সংগৃহীত ছবি


জি-২০ সম্মেলনের বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে দিল্লিতে আসা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজক দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির বাসভবনে দেড় ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলছে।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের একপর্যায়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগত আলোচনাও হয়।

বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলায় এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনার মধ্যে সংযোগ, বাণিজ্যিক লিঙ্ক এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত ছিল।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতে সহযোগিতা জোরদার করা, 2023 থেকে 2025 সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এবং ভারতের NPCI ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে রুপি-মানি এক্সচেঞ্জের সুবিধার্থে এমওইউ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল বিকেলে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন।

সন্ধ্যায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বাসভবনে স্বাগত জানান নরেন্দ্র মোদি।

পরে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘অত্যন্ত গুরুত্বের পরিবেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অর্থবহ ও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে এটি উভয় পক্ষের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যার সমাধানকে ত্বরান্বিত করবে এবং উভয় দেশের জনগণের জন্য উপকৃত হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তারা এই সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অবদানের জন্য তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিস্তাসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সরকারি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

বাংলাদেশে আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমনটি আমরা আজ বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা উভয় দেশের জন্যই ভালো। ভারত এ ব্যাপারে আমাদের সাথে একমত।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কোনো আলোচনা না হলেও দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগত বৈঠক হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হয়তো বা না। আমি এটা জানিনা.’

নির্বাচন নিয়ে মার্কিন চাপের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান কী জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) বলছেন অনেক চাপ আছে। আমরা তা মনে করি না। আমি আপনার কাছ থেকে শুনতে আপনি এমন উত্তেজক প্রশ্ন করেন। ,

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন বয়কটের বিএনপির হুমকির বিষয়ে ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। সেই সরকারকে বিএনপিই ধ্বংস করেছে। এটা আমরা আর মেনে নেব না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনের সময় হঠাৎ করে কোনো ব্যক্তি এসে সরকার গঠন করবে এটা আমরা মানি না। আমরা একমত হতে পারি না। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের শিথিলতা দেওয়ার সুযোগ নেই।

নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত হোক। কোনো দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে কী করবেন? আমরা বিশ্বাসযোগ্য, অহিংস নির্বাচন চাই। সরকার একার পক্ষে নির্বাচন কমিশন সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, জনগণ একসঙ্গে থাকলে বহির্বিশ্ব কিছু করতে পারবে না। আমরা বিশ্বাস করি জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আর আমাদের দল অনেক বড়। আমরা যদি ঐক্যমতের সাথে কাজ করি তবে বাইরের বিশ্ব (হস্তক্ষেপের ভয়ে) কেবল গল্পই শুনবে। আর কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। আর আমরা কোনো অসৎ কাজ করছি না।

ভারতের সঙ্গে বৈঠকে কেন আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি উঠে এসেছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। আমাদের জাতির পিতা সবসময় বলতেন, উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। আমরা তার জন্য শান্তি চাই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের ভূমিকার কারণে আসামে শান্তি ও উন্নয়ন হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই একথা জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার সরকার সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করেনি। তিনি তার কথাকে বাস্তবে পরিণত করলেন।

মোমেন বলেন, ‘ভারত মনে করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এবং বাংলাদেশ – আমরা অনেকাংশে একইভাবে চিন্তা করি, আমরা একইভাবে চিন্তা করি। আমরা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে চাই না। এটি 2001 থেকে 2006 পর্যন্ত আমাদের অভিজ্ঞতার কারণে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চরমপন্থার উত্থান ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশকে তখন বলা হতো সন্ত্রাসের দেশ, জিহাদিদের দেশ, বাংলা ভাইয়ের দেশ। আমরা সেদিকে ফিরে যেতে চাই না। আমরা শান্তি চাই, সম্প্রীতি চাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না।

নির্বাচনের আগে বিরোধী দল অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করলে কী হবে, সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের ওপর আমাদের আস্থা আছে। কেউ কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়ব।

মোমেন জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বহু বহুপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত একটি গ্লোবাল সাউথ নেতা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ব দক্ষিণে শীর্ষস্থানীয়। একসঙ্গে কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা ভারত থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনি। কখনও কখনও তারা ভারত থেকে আসে না। আমরা বলেছি, আপনারা (ভারত) আগে থেকে কোটা দিলে আমাদের জন্য উপকার হবে। তিনি তা গ্রহণ করেন।

মোমেন বলেন, ‘বিভিন্ন বাজারের অবস্থা খারাপ। সেগুলোও তারা বিবেচনা করবে। এ ছাড়া একটি নদীর কাজও বন্ধ রয়েছে। আমরা নীতিগতভাবে একমত হলেও তা আটকে আছে। সরকারি পর্যায়ে আলোচনা করে সমাধান পাওয়া যাবে।

রুপি-বক অদলবদলের চুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে অনেক কিছু কিনি। কিছু ক্ষেত্রে আমরা রুপির পরিবর্তে পয়সা ব্যবহার করব। ফলে ডলারের সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাব বলে আশা করছি। ,

বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক ফ্রেমওয়ার্ক এবং চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ভারত এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলি আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কাঠামোর প্রশংসা করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক জাকার্তায় সকলের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল।

মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ভারতের সাহায্য চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন বলে গণমাধ্যমের খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘এগুলো গণমাধ্যমের কথা। তুমি বললে আমরা কিছু বলিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের ফাঁকে তিনি সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সফর শেষে আগামীকাল বিকেলে ঢাকায় ফিরবেন তিনি।

Nitya Sundar Jana is one of the Co-Founder and Writer at BongDunia. He has worked with mainstream media for the last 5 years. He has a degree of B.A from the West Bengal State University.

Leave A Reply