1969 সালের গণবিদ্রোহ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৬৯ সালের গণবিপ্লবের ধারাবাহিকতায় ৬ দফা বাঙালি মুক্তি সনদ, ১১ দফা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গতকাল দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে। গত ১৫ বছরে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে দেশের সকল আর্থ-সামাজিক খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষ উন্নয়নের সুযোগ নিচ্ছে। দেশকে দিয়েছি মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। ইতিহাস বিকৃত করা বন্ধ করুন। রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধ দখলের পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। নতুন প্রজন্ম দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারছে।
বাংলাদেশ তার অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির মাধ্যমে বিশ্বে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ পেয়েছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। আমরা 2041 সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত করতে এবং 2100 সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে আমরা সফল হব ইনশাআল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসন, শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে চিরতরে মুক্ত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির মুক্তির ঐতিহাসিক ৬ দফা সনদ ঘোষণা করেছিলেন। এর ফলে স্বাধীনতা আন্দোলন আরও তীব্র হয়। 1968 সালে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে এবং বঙ্গবন্ধুসহ 35 জনকে জেলে দেয়। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়।
এ মামলার প্রতিবাদে ছাত্র-শ্রমিক ও কৃষকের জনতা দেশব্যাপী দরবার ও স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনের আয়োজন করে।তিনি বলেন, কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে সারা বাংলার মানুষ জেগে উঠেছে। 1969 সালের পুরো জানুয়ারী ছিল আন্দোলনে পূর্ণ। সারাদেশে প্রতিদিন আন্দোলন হচ্ছে এবং চলছে। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। আসাদুজ্জামান শহীদ হন এবং অনেকে আহত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্ত করে পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাত করার প্রত্যয় নিয়ে সংগ্রামী জনতা ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়নকে চ্যালেঞ্জ করে এবং গোধূলি আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নবকুমার ইনস্টিটিউশন, ঢাকার নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক এবং মকবুল, আনোয়ার, রুস্তম, মিলন, আলমগীরসহ আরও অনেকে। জনরোষ ও গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সবাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ফলে আইয়ুব খানের স্বৈরাচারের পতন ঘটে।
দুঃশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে 1969 সালের জনগণের বিদ্রোহ এখনও আমাদের অনুপ্রাণিত করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 1969 সালের গণবিদ্রোহে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদ গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি শহীদ মতিউরসহ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।