দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, দ্বন্দ্ব, বিভেদ নিরসনে দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডাকবে আওয়ামী লীগ। দলের অভ্যন্তরে কোন্দল বেশি সেসব এলাকা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন দলের বিভাগীয় নেতারা।
দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের মতে, বিএনপি ছাড়া সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। দলীয় প্রতীক নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। কোথাও প্রতিযোগিতা পরিণত হয়েছে প্রতিহিংসায়।
হামলার শিকার হয়েছেন দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা। মাঠ পর্যায়ে এসব সমাধানের জন্য অভিযুক্তদের শিগগিরই ঢাকায় ডেকে আনা হবে। কেউ যাতে আবার সংঘাত ও সহিংসতার ফাঁদে না পড়ে সেদিকে নজর রাখছে দলটি। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিএনপি ছাড়া নির্বাচন উদযাপন করতে উৎসাহিত করেছে। এ কারণে নির্বাচনী মাঠে নাও-এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচনী মাঠে সুস্পষ্ট বিজয় নিয়ে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো রাজ্যে ক্ষমতায় এলেও ব্যাপক দলীয় কোন্দল দেখা দিয়েছে। দলীয় কর্মী-সমর্থকরা সংগ্রাম ও সহিংসতায় মুখর হয়ে ওঠে।
হামলার শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। তবে এসব সমস্যা হালকাভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট বিরোধ, মতভেদ, অনৈক্য ও বিভেদ নিরসনে বিভাগীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। জেলা, শহর ও উপজেলায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাধানের ওপর জোর দেন তিনি। প্রয়োজনে দলের সংশ্লিষ্ট শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ঢাকায় ডেকে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। যত দ্রুত সম্ভব তৃণমূল পর্যায়ের সমস্যা সমাধানে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলের বিভাগীয় নেতারা বলছেন, দলের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডাকা হবে। তাদের সমস্যা কোথায়? সংঘর্ষের কারণ কি? কেন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা ও হয়রানি করা হচ্ছে? এগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সমাধান পাওয়া যাবে। তার মতে, সবচেয়ে সমস্যাযুক্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। যেসব এলাকায় সমস্যা বেশি, সেখানে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যাতে আবার কোনো সংঘর্ষ বা সহিংসতা না হয়।
আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বশীল নেতাদের দাবি, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে উদ্ভূত সমস্যা সমাধান করে ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল গঠন করা হবে। বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছেন। কেউ যেন সংঘর্ষ বা সহিংসতায় না জড়ায় সে নির্দেশনা দিচ্ছেন তারা। কর্মকর্তারা কোনো সমাধান করতে না পারলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে ওইসব এলাকার নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার সমাধান করবেন বলে জানা গেছে।
মূলত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে বিএনপির শিথিলতার কারণে এসব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বহন করা হচ্ছে না। মূলত প্রতীক না দেওয়ার প্রধান ও প্রথম কারণ হচ্ছে দলের মধ্যে আগে থেকেই যা কিছু বিরোধ ও মারামারি আছে তা মিটে যাবে। এ সময় নৌকা প্রতীক দিলে সমস্যা বাড়বে। এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থীদের নৌকা নির্বাচনী প্রতীক দেওয়া হচ্ছে না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির আশা ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। শেষ পর্যন্ত বিএনপি না আসলে এবং দলের একাধিক প্রার্থী থাকলে নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। এ বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক মানবকণ্ঠকে বলেন, এবারের সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএনপি ভোটের আসনে না থাকায় আওয়ামী লীগ থেকে অনেকেই নৌকার বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে অনেকেই জয়ী হয়েছেন। তার অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়েছে উৎসবমুখর। সাধারণ মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। তবে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। কোথাও প্রতিযোগিতা ও প্রতিহিংসা প্রতিহিংসায় পরিণত হয়েছে। সেখানে মারামারি, হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি ও ধাক্কাধাক্কি চলছিল। আমরা ইতোমধ্যে সেগুলো সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। জেলা ও উপ-জেলার নেতাদের একে একে ঢাকায় ডেকে সমস্যার সমাধান করা হবে। দলের প্রয়োজনে তৃণমূলের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ঘরে বসে থাকব না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হুসাইন মানবকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগের বিভাগীয় কমিটি রয়েছে। নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের জন্য ওই কমিটির নেতাদের নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। নেতাদের ঢাকায় ডেকে সমস্যার সমাধান করতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তদন্ত শুরু করেছি। সমস্যাগ্রস্তদের ঢাকায় ডাকা হবে। এ বিষয়ে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি।