বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ বাঙ্গালীর হাতে আবার উঠল নোবেল পুরস্কার; সেটাও আবার অর্থনীতিতে । আজ সোমবার দুপুরে নোবেল কমিটি  ঘোষণা করে বাঙ্গালী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম । অভিজিৎ অবশ্য একা নোবেল পুরস্কার অর্জন করতে পারেন নি । তাঁর সাথে যৌথ ভাবে তাঁর স্ত্রী  এস্থার ডাফলো এবং   মিকেল ক্রোমারের সঙ্গে নোবেল পেয়েছেন ।বর্তমানে ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

এর আগে বাঙ্গালী হিসাবে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন অমর্ত্য সেন ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়ে । তার পরে আবার একজন বাঙ্গালীর নাম উঠে এল নোবেল প্রাপকের তালিকায় । সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, অভিজিৎ অমর্ত্য সেনেরই সুযোগ্য ছাত্র ।  সারা বিশ্ব জুড়ে দারিদ্রতা এক ভয়াবহ সমস্যার আকার ধারন করেছে ।  বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পেলেন অভিজিৎ এবং তাঁর স্ত্রী সহ আর একজন বিজ্ঞানী ।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই দুইজন বাঙ্গালী প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়াশোনা করেছেন ।  অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়  ১৯৬১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় — দু’জনেই অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন।মা  নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যাপনা করতেন সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সে এবং দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যাপনা করতেন প্রেসিডেন্সিতে । প্রথমে সাউথ পয়েন্ট স্কুল ও পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন অভিজিৎ। এরপর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটে ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসাবে যুক্ত আছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ।  ২০০৪ সালে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের ফেলো হন এই বাঙ্গালী । হার্ভার্ডে পড়াশোনা করার সময় তাঁর সহপাঠী ছিলেন  অরুন্ধতি তুলি বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁকে বিয়ে করেন অভিজিৎ । কিন্তু পরে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে হার্ভার্ডেরই অধ্যাপিকা অ্যাস্টার ডাফলোকে বিয়ে করেন । স্বামী স্ত্রী একসাথে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর এই প্রথম কোনও দম্পতি এক সঙ্গে একই বিষয়ে নোবেল পুরস্কার পেল। অভিজিৎ  বন্দ্যোপাধ্যায়- এর  বিখ্যাত বই ‘পুওর ইকোনমিকস: আ ব়্যাডিকাল রিথিংকিং অফ দ্য ওয়ে টু ফাইট গ্লোবাল প্রভার্টি’

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক –  ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান জ্যান টিনবারগেন ও ব়্যাগনার ফ্রিস। দেশের গতিশীল নকশা তৈরির জন্য এবং উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক পদ্ধতির বিশ্লেষণ করে এই পুরস্কার পান তাঁরা ।

২০১৯ সাল পর্যন্ত এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৫১বার। এখনও পর্যন্ত ৮৪ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অর্থনীতিতে অবদান রাখায়। ২৫ জন অর্থনীতিবিদকে এককভাবে এবং ১৯ বার যৌথ ভাবে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ৭ বার তিন জন করে এই পুরস্কার পান।

সবচেয়ে কম বয়সে অর্থনীতিতে নোবেল পান কেনেথ জে অ্যারো। ১৯৭২ সালে মাত্র ৫১ বছর বয়সে তিনি এই পুরস্কার পান। মার্কিন এই অর্থনীতিবিদ ছিলেন কল্যাণমূলক আধুনিক অর্থনীতির অন্যতম স্থপতি।

২০০৭ সালে ৯০ বছর বয়সে অর্থনীতিতে নোবেল পান রাশিয়ার অর্থনীতিবিদ লিওনিড হারউইকজ। তিনিই সবচেয়ে বয়স্ক অর্থনীতিবিদ, যিনি এই পুরস্কার পান।

অর্থনীতিতে প্রথম ও একমাত্র নোবেলজয়ী মহিলা ছিলেন এলিনর অস্ট্রম। ২০০৯ সালে অর্থনৈতিক প্রশাসন গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য যৌথভাবে অলিভার উইলিয়ামসানের সঙ্গে নোবেল পুরস্কার পান মার্কিন অর্থনীতিবিদ এলিনর অস্ট্রম। তাঁর পরে ফের মহিলা হিসেবে এই বার নোবেল পেলেন এস্থার ডাফেল।

এখন পর্যন্ত অর্থনীতিতে মরণোত্তর নোবেল পাননি কেউ। মরণোত্তর নোবেল দেওয়ার বিষয়টি বাদ দিয়ে দেওয়া হয় ১৯৭৪ সালেই । তবে পুরস্কার ঘোষণার পরে কেউ মারা গেলে তাঁর পুরস্কার বহাল থাকবে বলে জানানো হয় । ১৯৭৪ সালের আগে মাত্র দু’বার মরণোত্তর নোবেল দেওয়া হয়েছিল । ১৯৬১ সালে শান্তিতে দাগ হ্যামারসোল্ড এবং ১৯৩১ সালে সাহিত্যে মরণোত্তর নোবেল পেয়েছিলেন এরিক অ্যালেক্স কালের্ফল্ডট ।

অরথনিতিতে  দুই ভাই নোবেল পেয়েছেন এমন ঘটনাও আছে ইতিহাসে। ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে প্রথম নোবেল পান জ্যান টিনবারগেন। এর চার বছর পর ১৯৭৩ সালে তাঁর ভাই নিকোলাস টিনবারগেন চিকিৎসাবিদ্যায় অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান ।

প্রথম বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পান অমর্ত্য সেন। ১৯৯৮ সালে দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্র্যের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য স্টকহোমে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের এই পুরস্কার লাভ করেন ভারতীয় এই অর্থনীতিবিদ।

অর্থনীতিতে গত বছর (২০১৮) নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দুই মার্কিন অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ডি নরডাস ও পল এম রোমার। জলবায়ু পরিবর্তনকে দীর্ঘ মেয়াদে ম্যাক্রো ইকোনমিকসের সঙ্গে মিলিয়ে বিশেষ বিশ্লেষণের স্বীকৃতি হিসেবে উইলিয়াম ডি নরডাসকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আর পল এম রোমারকে এই পুরস্কার দেওয়া হয় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে দীর্ঘ মেয়াদে ম্যাক্রো ইকোনমিকসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্লেষণের স্বীকৃতি হিসেবে।

তথ্যসূত্রঃ  thewall.in

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply