সংগৃহীত ছবি


কেন্দ্রীয় মরক্কোতে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১,০৩৭ এ পৌঁছেছে, মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে যে এখন পর্যন্ত 672 জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে 205 জনের অবস্থা গুরুতর। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যেখানে পৌঁছানো কঠিন।

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, মারাকেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে আটলাস পর্বতমালায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ১৮.৫ কিলোমিটার গভীরে।

স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ভূমিকম্পের পর মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পের 19 মিনিট পরে 4.9 মাত্রার দ্বিতীয় ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে 1,037 জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। গত একশ বছরে এত ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেনি দেশটির বাসিন্দারা। মাত্র 20 সেকেন্ডে অনেক শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘুমের মধ্যেই মারা গেছে বহু মানুষ। ধসে পড়া ভবনের নিচে এখনও আটকে আছে বহু মানুষ। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মারাকেশ, এল-হাউজ, ওয়ারজাজেট, আজিলাল, চিচুয়া এবং তারউদান্ত এলাকায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ মৃত্যু পাহাড়ি এলাকায় হয়েছে, যেখানে দ্রুত প্রবেশ করা কঠিন।

মারাকেচের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের ফলে প্রাচীন শহরের বহু ভবন ধসে পড়ে। স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ফুটেজে মসজিদের একটি মিনার ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। এর ধ্বংসাবশেষ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ওপর পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

মারাকেশের বাসিন্দা ঈদ ওয়াজিজ হাসান বলেন, এখানকার বাড়িগুলো কাঠের স্তূপে তৈরি। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার জন্য মানুষের কাছে ভারী যন্ত্রপাতি নেই। তারা খালি হাতে ধ্বংসাবশেষ সরানোর চেষ্টা করছে।

ব্রাহিম হিম্মি নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, তিনি শহরে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স আসা-যাওয়া করতে দেখেছেন। অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবারও ভূমিকম্পের আতঙ্কে মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

হাউদা হাফসি (৪৩) বলেন, ছাদ থেকে ঝাড়বাতি পড়ে যাওয়ার পর আমি দৌড়ে বাইরে যাই। আমি এখনও বাচ্চাদের সাথে রাস্তায় আছি। আমরা ভীত.

ডালিলা ফাহিম নামে আরেক নারী জানান, তার বাড়িতে ফাটল ধরেছে। আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতে যে ভূমিকম্প হয়েছিল সেই সময় ডেলিলা জেগে ছিল। সে মনে করে সে কারণেই সে বেঁচে গেছে। “ভাগ্যক্রমে আমি এখনও ঘুমাইনি,” ডেলিলা বলল।

পাহাড়ি গ্রাম আসনীর বাসিন্দা মুনতাসির ইতারি জানান, এখানকার বেশির ভাগ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার প্রতিবেশীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। স্থানীয় লোকজন যা আছে তাই দিয়ে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

আসনীর একটু পশ্চিমে তরুদন্ত এলাকার শিক্ষক হামিদ আফকার ভূমিকম্প হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। হামিদ জানান, প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে কম্পন ছিল। দরজাগুলি নিজেরাই খুলছিল এবং বন্ধ করছিল। আমি দ্রুত তৃতীয় তলা থেকে নেমে এলাম।

এদিকে ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। ভ্যাটিকানের পোপ এ নিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফ্রান্স প্রস্তুত রয়েছে। মরক্কোর প্রতিবেশী স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ মরক্কোর জনগণের প্রতি সংহতি ও সমর্থন প্রকাশ করেছেন। আমরা বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছি,” বলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ।

Leave A Reply