প্রবল ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা এখন প্রতিবেশী ভারতের ‘মিত্র’ রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি কোথায় থাকবেন বা স্থায়ীভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী? ভারত তাকে ফেরত পাঠাবে নাকি রাখবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

উল্লেখ্য যে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক/সরকারি পাসপোর্ট (লাল) তাকে 45 দিন ভিসা ছাড়াই ভারতে থাকার অনুমতি দেয়, যার মধ্যে 15 দিন ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেছে। তাকে আরও এক মাস ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ সদস্য, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল সংক্রান্ত ফাইল বুধবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ফাইলটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার স্বাক্ষরের পরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানা গেছে। এর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠিক ১৫ দিন আগে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিমানটি দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেছিল। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ওই দিন (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে স্বাগত জানান।

পরের দিন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেশটির সংসদে বলেছিলেন, “শেখ হাসিনা ভারত সরকারের কাছে ‘অস্থায়ীভাবে’ দেশ সফরের অনুমতি চেয়েছিলেন এবং অনুমতি পাওয়ার পরেই তিনি ভারতের মাটিতে পা রাখেন।”

তবে শেখ হাসিনার সঠিক ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস’ সম্পর্কে ভারত কোনো তথ্য দেয়নি। তিনি বিশেষ ভিসায় ভারতে অবস্থান করছেন, নাকি রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়নি। কিন্তু তাদের অবস্থানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সেখানে তার অবস্থানের অবস্থা কী এবং তার অভিবাসন বৈধতা কত দিন- এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি এখন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিবিসি বাংলা দিল্লিতে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জেনেছে যে শেখ হাসিনার ব্যবহৃত ‘কূটনৈতিক/অফিসিয়াল’ পাসপোর্ট এখনও বৈধ। ওই পাসপোর্টের ভিত্তিতে তিনি অন্তত দেড় মাস কোনো ভিসা ছাড়াই ভারতে থাকতে পারবেন।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, শেখ রেহানার মামলায় তেমন কোনো জটিলতা নেই। যেহেতু তিনি যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট ধারণ করেছেন, তাই তিনি যতক্ষণ ভারতে থাকতে পারেন অন-অ্যারাইভাল ভিসায় (ভারতের মাটিতে পা রাখার পর ব্রিটিশ নাগরিকদের দেওয়া ভিসা)।

এর 10 দিন আগে (6 আগস্ট), বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে বলেছিলেন, “শেখ হাসিনা 5 আগস্ট পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে খুব স্বল্প নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি চেয়েছেন।” এছাড়া বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের অনুমতিও চাওয়া হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তির ভিত্তিতে শেখ হাসিনা বিআইএন ভিসায় সরকারী পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে বসবাস করছেন।

দিল্লির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভারতে শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘সংশোধিত ভ্রমণ ব্যবস্থা’-এর উপর ভিত্তি করে। 15 জুলাই 2018 এ ঢাকায় শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এমওইউর অনুচ্ছেদ 1(এ) বলে যে উভয় দেশ পারস্পরিকভাবে উভয় দেশের কূটনৈতিক এবং অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা ছাড়াই (‘ভিসা ফ্রি রেজিম’) 45 দিনের জন্য থাকার অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশের কূটনৈতিক/অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা ৪৫ দিন ভিসা ছাড়াই থাকতে পারবেন।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করলেও তার কূটনৈতিক/অফিসিয়াল পাসপোর্ট এখনও বৈধ। এ অবস্থায় (যতদিন ওই পাসপোর্ট বৈধ থাকবে) দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনা টেকনিক্যালি ৪৫ দিন কোনো ধরনের ভিসা ছাড়াই ভারতে থাকতে পারবেন।

শেখ হাসিনার মেয়াদের আরও এক মাসের মধ্যে বিদ্যমান পাসপোর্ট ‘বাতিল’ বা বাতিল হলে ভারত সরকার কী করবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভারত তাকে ফেরত পাঠাবে নাকি রাখবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে সে বিষয়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা।

দিল্লির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন যে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা একটি বড় সমস্যা নয় কারণ ভারতের এমন পরিস্থিতিতে সর্বদা ‘প্ল্যান বি’ বা ‘প্ল্যান সি’ প্রস্তুত থাকে। আর শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও ভারতের একই পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা ও দেশ পরিবর্তন

Nitya Sundar Jana is one of the Co-Founder and Writer at BongDunia. He has worked with mainstream media for the last 5 years. He has a degree of B.A from the West Bengal State University.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.