, যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাঁদের বুকের এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় অনায়াসে চলতে পারত । এছাড়া তার মাথার উপর ছিল সোলার প্যানেল।সেখান থেকে সূর্যালোকে নিজের শক্তি তৈরি করে নিতে পারত । কথা ছিল অবতরণের পরে ল্যান্ডারের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসার সময় এই প্যানেল খুলে যাবে। একবারে ৫০ ওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারত যন্ত্রটি । অবশ্য সে তুলনায় ল্যান্ডারে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অনেকটাই বেশি ছিল ।একবারে ৫০০ মিটার অবধি চলতে পারত রোভার ‘প্রজ্ঞান।’ দিক নির্ণয় করবে এর নেভিগেশন ক্যামেরা- ডানে ও বামে দু’টি ক্যামেরা (Nav Camera-R, Nav Camera-L) চাঁদের মাটিতে পথ দেখাবে রোভারকে।এর উপর অংশে সোলার প্যানেলের উপর যে ট্রান্সমিট অ্যান্টেনা লাগানো ছিল, সেটির সাহায্যে সে যা তথ্য সংগ্রহ করত তা চাঁদের চারপাশে ঘুরতে থাকা অরবিটারে পাঠাবে ।
Ever wondered about Pragyan’s different parts and how it functions? Watch the full video to find out!https://t.co/EuL6Gf72Jd#ISRO #Chandrayaan2 #Moonmission
— ISRO (@isro) September 6, 2019
রোভারের সাথে ছিল দু’টি যন্ত্র যার একটি ছিল ‘আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার’ । এর কাজ ছিল অবতরণস্থলের কাছে চন্দ্রপৃষ্ঠে কী কী উপাদান রয়েছে তা দেখবে। ওই যন্ত্রে কিউরিয়াম নামে তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে এক্স-রে ও আলফা পার্টিকল নির্গত হবে এবং তার মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলবে। চাঁদের পাথরের মধ্যে লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে কি না, তার সন্ধানও করতে পারত সে । দ্বিতীয় যন্ত্রটির নাম ‘লেসার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ’।এর কাজ ছিল অবতরণস্থলের আশপাশে চাঁদের মাটিতে কী উপাদান কত পরিমাণে রয়েছে তা খুঁজে বার করা, তবে প্রথম যন্ত্রের থেকে আলাদা পদ্ধতিতে। এতগুলি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার পর রোভার নষ্ট হয়ে যাবার কথা ছিল ।
দুঃখের বিষয় হলো কাজ শেষ করার আগেই বেতার সংযোগ বার সিগন্যাল হারিয়ে ফেলে যন্ত্রটি ।
Watch this video to find out more about Vikram — Chandrayaan 2’s Lander — and the different stages of its journey to the Moon’s south polar region! https://t.co/2qBLe0T710#ISRO #Moonmission #Chandrayaan2
— ISRO (@isro) September 5, 2019