রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান। মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের মধ্যে বৈঠক। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বিরল বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন দুই সরকারপ্রধান। সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালীন নিউইয়র্কে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন না। এ ধরনের বৈঠক ওয়াশিংটনে হয়। তাই বিডেনের সঙ্গে ইউনূসের এই বৈঠক কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বলা যায় বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনসহ একাধিক সূত্র বলছে, গত ৩০ বছরের ইতিহাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানকে বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের তথ্য অনুযায়ী, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে জাতিসংঘ সদর দফতরে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতারা। বাংলাদেশ থেকে ড. ইউনূসের সঙ্গে থাকবেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও। বহুল আলোচিত বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে চারটি প্রস্তাবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশার রূপরেখা তুলে ধরা হবে। রেজুলেশনে প্রথমে ৫ আগস্টের আগে ও পরে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। বিভিন্ন খাতে উন্নতি বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন আমেরিকান এজেন্সি এবং কোম্পানির কাছে বকেয়া ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করা হবে। তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের প্রস্তাব দেবে। চতুর্থত, মার্কিন প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সরেজমিনে বাংলাদেশ সফর করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
ঢাকা ও নিউইয়র্কের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউনূস-বাইডেন বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে ওয়াশিংটন।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাধারণত জাতিসংঘে তার নির্ধারিত ভাষণের দিন সকালে নিউইয়র্কে পৌঁছান। ওইদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন তিনি। এরপর বিকেলে জাতিসংঘ অধিবেশনে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন তিনি। সেখানে আবার ডাঃ বিডেনের সাথে দেখা হবে। ইউনূসের।
৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে তার নিউইয়র্কে যাওয়ার কথা রয়েছে। ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর। জো বিডেনের সাথে সাক্ষাত ছাড়াও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনের সাথে দেখা করবেন ড. ইউনুস। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
বিডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সন্ধ্যায় জাতিসংঘের একটি মিলনায়তনে ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০তম বার্ষিকী’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে। সেখানে বিশ্ব নেতাদের স্বাগত জানানো হবে। ইউনুস। ইউনূস গত ৫ দশকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ও বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের অবদানের প্রেক্ষাপটে ড. আমরা আপনাকে জানিয়ে রাখি যে 57 সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসাবে মোহাম্মদ ইউনূস 23 সেপ্টেম্বর থেকে 27 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কে থাকবেন। কূটনীতিকরা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এটাই হবে সবচেয়ে কম সংখ্যক প্রতিনিধি। তবে মুহাম্মদ ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তার বৈঠকের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর নাগরিক পরিষদে মোহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের কর্মসূচি বাতিল করা হয়।