রাজধানীর গুলশান এলাকায় হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার আট বছর পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনা এখনো অনেক সাধারণ মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে। ওই হামলার পর মাঠে কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা না চললেও থেমে নেই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা। আজ তারা উদীয়মান কিশোর-কিশোরীদের লক্ষ্য করে অনলাইনে সক্রিয়। এসময় তিনি 18 থেকে 20 বছর বয়সী যুবক এবং মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জড়ো করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি কক্সবাজারে আস শাহাদাত নামের জঙ্গি সংগঠনের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দারা। তারা জানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কৌশলের কথা মাথায় রেখে জঙ্গিরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। কারাগার থেকেও তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা তাদের সদস্যদের বিভিন্ন উপায়ে বার্তা পাঠাচ্ছেন। আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলাম এখনো হুমকি। সন্ত্রাসীদের অনলাইন ও অফলাইন কার্যক্রম সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।
হলি আর্টিসানের পরে প্রায় 4000 জঙ্গি গ্রেফতার
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে।
এ ছাড়া ওই রাতে সন্ত্রাসী হামলায় দুই পুলিশ সদস্যও প্রাণ হারান। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হয়। আইএস দাবি করেছে যে তাদের মধ্যে পাঁচজন তাদের সৈন্য। হামলার দায়ও নেন তিনি।
এরপর থেকে দেশে একের পর এক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অভিযানে অনেক শীর্ষ নেতা নিহত হন। এরপর নব্য জেএমবিসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো কিছুটা দূরে সরে যায়।
হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলার পর দেশের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় চার হাজার সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানে ৮২৬ সন্ত্রাসী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জেএমবি 200, নিউ জেএমবি 180, আনসার আল ইসলাম 230, হরকাতুল জিহাদ 15, হিজবুত তৌহিদ 120, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া 18 এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনের 63 সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব সদর দফতর সূত্র জানায়, হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দেশে এক হাজার ৮৭৫ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট ও র্যাবের গোয়েন্দা দল সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে এখনো চরমপন্থী সংগঠনগুলোর দাওয়াত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নিয়োগ ও উগ্রবাদী প্রচারও চলছে। তারা সাংগঠনিক যোগাযোগের জন্য সর্বাধুনিক অ্যাপ ব্যবহার করছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে তুরস্ক থেকে অনলাইনে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন নতুন জেএমপি আমির মাহাদী হাসান জন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, হলি আর্টিসানের নৃশংস ঘটনার পর থেকে আমরা অনেক সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় এনেছি। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে, জঙ্গিদের একযোগে হামলা বা নাশকতা করার ক্ষমতা নেই।
পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ-এর সঙ্গে যোগসাজশে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার অভিযোগে জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরকিয়ার আমির ও শীর্ষ নেতাসহ শতাধিক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলাম ও হুজিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে র্যাব।
র্যাব জানায়, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী সদস্যকে গ্রেফতার করার পর তারা জানতে পারে সংগঠনটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে তারা কিশোরদের নিয়োগ করছে। অল্পবয়সী কিশোর-কিশোরীদের প্রথমে টার্গেট করা হচ্ছে কারণ তাদের ভুল তথ্য ও ভুল উপস্থাপনের মাধ্যমে সহজেই মগজ ধোলাই করা যায়। তিনি এসব সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় স্থাপনা, বাড়ি বা বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠক করেছেন। গত ২৭ জুন কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এদিকে, আস শাহাদাত নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা আনসার আল ইসলামের বেশ কয়েকজন কর্মীকে তিন দিন আগে প্রথমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং অবশেষে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত বছরের ১২ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ‘ইমাম মেহমুদের ক্যারাভান’ নামের নতুন সন্ত্রাসী দলের ৩৭ সদস্যকে আটক করে পুলিশ।