অনেক সমস্যা, সীমাবদ্ধতা, আক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ ঢাকাকে মায়ার সিটি, ম্যাজিক সিটি ইত্যাদি নামেও ডাকেন। কেউ রোজগারের জন্য আবার কেউ স্বপ্ন পূরণের জন্য ঢাকায় এসেছেন। ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গা থেকে আলাদা হলেও ঢাকা এখন সবার চাহিদার শহর। আর শাহবাগ এখন দাবি আদায়ের বড় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দল তাদের দাবি নিয়ে সেখানে জড়ো হচ্ছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে নেমেছে বিভিন্ন মহল। এসব দাবি নিয়ে তৈরি হচ্ছে খণ্ডিত আন্দোলন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে কর্মচারী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, রিকশাচালক সবাই তাদের দাবি পূরণে তৎপর।
বিভিন্ন দাবি নিয়ে যারা মাঠে আছেন তারা সবাই বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে কাজ করছেন। তারা তাদের সংগঠনের নামও রেখেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামের সাথে মিল রেখে।
এ ব্যাপারে পূর্ব ঘোষিত সরকারি পদত্যাগ ও সরকারি ছুটির কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন পারিষদ বিদ্যুৎ কমিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বুধবার (২৮ আগস্ট) থেকে এ কর্মসূচির আয়োজন করার কথা ছিল তার। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছিল। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
গত রোববার (২৫ আগস্ট) আনসার সদস্যরা সচিবালয় ঘেরাও করে দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার পর ৩৭৭ আনসার সদস্যকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২৬ আগস্ট) এক দফা দাবি পূরণে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে শাহবাগ থেকে বেরিয়ে আসেন প্যাডেল রিকশাচালকরা। তাদের একটাই দাবি, শহরের প্রধান সড়কে ইঞ্জিনচালিত রিকশা চলবে না।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং ৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন মহল নানা দাবি নিয়ে এগিয়ে আসে। অনেক মানুষ তাদের দাবি নিয়ে সচিবালয় এলাকায় এবং মিন্টো রোডে মুখ্য উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে বিক্ষোভ করে।
রোববার রাতে সচিবালয়ে আনসারদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সচিবালয় ও এর আশপাশের এলাকা এবং প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় যেকোনো ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তবে সরকার নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবি উপস্থাপনের কথা বলছে।
রোববার সারাদিন সচিবালয় ঘেরাও করার পর রাতে আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে প্রবেশ করে উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের ঘেরাও করে। খবর পেয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সেখানে পৌঁছালে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়। সেনা সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনার পর এখন পর্যন্ত ৩৭৭ জন আনসার সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর সচিবালয়ের সামনে অন্তত ১২টি সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। রামপুরার শতাধিক শিক্ষার্থী সচিবালয়ে পৌঁছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়া আউটসোর্সিং, প্রকল্প ও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ না দেওয়ার দাবি জানান। তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে তার পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে যায়। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ওয়াসা, ডেসাসহ বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সচিবালয়ের কর্মচারীরা তাদের দাবি নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তাদের অসন্তোষের প্রধান কারণ পদোন্নতি না পাওয়া এবং চাকরি স্থায়ী না হওয়া। এরপর বিভিন্ন সময়ে চাকরি থেকে বহিষ্কৃত ব্যক্তিরাও চাকরি ফিরে পেতে এগিয়ে এসেছেন।
এখন দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেতন কমানোর প্রচারণা চলছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদত্যাগও দাবি করছে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দল। কেউ কেউ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। দেশের ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ভিসি নেই। তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।