তাবলিগ জামাত অনুসারীদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হচ্ছে আজ শুক্রবার। গাজীপুরের তুরাগ নদীর তীরের খোলা মাঠ এখন পুণ্যার্থীতে ভরা। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাবলিগ জামাত নেতা মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা এই সমাবেশে যোগ দেন। তাদের মধ্যে বিদেশি মুসলিমও রয়েছে। তিন দিনের এই জামাতে অংশ নিতে ঘন কুয়াশা, কনকনে শীত ও ঠান্ডা স্রোত ও বৃষ্টির মধ্যেও লাখ লাখ দেশি-বিদেশি ভক্ত সেখানে জড়ো হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ফজরের সময় আঞ্চলিক বিতর্ক শুরু হয়। তবে আজ ফজরের নামাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম। গতকাল জোহরের নামাজের পর বক্তব্য রাখেন মাওলানা রবিউল হক। এছাড়া আছরের পর মাওলানা ফারুক এবং মাগরিবের পর বক্তৃতা করেন মাওলানা ইব্রাহিম। অনেকে মূল ময়দানে জায়গা না পেয়ে ইজতেমা মাঠের প্রবেশপথের দুই পাশ দখল করে রেখেছেন। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী নামাজিরা বলেন, ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই মূল লক্ষ্য। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা বাহিনী একাধিক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। র্যাব ও পুলিশের হাজার হাজার সদস্য সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটরিং করছে। আগামী রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এই অধ্যায়ের প্রথম পর্ব শেষ হবে। বিশ্বের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই মহাসমাবেশের আয়োজক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুন নূর জানান, দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির পদযাত্রায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে টঙ্গীরের তুরাগ উপকূল। এর মধ্যে ১৬০ একর ইজতেমা মাঠ ঠাসা। তিনি বলেন, মানুষ নামাজে সময় কাটাচ্ছে। মুরব্বি তার ধর্মীয় কর্তব্যে মনোনিবেশ করতে এবং মাঠে উপস্থিতদের রাখার জন্য গতকাল ফজর থেকে শুরুর বক্তৃতা দিচ্ছেন। উদ্বোধনী ভাষণ দেন দিল্লির মাওলানা আহমেদ লাত, যা বাংলায় অনুবাদ করেছেন মাওলানা ওমর ফারুক। নেত্রকোনা সদর থেকে তাবলীগ জামাতের আঞ্চলিক আমীরের নেতৃত্বে আব্দুল মতিন, খোকন মিয়া, আবুল বাশার, মো. বুধবার রাত ৯টায় মানিক মিয়াসহ ১৮ সদস্যের একটি দল তাদের নির্ধারিত খিত্তায় (নম্বর-৫৭) অবস্থান নেয়। কিন্তু তারা কোনো তাঁবু সঙ্গে আনেনি। তারা ঘুমিয়ে পড়লে দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। তাদের সঙ্গে আনা কাপড়-চোপড়সহ সবকিছুই ভিজে গেছে এবং রাতের বেলায় তাদের সমস্যা হয়েছে। এদিকে ঢাকার মিরপুর থেকে আসা মোহাম্মদ হারান, মোহাম্মদ ফোরকান, মাওলানা মোহাম্মদ নাঈম, শাহীন আলম, মোহাম্মদ মাহফুজ জামায়াত ময়দানের ৬ নম্বর খিতায় অবস্থান নিলেও গভীর রাতে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে তাদের বিছানা ভেঙে পড়ে। এবং তাদের উপর ছাতা ছিল। অন্যদিকে অনেক মুসল্লি মূল মাঠে জায়গা না পেয়ে প্রবেশপথের দুপাশে অবস্থান নেন। রাস্তার ধারে অনেকেই জায়গা করে নিয়েছেন। অনেক পূজারী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে তারা মাঠে এসেছিলেন। তবে বুধবার বেশির ভাগ ভক্তই এসেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে ভক্তরা আসছেন। রাস্তার ধারে, মাঠের প্রবেশদ্বার দ্বারা; যে যে পদে পারেন তিনি নিচ্ছেন।
ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজ আদায় করা হবে। জুমার নামাজে ঢাকা, টঙ্গী, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের আশপাশের এলাকা থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন। ইজতেমা উপলক্ষে তাবলিগ জামাতের দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা এখন টঙ্গীর দিকে যাচ্ছেন। তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও বাস সার্ভিস রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মেহবুব আলম শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এদিকে বুধবার থেকে বিদেশি মুসল্লিরা ময়দানে আসতে শুরু করেন এবং ইজতেমায় অংশ নিতে শুরু করেন। ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিমাংশে তাঁবু তুলছেন বিদেশিরা। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত, 40টি দেশের 800 টিরও বেশি বিদেশী অতিথি মাঠে এসে অবস্থান করেছেন। বিদেশি ভক্তদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। তাদের পাশাপাশি একই সময়ে দেশের প্রায় সব জেলা থেকে লাখ লাখ মুসল্লি মাঠে নেমে নির্ধারিত খিত্তার জন্য হাজির হন। জেলওয়ারি মুসলমানদের অবস্থান, রান্নার জায়গা, টয়লেট, ঝরনা ঘর, গোসলের ঘর সবই মাঠে নির্দিষ্ট করা আছে।
ইজতেমায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্প : বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইজতেমা মাঠের পাশে বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এসব মেডিকেল ক্যাম্প থেকে ইজতেমায় আগত হজযাত্রীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিনামূল্যে চিকিৎসা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন এনডাউনমেন্টস মন্ত্রী। ফরিদুল হক খান এমপি। এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পরে ইজতেমা মাঠের বিদেশি তাঁবু সংলগ্ন সমন্বয় কেন্দ্রে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ধর্মমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে গাজীপুর জেলা প্রশাসন বিভিন্ন দপ্তরের কাজ সমন্বয় করে থাকে।
বিশ্বের ৩৬টি দেশের ৭৫৯ জন বিদেশি ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছেন : এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ৩৬টি দেশের ৭৫৯ জন বিদেশি অতিথি ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইজতেমার দায়িত্বে থাকা এক সরকারি কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। ৩৬টি দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, কুয়েত, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, জাপান, ওমান, কানাডা, মোজাম্বিক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিরগিজস্তান, সিঙ্গাপুর, ইতালি, জর্ডান এবং যুক্তরাজ্য। এদিকে বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে ইজতেমা প্রশাসন। বিদেশি অতিথিদের জন্য খিতাকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। বিদেশি সীমান্তের কাছে পুলিশ, র্যাবসহ সব বাহিনীর সাব-কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি অতিথিদের অবস্থান ও চলাচলের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি সেকশনের বিপরীতে অবস্থিত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাব-কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিদেশি অতিথিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।