সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। ছাত্ররা আবাসিক হল থেকে রাস্তায় মিছিল করে। এ সময় তার মুখ থেকে বিভিন্ন স্লোগান শোনা যায়, ‘আমি কে, তুমি রাজাকার-রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার-সরকার’, ‘রাজাকার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘আমি ছিলাম’। ‘ঠিক আছে, আমি রাজা হয়েছি’।

বিভিন্ন ক্যাম্পাসের এই উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই আন্দোলনকারীদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতিবাদী শ্লোগানের সমালোচনা করে তিনি রোববার (১৫ জুলাই) দুপুর সোয়া ১২টায় একটি ভেরিফায়েড আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘যে রাজাকাররা ২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষককে গণহত্যা করেছিল, তারা কি রাজাকারদের সন্তান বলে রাজাকারদের পক্ষে স্লোগান দিতে লজ্জা পায় না?’

এরপর দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিটে একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘আপনি কে? আমি কে, বাঙালি, বাঙালি। ঠিকানা শুধু তোমার, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।

পরে দুপুর ১.১৫ মিনিটে তিনি একটি ছবিসহ আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘একতারের হাতিয়ার, আরেকবার গর্জে উঠুক। রাজাকার তোমরা এক্ষুনি বাংলা ছাড়ো।

পরে দুপুর ১.১৫ মিনিটে তিনি একটি ছবিসহ আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘একতারের হাতিয়ার, আরেকবার গর্জে উঠুক রাজাকাররা, এক্ষুনি বাংলা ছাড়ো।’

এদিকে রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই এ ঘটনার সূত্রপাত। তবে কোটা সংস্কারের দাবিতে কয়েকদিন ধরেই রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতি-নাতনিরা না পেলে রাজাকারদের নাতি-নাতনিরা কী পাবে? এটা আমার দেশবাসীর প্রশ্ন। তাদের অপরাধ কি? জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজন রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, না খেয়ে দিনরাত কাদা পাড়ি দিয়েছেন, সব ঝড়-ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করে যুদ্ধ করেছেন এবং জয়ী হয়েছেন। বিজয় এনেছে বলেই আজ সবাই উচ্চ পদে বসে আছে। আজ সে জোরে কথা বলতে পারে। নইলে পাকিস্তানিরা পিটিয়ে মেরে ফেলত।

প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের ভাষণকে অত্যন্ত ‘অপমানজনক’ দাবি করে রাত সাড়ে ১০টার পর একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ও রাস্তায় জড়ো হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেছেন যে এখন পর্যন্ত তারা কোটায় যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে তিনি আহত হয়েছেন। সমাধানের পরামর্শ না দিয়ে তিনি তাদের ‘রাজার সন্তান’ বলে অভিহিত করেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

Nitya Sundar Jana is one of the Co-Founder and Writer at BongDunia. He has worked with mainstream media for the last 5 years. He has a degree of B.A from the West Bengal State University.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.