মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী জনাব রেজাউল করিম বলেছেন, ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, লঙ্ঘনকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং মা ইলিশ সংরক্ষণের সময় কোনো মাছ ধরার নৌকা যেন নদী বা সাগরে না যায় তা নিশ্চিত করা, আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ে অবস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩ বাস্তবায়ন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
গত বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়নের কারণে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনের মধ্যে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশের ডিম ফুটতে সক্ষম হয়। ফলে গত বছর প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি টাকার জাতক ইলিশ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিনি আরও বলেন, ইলিশ মাছ বাংলাদেশের কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়।
তিনি আরও বলেন, এ বছর 12 অক্টোবর থেকে 2 নভেম্বর পর্যন্ত 22 দিনের মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালিত হবে। মা ইলিশ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সরকার বেশি তৎপর।
এ ধারা অব্যাহত রাখতে এ বছরই মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মৎস্য অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা নৌ, স্থল এমনকি আকাশপথে মা ইলিশের ওপর নজরদারি করবেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ইলিশ আহরণ অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। ২০০৮-০৯ সালে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২.৯৮ লাখ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ বেড়ে ৫.৭১ লাখ মেট্রিক টন হয়েছে। গত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বেড়েছে।
সাংবাদিক মন্ত্রী আরও বলেন, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার কারণে ইলিশের আনাগোনা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। অপরিকল্পিত ড্রেজিং, যানবাহন থেকে তেল পোড়ানোর দূষণ, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অভয়ারণ্যে মাছ আহরণ ইলিশের উৎপাদনকে প্রভাবিত করছে। তবে সরকার ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
ইলিশ রপ্তানি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ এখন কূটনীতির অংশ হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশী ভারতে ইলিশ রপ্তানি সীমিত; যা দুই প্রতিবেশী দেশের বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
ইলিশের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ উৎপাদনে কোনো খরচ না হলেও ইলিশ আহরণ, মজুদ ও পরিবহনে খরচ আছে। যারা নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ সংগ্রহ থেকে বিরত থাকে তাদের জন্য ভিজিএফ সহায়তা, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ সরকার বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে।
মন্ত্রী বলেন, মৎস্য সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত কঠোর মনিটরিং ও পরিচর্যা থাকলে ইলিশের দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব।
সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নাহিদ রাশেদ, অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাইয়ুম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বি. মাহবুবুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।