নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বেগম রোকারের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, আমার সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কারণে নারীরা কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই।
আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকী ও ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৩’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বেগম রোকেয়া আমাদের দেশের বাঙালি নারী বিশেষ করে মুসলিম নারীদের জন্য শিক্ষার দ্বার খুলে দিয়েছিলেন। সম্ভবত সে কারণেই আমরা আজ এখানে জড়ো হতে পেরেছি। আমাদের উপমহাদেশের নারীরা সব ক্ষেত্রেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের অবদান আমরা দেখেছি।
পাকিস্তান আমলে নারীদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি অনেক কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু জাতির পিতা সেই সুযোগ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার পর। বাংলার মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদানকে তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বেগম রোকেয়ার আমলে মুসলিম নারীরা ঘরে বন্দী ছিল। পড়াশোনার কোনো সুযোগ পাননি। তবে বেগম রোকেয়ার সবসময় স্বামী ও ভাইয়ের সমর্থন ছিল। তিনি নিজ চেষ্টায় উর্দু, বাংলা, ইংরেজি ও আরবি শিখেছিলেন।
ইসলাম সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের নামে আমাদের মেয়েদের পর্দার আড়ালে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এখন চিকিৎসা ও সাহিত্যে নারীদের অবদান তুলে ধরা হচ্ছে। সৌদি আরবে ওআইসি সম্মেলনে গিয়ে দেখি বিভিন্ন কর্মস্থলে তাদের মেয়েদের ছবি দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরবেও নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে। তারা আর পর্দার আড়ালে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের কর্মক্ষেত্রেও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। নারী অধিকার নিশ্চিতে সৌদি আরব এগিয়ে রয়েছে। এখন পর্দার আড়ালে মেয়েদের কেউ নিতে পারবে না। তাই ইসলামের নামে কেউ নারীদের ফিরিয়ে নিতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই নারীরা স্বাধীন হোক। নারীরা স্বাধীন হলে পরিবার ও সমাজে তাদের অবস্থান শক্তিশালী হয়। তার কথা সর্বত্র সমাদৃত। তাই আমার সরকারের উদ্যোগে নারীরা কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই।
তিনি বলেন, এখন আমাদের নারীরা সর্বত্র বিচরণ করে। যেহেতু তারা রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, পররাষ্ট্রনীতিতে, আইন প্রণয়নে, প্রশাসনে, আইন প্রয়োগের উচ্চ পদে, সশস্ত্র বাহিনীতে, পাশাপাশি সীমান্ত নিরাপত্তায়, তাই নারী ছাড়া সবারই প্রবেশাধিকার রয়েছে এবং তারা তাদের কাজ করছে। দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। সাংবাদিকতা, তথ্য ও প্রযুক্তি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রেই মেয়েরা তাদের দক্ষতা দেখিয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, এশিয়ায় বাংলাদেশের নারীরা শীর্ষে, এটা সবচেয়ে গর্বের বিষয়। লিঙ্গ সূচকের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ৭০ শতাংশ নারী, আমাদের শ্রমিকদের ৮০ শতাংশের বেশি বস্ত্র শিল্পে নারী।
মাকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার বাবা বেশির ভাগ সময় জেলে থাকতেন। আমার মা সংসার চালানো, দল গোছানোসহ সব কাজ ভালোভাবে করতেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজ, নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য পাঁচ নারীকে বেগম রোকেয়া পদক 2023-এ সম্মানিত করেছেন। বেগম রোকেয়া পদক 2023 প্রাপ্তরা হলেন- খালেদা একরাম (মরণোত্তর), ডাঃ হালিদা হান্নুম আক্তার, কামরুন্নেসা আশরাফ দিনা (মরণোত্তর), রণিতা বালা এবং নিশাত মজুমদার। প্রত্যেক পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বর্ণপদক, একটি সার্টিফিকেট এবং চার লাখ টাকার চেক পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ও সচিব নাজমা মোবারক। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে নিশাত মজুমদার পুরস্কার জয়ের অনুভূতি প্রকাশ করেন।