বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে পুজিত হন বিদ্যার দেবী সরস্বতী । বিদ্যালাভের জন্য বাগদেবীর আরাধনা করা হয় । আর বাগদেবীর আরাধনার ক্ষেত্রে পলাশ ফুল অবশ্যই লাগবে । না হলে যে পুজা সম্পন্ন হবে না ! কিন্তু কেন সরস্বতী পুজার ক্ষেত্রে পলাশ ফুলের এত মাহাত্ম্য !

সরস্বতী পূজায় পলাশ ফুল লাগে । কিন্তু কেন লাগে এই বিষয়ে আলোচনা করতে হলে আমাদের আবার পুরাণ প্রসঙ্গে যেতে হবে । পৌরাণিক মতে সরস্বতী মাতৃত্বের স্বাদ না পেলেও সরস্বতীর সঙ্গে প্রজনন এবং উর্বরতার সম্পর্ক, বন্ধ্যাত্ব মোচনের সম্পর্ক রয়েছে । ঋক্‌মন্ত্র উচ্চারণ করেছেন ঋষি গৃৎসমদ। বলেছেন, ‘‌অম্বিতমে নদীতমে দেবিতমে সরস্বতি।’‌ একযোগে সরস্বতীকে মাতৃশ্রেষ্ঠা, শ্রেষ্ঠ নদী এবং শ্রেষ্ঠ দেবীরূপে উপস্থাপন করেছেন ।  ব্যুৎপত্তিগত অর্থেই সরস্বতী নদী। সরস্‌ (‌জল)‌ +‌ মতুপ্‌ +‌ ঙীপ্‌ (‌অর্থাৎ স্ত্রীলিঙ্গবাচক ‘‌ঈ’‌ =‌ সরস্বতী। নদীদের মধ্যে তিনি শুদ্ধা, ‘‌নদীনাং শুচির্যতী’‌, আসমুদ্র তার ধারপথ, ‘‌গিরিভ্য আসমুদ্রাৎ’‌।

ভাবে এবং প্রতীকে, মাঘের অনুষঙ্গে সরস্বতী পুজো উর্বরতা এবং প্রজননের সঙ্গে যুক্ত ।সরস্বতী পুজার সময়কাল   মাঘী শ্রীপঞ্চমী তিথি। জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘‌শীতকাল হল জড়তার কাল। মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথি থেকেই শীতের জড়তা কেটে যেতে থাকে, ঋতুতে লাগে প্রথম বসন্তের ছোঁয়া। সরস্বতীর আবির্ভাবে সকল জড়তামুক্তি, মনেরও, ঋতুরও।’‌
এসব ভাববাদী কল্পনা যদি সরিয়েও রাখি, তাহলেও মানতে হবে মাঘ মাস মঘা নক্ষত্রের মাস। মঘা নক্ষত্রের আকৃতি লাঙলের মতো। অর্থাৎ কৃষিজ ফসলের প্রতীক লেগে আছে এ মাসের গায়ে। আর খনার বচন জানাচ্ছে, মাঘ মাসের বৃষ্টি  সুফসলের  ইঙ্গিতবাহী।

ফলে দেখা যাচ্ছে সরস্বতী পুজো উর্বরতা এবং প্রজননের সঙ্গে যুক্ত । এবার প্রসঙ্গ পলাশ ফুলের, যা কিনা  সরস্বতী পুজোর অন্যতম উপচার। আমরা জানি,  ঋতুমতী নারীই গর্ভধারণে সমর্থ। পলাশ রক্তবর্ণ। ঋতুমতীর রজোদর্শনের রং তাতে। তারই প্রতীক হিসেবে শ্বেতশুভ্রা দেবী হয়ে উঠেছেন ‘‌পলাশপ্রিয়া’‌। রঙের এই সম্পর্ক যদি কষ্টকল্পনা মনে হয়, তাহলে জেনে রাখা ভাল,  পলাশ পাতা আজও বন্ধ্যাত্ব দূর করতে ব্যবহৃত হয়। বীরভূম–‌বাঁকুড়া জেলায় আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে পুত্রসন্তান লাভের জন্য মেয়েরা পলাশপাতা বেটে খান।  আর একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, সরস্বতী পুজার ঠিক পর দিন  শীতল ষষ্ঠীর অর্চনা করা হয় । আমরা সকলেই জানি, মা ষষ্ঠী সরাসরি প্রজননের সঙ্গে যুক্ত দেবী। আর সরস্বতী পুজোর ঠিক পরদিন ঠান্ডা খাবার খেয়ে তাঁরই অর্চনা করা হয়। এখানেও সরস্বতীর সঙ্গে প্রজনন আর উর্বরতার একটা যোগসূত্র টের পাওয়া যায়।আর এই কারনেই পলাশ ফুল ছাড়া “পলাশ প্রিয়া” সরস্বতীর পুজা হয় না ।

অবশ্য পুরানের ইতিহাস ঘাঁটলে দেবী সরস্বতীকে নিয়ে অনেক ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয় । কারন,  ‌অথর্ববেদ অনুসারে, তিন–‌তিনটে নদীর নাম সরস্বতী। আর ঋক্‌মন্ত্র অনুসারে, সরস্বতীর সাতটি বোন, ‘‌সপ্তস্বসা’‌। এই সাতটি নদীর মধ্যে সিন্ধু, সরযূও রয়েছে। কিন্তু গঙ্গা নেই।অপর দিকে,  ব্রহ্মবৈবর্ত‌পুরাণ বলছে, বাগ্‌দেবী আসলে ব্রহ্মার কন্যা। নারায়ণের পত্নী। পদ্মপূরাণে তিনি দক্ষকন্যা, কাশ্যপ মুনির স্ত্রী। আবার একটু এগিয়ে এলে,  বাণভট্টের ‘‌হর্ষচরিত’‌–‌এ সরস্বতীর ছেলের খোঁজ মেলে। দধীচির ঔরসজাত সেই পুত্রের নাম সারস্বত। দশম শতাব্দীর মধ্যভাগে লেখা হয়েছিল মাইহার লিপি। সেখানেও সরস্বতীর ছেলের খোঁজ মেলে। দেবগুরু বৃহস্পতির অভিশাপে সে মর্ত্যে এসে মাইহার অঞ্চলে এক ব্রাহ্মণের ঘরে জন্ম নেয়, তার নাম হয় দামোদর। অথচ, এমন বহু পুরাণ আছে যাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সরস্বতীর কোনও ছেলেপুলে নেই। তাঁর জীবনে প্রেম আছে, প্রজনন নেই। মাতৃত্বের স্বাদ থেকে তিনি বঞ্চিত।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.