মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান জানান, রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। সব পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিসিবি পণ্যের মতো রমজানে মুরগি, ডিম, মাংস ও দুধ বিক্রির ব্যবস্থাও নেবে মন্ত্রণালয়।
‘বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ খাত: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে দৃষ্টিকোণ, প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্বব্যাংক।
নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবিরের নির্দেশনায় ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. ইমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, গ্লোবার টেলিভিশনের সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রাজা, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবদুর রহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান কারিগরি সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী।
ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, জনগণের জন্য কিছু করার জন্য আপনাদের আহ্বান জানানো হবে। মুনাফা কমান।
তিনি জানান, বাজারে মাছ, মুরগি, ডিম ও দুধের সরবরাহ থাকলেও দাম বেশি। আমাদের উন্নতির সাথে সাথে নৈতিক অবক্ষয়ও বাড়ছে। উৎপাদকদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাহলে ক্রেতাদেরও সঠিক দামে পণ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা গ্রামে ৫ টাকায় কপি কিনে ঢাকায় এনে ৬০ টাকায় বিক্রি করে। এই মধ্যস্বত্বভোগীদের আকাঙ্ক্ষার জিভ টানতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের লোভ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে আমরা আরও চাই। এর চেয়ে বেশি আকাঙ্ক্ষা পৃথিবীতে আর কেউ ভোগ করতে পারে না। তারা পিঁপড়া খায়। সুইস ব্যাংকে টাকা রাখা লোকদের স্বাক্ষর প্রায়ই মেলে না। এটি আর টাকা উত্তোলন করে না। খালি পকেটে ফিরতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারে কাজের গুরুত্বকে সামনে আনতে হবে। আর কতটা শুল্ক কমানো যায় আর কতটা উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সচিব সেলিম উদ্দিন বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে উৎপাদন বাড়াতে ওষুধ ও পশুখাদ্যের দাম কমাতে হবে। দেশটি দুধের স্বল্পতা থাকলেও মাংস, ডিম ও মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর দেশে টিকাদানে বিপ্লব ঘটেছে। আমাদের দেশের শ্রমিকরা যারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়, তারা কৃষি ও মৎস্য চাষে প্রশিক্ষণ পেলে আরও বেশি লাভবান হবে। তিনি মন্ত্রণালয়ের অন্যায় ও অনিয়ম প্রকাশে সহযোগিতা করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোলাম রব্বানী বলেন, ভারত বিশ্বে দুধ উৎপাদনে প্রথম স্থানে রয়েছে। তারা বছরে 2500 বিলিয়ন টন দুধ উৎপাদন করে। যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয়, চীন তৃতীয়, পাকিস্তান চতুর্থ, ব্রাজিল পঞ্চম এবং রাশিয়া ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ড বিশ্বের ৪ শতাংশ দুধ উৎপাদন করে এবং বাজারের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৩-১৪ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত গত ১০ বছরে দুধ উৎপাদন বেড়েছে ৭৯.৭৬ লাখ মেট্রিক টন। একই সময়ে মাংস উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪১ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৭৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।
তিনি এ খাতের সমস্যার বিষয়ে বলেন, আমাদের জেনেটিক রিসোর্স নেই, দুধের বাজারের সমস্যা আছে, উৎপাদন খরচ বেশি। ভালো মানের গরুর সরবরাহ কম। দুগ্ধজাত রপ্তানিকারকদের আন্তর্জাতিক মান নেই।
প্রণব সাহা বলেন, বাজারে মাছ ও মুরগির কোনো অভাব নেই। কিন্তু কৃষক ন্যায্যমূল্য পান না। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, সবচেয়ে বড় সফল খাত হচ্ছে কৃষি। এখানে সব মানুষের সার্বিক অংশগ্রহণ বেশি।